পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের আধিপত্য বিস্তারের ঘটনায় খুন হয় যুবলীগ সহসভাপতি রাকিব উদ্দিন রুম্মান তালুকদার (৩০) ও যুবলীগ নেতা সাব্বির আহম্মেদ ইসাদ তালুকদার (২৭) নামের দু‘ চাচাতো ভাই। রবিবার সন্ধ্যায় উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের কেশবপুর বাজারের এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ সোমবার বিকাল পর্যন্ত ১১জনকে আটক করেছে। আজ মঙ্গলবার রুম্মানের ভাই মো: মফিজউদ্দিন মিন্টু তালুকদার বাদী হয়ে কেশবপুর ইউ.পি চেয়ারম্যান ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সম্পাদক এডভোকেট মহিউদ্দিন লাভলুকে প্রধান আসামী করে ৫৯জন ও ১৫/১৬ জন অজ্ঞাত নামীয় আসামী কে বাউফল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। বাউফল থানার মামলা নম্বর ০৫ । সোমবার পর্যন্ত পুলিশ এ ঘটনায় ১১জনকে সন্দেহজনক হিসেবে গ্রেফতার করেছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও কেশবপুর কলেজের অধ্যক্ষ সালাউদ্দিন পিকু ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ইউ.পি. চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন লাভলু দু‘জনের মধ্যে বিরোধের জেড় ধরে দুটি গ্রুপ সৃষ্টি হয়। পরস্পর পরস্পরকে দোষারোপ করতে থাকে। এ ঘটনায় দলীয় নেতা কর্মীরা দু‘ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধ চরম আকার ধারন করে। সভাপতি সালাহউদ্দিন পিকু বলেন, চেয়ারম্যান দলীয় নেতাকর্মীদের মামলা দিয়ে হয়রানী করছে, খামখেয়ালী করে দলীয় নেতাকর্মীদের অধিকার বঞ্চিত সহ জনগনের ন্যায্য পাওনা না দিয়ে নিজের মনগড়া কাজকর্ম করে লুটপাট করে ঢাকাতে সম্পদের পাহাড় গড়ছে। অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন লাভলুকে তার মুঠোফোন ০১৭১১১৮২০৩৮ নম্বরে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। স্থানীয় সাংসদ ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব আ.স.ম ফিরোজ এমপি বলেন, সন্ত্রাসী কোন দলের না। হত্যাকারী সন্ত্রাসীদের আমি ঘৃনা করি, ধিক্কার জানাই।বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভানেত্রী দেশরতœ জননেত্রী শেখ হাসিনা শান্তি আর ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেণ, আওয়ামীলীগে কোন সন্ত্রসীদের ঠাই হবে না। অপরাধী যেই হোক পার পাবে না। প্রচলিত আইনের ধারায় এ জগন্যতম খুনের বিচার হবে। তিনি বলেন খুনের সাথে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে একটি দলীয় তদন্ত কমিটি করা হয়েছে, বৃহস্পতিবার উপজেলা আওয়ামীলীগের জরুরী সভায় এ বিষয়ে সিদ্বান্ত গ্রহন করা হবে। অপর একটি সূত্র জানায়, কেশবপুর বাজার কেন্দ্রীক সম্প্রতি বেপারী ও তালুকদারদের মাঝে বিরোধের ঘটনা রয়েছে। এ ঘটনার সূত্র ধরেও এ খুন সংগঠিত হতে পারে।
প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানান, রবিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে কেশবপুর বাজারে রুম্মান নবী আলীর চায়ের দোকানে চা খাচ্ছিল এবং রুম্মান ওই দোকানের সামনে দাড়ানো থাকা অবস্থায় আচমকা রাফিক বেপারী , ফারুক , রাশমোহন, ইব্রাহিম , রাসেল , নুরুল ইসলাম গংরা ধারালো অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে রুম্মান ও নিশাতের উপর আক্রমন করলে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি সালাউদ্দিন পিকুর আপন ভাই যুবলীগ নেতা রাকিব উদ্দিন রোমান ও চাচাতো ভাই ইশাত তালুকদারসহ ৬জন আহত হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আখতারুজ্জান জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই নিশাতের মৃত্যু হয়। অপর দিকে রাত নয়টার সময় রাকিবকে নিয়ে আসলে কুড়ি মিনিট পড়েই তার মৃত্যু হয়।
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বাদীর অভিযোগের ভিত্তিতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় আজ সোমবার পর্যন্ত সন্দেহজনক এগারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে।