জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার জিন্দারপুর ইউনিয়নের পশ্চিম কুজাইল ও চক-নয়াপাড়া গ্রামের প্রায় তিনশ পরিবার বৃষ্টির পানিতে বন্দি অবস্থায় জীবন যাপন করছেন। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই গ্রামের চলাচলের সড়ক ও গ্রাম-দুটো ডুবে যায়। এতে জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে প্রায় তিনশ বাড়ি-ঘর। এ অবস্থা চলছে প্রায় ২ মাস ধরে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বর্ষা মৌসুমে উপজেলার পশ্চিম কুজাইল ও চক-নয়াপাড়া গ্রামের বৃষ্টির পানি পাশর্^বর্তী ক্ষেতলাল উপজেলার সীমানা দিয়ে অপসারিত হয়ে আসছে বহু বছর ধরে। কিন্তু ক্ষেতলাল সীমান্তে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে অপরিকল্পিতভাবে এক ব্যক্তি বাড়ি নির্মাণ করার পর থেকে এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, নিস্কাশনের পথ বন্ধ থাকায় বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে পশ্চিম কুজাইল ও চক-নয়াপাড়া গ্রাম এবং যোগাযোগের একমাত্র সড়ক। ডুবে আছে বেশকিছু বাড়ি-ঘরও। এ ছাড়া সারা বছর ঘর গৃহস্থালীর অপসারণ করা পানি প্রবাহের নর্দমাগুলোও ডুবে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ডুবে থাকার কারণে একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পশ্চিম কুজাইল সালাফিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষাদানে ঘটছে চরম ব্যাঘাত। সড়কে জলাবদ্ধতার কারণে পথচারীরা চলাচল করতে পারে না। দীর্ঘ সময় পানি বন্দি হয়ে থাকার ফলে ওইসব পরিবারের সদস্যরা পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। পানি বন্দি থাকার ফলে বিভিন্ন প্রজাতী গাছও মারা যাচ্ছে। সড়ক ডুবে থাকার ফলে কৃষকদের উৎপাদিত ধান, আলু ও অন্যান্য কৃষি পণ্যও হাট-বাজারে নিয়ে যেতে নানা সমস্যায় পড়তে হয় গ্রামের কৃষকদের। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে গ্রামবাসীরা উপজেলার প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ধর্না দিয়েও কোন সমাধান মেলেনি তাদের। ফলে প্রায় ২ মাস ধরে জলমগ্ন অবস্থায় বসবাস করছেন গ্রাম দুটোর প্রায় তিনশ পরিবারের মানুষ।
পশ্চিম কুজাইল সালাফিয়া মাদ্রাসার পরিচালক তাজমহল হোসাইন বলেন, পানি নিষ্কাশন না হওয়ার কারণে বর্ষা মৌসুমে গ্রামের সড়ক ও মাদ্রাসা জলাবদ্ধ হয়ে আছে। বর্ষার পানিতে পুরো গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে প্রায় ২ মাস ধরে। এতে করে গ্রাম দুটোর প্রায় তিনশ পরিবারের মানুষ চলাচল করতে পারছে না।
ঐ গ্রামের পল্লী প্রাণি চিকিৎসক নবীর উদ্দিন বলেন, বর্ষার পানি প্রবাহের পথ ভরাট করে পাশর্^বর্তী ক্ষেতলাল উপজেলা সীমান্তে জনৈক ব্যক্তি বাড়ি নির্মাণ করার ফলে আমরা দুই গ্রামের মানুষ জলমগ্ন হয়ে পড়েছি। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে বিষয়টি সুরাহার জন্য দরবার বসিয়েও কোন লাভ হয়নি।
জাহিদুল ইসলাম, কোহিনুর বেগম, পারুল, সালাম ও খালেকসহ কয়েকজন গ্রামবাসী জানান, আগে যে জমি দিয়ে দুই গ্রামের বর্ষার পানি নিস্কাশন হতো, সেই জমি ভরাট করার ফলেই তাদের এই ভোগান্তি। বর্ষার পানিতে গ্রামের সড়কসহ তাদের বাড়ি-ঘরও ডুবে আছে। এ অবস্থায় প্রশাসনের ওপর মহলের হস্তক্ষেপে বিষয়টি দ্রুত সুরাহার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
স্থানীয় জিন্দারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, গ্রামবাসিদের কষ্টের কথা ভাবে পানি নিষ্কাশনের বিষয় নিয়ে কয়েক দফা চেষ্টা করে আমি ব্যর্থ হয়েছেন। বিশেষ করে ঐ গ্রাম-দুটো কালাই উপজেলার হলেও পানি নিষ্কাশনের পথটি ক্ষেতলাল পৌরসভা সীমানার মধ্যে। এ ব্যাপারে আমি ক্ষেতলাল পৌরসভা মেয়র সিরাজুল ইসলাম-এর সাথে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সহযোগীতা না করায় বিষয়টি এখনো সুরাহা করা সম্ভব হয়নি।
কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোবারক হোসেন বলেন, যেহেতু ক্ষেতলাল উপজেলা দিয়ে ঐ গ্রাম দুটোর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা আছে। ক্ষেতলাল উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থ্া নেওয়া হবে।