মিতু মনি(৯), বাবা রিয়াজ মীর, মা নাছরিন আক্তার, ছোট বোন আমিনা (৩)। দু‘বোনের মধ্যে মিতু বড়। পরীর মত চেহারার চটপটে আর ফুটফুটে মিতু বাবা মায়ের অতি আদরের দুলালী । পরান কারা হাসি আর উপস্থিত বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তাক লাগিয়ে দিত পরিবার আর আত্মীয় স্বজন সবাইকে। মিতুর বাড়ি বাউফল উপজেলার কেশবপুর ইউ.পি‘র বাজেমহল গ্রাম। মধ্য গোয়ালিয়াবাগা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী মিতু। পড়াশুনায় মিতু ছিল মেধাবী। কে জানতো এত অল্প সময় নিয়ে মিতু এসেছিল এ মায়াবী পৃথিবীতে। জুলাইয়ের শেষদিকে মিতু অসুস্থ হয়ে পড়লে বাবা রিয়াজ মীর তাকে বরিশাল শেবাচিম এ তাকে ভর্তি করেন। পরীক্ষা নীরিক্ষা শেষে ডাক্তারা এই সিদ্বান্তে উপনীত হন যে মিতুর ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে। সেবাচিম ডাক্তারা মিতুকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যান্সার ইউনিটে রেফার করেন। মিতুর পরিবারের মাথায় যেন বাজ পড়ল, দিশেহারা হয়ে গেল বাবা রিযাজ মির। মিতু কিছুই জানে না, বাবা মায়ের চোখের পানি যেন আর থামে না। মিতু কিছু একটা আচ করতে পারে, প্রশ্ন করে আমার কি হয়েছে বাবা কি হয়েছে মা! নির্বাক বাবা মা! যন্ত্রনা চেপে উত্তর কিছুই হয়নি মা, তুমি ভাল হয়ে যাবে। কথায় আছে মড়ে গেলে সেরে যাবে, কে জানতো এটাই মিতুর জীবনের বাস্তবতা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অনলাইন সংগঠন “আলোকিত বাউফল”এর মডারেটর আনিচুর রহমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে মিতুর খোজ খবর নেয় এবং তার বাবা মার সাথে আলোচনা করে বিষয়টি সংগঠনের নজরে নিয়ে আসেন। তিনি জানান চিকিৎসায় অনেক টাকা লাগবে, যা মিতুর পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। সংগঠনটির সিদ্ধান্তক্রমে টাইম লাইনে ৩আগষ্ট রাত ১১টার দিকে মিতুর চিকিৎসা সাহায্য চেয়ে একটি পোষ্ট দেয়া হয়। সংগঠনের পক্ষে তানিয়া পলি হিসেব নিকাশ সহ টেকনিক্যাল কাজ করেন।
এদিকে মিতুর অবস্থার অবনতি ঘটলে গত (৪ আগষ্ট) মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ঢাকা শিশু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। হাসপাতালের আইসিইউ তে স্থানান্তর করার জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও আইসিইউতে প্রবেশ করানোর আগেই মিতু বেলা সাড়ে৩টর দিকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে( ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন)। এ সময় আলোকিত বাউফলের এডমিন ডাক্তার মিজানুর রহমান ও মডারেটর আনিচুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। এ সংবাদে মিতুর চিকিৎসার জন্য সাহায্য চাওয়ার স্টাটাসের স্থলে মিতুর মৃত্যুতে সংগঠনের পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ ও তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়।
মিতুর মৃত্যুতে তার গ্রামের বাড়ি উপজেলার কেশবপুরের বাজেমহল গ্রামে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে। আজ বুধবার (৫ আগষ্ট) সকাল সারে ৮টায় জানাজা শেষে তার নিজ বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে মিতুর লাশ দাফন করা হয়েছে। দাফণ শেষে আলোকিত বাউফল পরিবারের পক্ষে এডমিন খাইরুল কবির নিপু, এডমিন জেলা পরিষদ সদস্য ও বাউফল প্রেসক্লাব সভাপতি হারুন অর রশিদ খান, মডারেটর মাহামুদ হাসান রুবেল সহ অন্যান্য সদস্যগন কবর জিয়ারত শেষে মিতুর বাবা-মার হাতে চিকিৎসার জন্য সংগৃহীত অর্থ তুলে দেন। এ সময় মিতুর বাবা মা ও আত্মীয় স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পরেন।