নীলফামারীর ডোমার থানা পুলিশের মানবিক সহায়তায় বাক প্রতিবন্ধি আট বছরের একটি শিশু দুই মাস পর তার পরিবার ফিরে পেল। শিশুটিকে ফিরে পেয়ে ডোমার থানা পুলিশকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানায় তার পরিবারের সদস্যরা। পুলিশও খুশি পরিবারের কাছে শিশুটিকে ফিরিয়ে দিয়ে মানবিকতার নজির সৃষ্টি করে।
থানা সুত্রে জানা গেছে, গত ২৮ জুলাই রাত দুই টার দিকে পুলিশের নিয়মিত টহলের সময় ডোমার রেলঘুন্টিতে ব্যাগ হাতে একটি শিশু ঘোরাফেরা করছে। টহলে দায়িত্বরত এএসআই মিজানুর রহমান শিশুটির নাম, ঠিকানাসহ গভির রাতে রাইরে থাকার কারণ জানতে চায়। শিশুটি বাক প্রতিবন্ধি হওয়ায় কোন উত্তর পাওয়া যায় না। তখন ওই পুলিশ কর্মকর্তা ডোমার থানার অফিসার্স ইনচার্জ মোঃ মোস্তাফিজার রহমানকে বিষয়টি ফোনে অবগত করেন। ওসি মোস্তাফিজার রহমান শিশুটিকে থানায় নিয়ে আসার নির্দেশ দিলে, তাকে থানায় আনা হয়। শিশুটির খাবার ও থাকার ব্যবস্থা থানায় করে ওসি মোস্তাফিজার। বিভিন্ন স্থানে শিশুটির পরিচয় জানার জন্য ছবি পাঠানো হয়। পুলিশ ও স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে ফেসবুকে শিশুটির ছবি দিয়ে পোষ্ট দেওয়া হয়। হাফসা খান ও সায়মা সামিয়া নামের ফেসবুক ব্যবহারকারী দুটি মেয়ে ওই শিশুটিকে সনাক্ত করে তার পরিবারকে বিষয়টি জানায়। শিশুটির বড় ভাই সাইফুল ইসলাম মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ডোমার থানার ওসি’র সাথে যোগাযোগ করে জানায়, শিশুটির নাম পটল মিয়া, বাবা-আব্দুল রশিদ মিয়া, মা- সাহেরা খাতুন। তার বাড়ি নেত্রকোনা জেলার মহনগজ্ঞ পৌরসভা। বাকপ্রতিবন্ধি শিশু পটল মিয়াকে নিতে বড় ভাই রওনা দেয় ডোমার থানার উদ্দ্যেশ্যে। এতো দিনে পটল মিয়ার সাথে ডোমার থানার পুলিশ সদস্যদের বেশ আন্তরিকতা তৈরী হয়। রাতে ডিউটি অফিসারের রুমে তার ঘুমের ব্যবস্থা করা হয়। আর পুলিশ সদস্যদের মেসেই তার খাওয়া-দাওয়া চলে। বাজার থেকে ফেরার সময় অনেক পুলিশ সদস্যই শিশু পটল মিয়ার জন্য চকলেট ও বিভিন্ন সু-স্বাদু খাবার নিয়ে আসে। কোরবানীর ঈদেও তাকে দেওয়া হয় নতুন পঞ্জাবি-পায়জামা। সোমবার (৩ আগষ্ট) সন্ধ্যায় ডোমার থানায় আসে পটল মিয়ার বড় ভাই সফিকুল ইসলাম ও চাচাতো ভাই মাজু মিয়া। সফিকুল দুই মাস পর আদরের ছোট ভাই পটলকে পেয়ে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে। তারপর ডোমার থানার ওসি নেত্রকোনা জেলার মহনগজ্ঞ থানা পুলিশ ও ওই এলাকার জনপ্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ করে পটলের বড় ভাইয়ের পরিচয় নিশ্চিত হয়। বাবা-মায়ের ছবি দেখে পটলও ইশারায় নিজের বাবা-মা বলে জানিয়ে দেয়। এরপর আইনী কাগজপত্র সম্পূর্ণ করে বড় ভাইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয় বাকপ্রতিবন্ধি শিশু পটল মিয়াকে। এসময় ডোমার-ডিমলা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার জয়ব্রত পাল, ডোমার থানার অফিসার্স ইনচার্জ মোঃ মোস্তাফিজার রহমান, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) বিশ্বদেব রায়, পুলিশের শিশুবান্ধব কর্মকর্তা এসআই পারভিন আক্তারসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। গত ৭ দিনে শিশু পটল মিয়ার সাথে পুলিশের অনেক সদস্যের গভির সম্পর্ক তৈরী হয়। বিদায়ের সময় পটল ও বেশ কিছু পুলিশ সদস্যদের মধ্যে আবেগঘন পরিবেশ তৈরী হয়। ডোমার হতে রাতে নেত্রকোনা যাওয়া কোন ব্যবস্থা না থাকায় পটল মিয়া, বড় ভাই সফিকুল মিয়া ও চাচাতো ভাই মাজু মিয়ার রাতের খাবার ও স্থানীয় একটি আবাসিক হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করেন ওসি মোস্তাফিজার রহমান। পরদিন মঙ্গলবার (০৪ আগষ্ট) সকালে বাস যোগে কয়েকজন পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে তারা বাড়ির উদ্দ্যেশে রওনা দেয়।
বাক প্রতিবন্ধি শিশু পটল মিয়ার বড় ভাই সফিকুল ইসলাম আবেগালুপ্ত হয়ে জানান, গত দুই মাস আগে পটল বাড়ি থেকে বের হয়ে আর বাড়িতে ফিরে আসে না। অনেক খোঁজা-খোঁজি করেও তার সন্ধান পাওয়া যায় না। গত দুই আগষ্ট একটি মেয়ে তাদের বাড়ি গিয়ে জানায়, ফেসবুকে পটলের ছবি দিয়ে সন্ধান চাওয়া হয়েছে। আমরা সাথে সাথে ডোমার থানার ওসি সাহেবের সাথে যোগাযোগ করি। আর ডোমারে এসে পটলকে পাই। তিনি আরো জানান, পুলিশ যে এতোটা মানবিক হয়, তা ডোমার থানায় না আসলে কোন দিনও জানতে পারতাম না। তিনি ডোমার থানার ওসিসহ সকল পুলিশ সদস্যকে ধন্যবাদ জানান।
ডোমার থানার অফিসার্স ইনচার্জ মোঃ মোজাস্তাফিজার রহমান জানান, বাক প্রতিবন্ধি শিশুটিকে পাওয়ার পর, বিভিন্নভাবে তার পরিচয় সনাক্ত করার চেষ্টা করি। স্থানীয় সাংবাদিকদের সহায়তায় ফেসবুকের মাধ্যমে পটল মিয়ার পরিচয় জানতে পারি এবং তার বড় ভাইয়ের কাছে তাকে হস্তান্তর করি। তিনি আরো জানান, গত সাত দিনে শিশুটির সাথে আমার একটি সম্পর্ক্য তৈরী হয়ে গেছে। তাকে বিদায় দেওয়ার সময় মনটা খুব খারাপ হলেও পরিবারের কাছে তাকে ফিরিয়ে দিতে পেরেছি, এটাই পরম আনন্দের।