রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে ১ কিলোমিটার রাস্তার কাপের্টিং দ্বারা উন্নয়ন কাজ শুরুর পর বেড কেটে ফেলে রাখা হয়েছে। রাস্তার দু;পাশ ৩-৪ ফুট উচু হওয়ায় এখন চলাচল অযোগ্য হয়েছে পড়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ তুলেছেন। অচলাবস্থা থাকায় হাজারো মানুষের দৈনন্দিন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
তবে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের দাবী আবহাওয়া অনুকুলে না থাকায় কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। উপজেলা প্রকৌশলী বলছেন ঠিকাদারকে তাগাদা দেয়া হচ্ছে। তবে কবে নাগাদ এই উন্নয়ন শেষ হবে সেটা স্পষ্ট করে কেউ বলতে পারছেন না।
উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুর-শরিয়তপুর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে একই প্যাকেজে আমতলার পাকা সড়কের ৯ শ মিটার পর ১৯০০ মিটার (১ কিলোমিটার) বালিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের দক্ষিন বালিয়াকান্দি, বিলবকচর, মধ্য বকচার গ্রামের মধ্যে কার্পেটিং দ্বারা এবং ত্রিলোচনপুরের ৮২০ মিটারের কাজ পায় মেসার্স চৌধরী এন্টারপ্রাইজ, ১ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যায়ে ত্রিলোচনপুরের ৮২০ মিটারের কাজ ইতোমধ্যে বালি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে। ২০১৯ সালের ৪ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২০ সালের সেপ্টম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
সরেজমিন শুক্রবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, আমতলা থেকে কিছুদুর এগিয়ে দক্ষিন বালিয়াকান্দি এলাকা থেকে শুরু করে বিলবকচর, মধ্যবকচর এলাকায় রাস্তার বেড কেটে দু’পাশে মাটি উচু করা রাখা হয়েছে। কয়েক দিনের বৃষ্টিতে অধিকাংশ জায়গাতে কাদা ও কিছু কিছু অংশে পানি জমে রয়েছে। উচু দু’পাশ দিয়ে কোনমতে পায়ে হেটে চলাচল করছে মানুষ। তবে ভ্যান কিংবা অন্য যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
মীরজান শেখসহ স্থানীয়রা জানান, ৪-৫ মাস পূর্বে রাস্তাটির কাজ শুরু হয়। রাস্তার মাটি কেটে দু’পাশে উচু করার পর অদৃশ্য কারণে কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক মাস অতিবাহিত হলেও এখনো কাজ বন্ধ রয়েছে। এখন তো চলাচল করা যায় না ! তারা দ্রুত রাস্তাটির কাজ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানান।
বিলবকচর গ্রামের দিপক মন্ডল বলেন, আমাদের চলাচলের সমস্যার কথা বিবেচনা করে এই রাস্তার উন্নয়ন শুরু হয়। রাস্তার মাঝের মাটি কেটে দুপাশ উঁচু করা হয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত কাজ বন্ধ রয়েছে। আগে ভ্যানগাড়ী কিংবা নসিমনে কৃষি পন্য সদরে নেয়া গেলেও কয়েকমাস যাবত চরম দুর্ভোগে রয়েছি। বাজার থেকে চাল কিনলেও সেটি আধা কিলোমিটার মাথায় করে নিতে হচ্ছে আমার বাড়ীতে।
মধ্য বকচর গ্রামের হাসিনা বলেন, এখন যে অবস্থা হয়েছে তাতেই আগেই ভালো ছিলো অন্তত ভ্যানগাড়ী চলত। এখন পায়ে হাটা ছাড়া উপায় নেই। তাও বৃষ্টিতে অচল।
বাইসাইকেলের পিছনে বস্তা নিয়ে মধ্যবকচর থেকে আমতলায় আসার পথিমধ্যে বকচর গ্রামের মিঠুন মন্ডল বলেন, বাড়ী থেকে ধান নিয়ে যাচ্ছি, একজন সহযোগি আছে পিছনে বস্তা ধরার জন্য। ভ্যান যাতায়াতের কোন সুযোগ নেই, কেউ যায় না। সামান্য বৃষ্টি হলে বাইসাইকেলও নিয়ে চলাচল করা কষ্টকর। একমাত্র রাস্তা বিধায় যেভাবেই হোক চলতে হচ্ছে। আমাদের প্রায় ২-৩শ পরিবারসহ এই পথ ব্যবহার করা হাজারো মানুষকে বিকল্প পথ ঘুরে সদরে যেতে হচ্ছে।
বিলবকচর গ্রামের পল্লী চিকিৎসক ভুলেন্দ্রনাথ রায় বলেন, কাজের শুরুতেই ঠিকাদার রতন চৌধুরী রাস্তাটি ভেকু দ্বারা মাটি কেটে দু’পাশ ২-৩ ফুট উচু করেছে। কয়েকদিনের মাঝে মাটি কাটা সম্পন্ন করে দীর্ঘদিন আর ঠিকাদারের খবর নেই। এখন তো রাস্তাটি সম্পূর্ণ অচল হয়ে রয়েছে। বিষয়টি উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যানকে জানানো হয়েছে কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এখনো কাজ শুরু হলো না। রাস্তাটি দিয়ে উপজেলা সদরের সাথে অভয়নগর, খাগুরিয়া, বকচর, উত্তর বকচর, বিলবকচর, মহারাজপুর গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের যোগাযোগ মাধ্যম। রাস্তাটি অচল কৃষকসহ শ্রমজীবি মানুষ খুব কষ্টে আছে। শুধুই তাই নয় আমতলা, ভীমনগর, পাইককান্দি এলাকার অনেকেরই এই মাঠে জমি আছে, তাদের ফসল নিয়ে বিপাকে পড়েছে তারা। আশা করি সংশ্লিষ্ট দপ্তর বিষয়টি জরুরী ভিত্তিতে সমাধান করবেন।
কাজের ঠিকাদার চৌধুরী এন্টাপ্রাইজের প্রোপাইটর রতন চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমানে আবহাওয়া খারাপ। বালি পাওয়া যাচ্ছে না। কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে সেটাও বলা যাচ্ছে না। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিছু করার নেই।’
বালিযাকান্দি উপজেলা প্রকৌশলী মো. আলমগীর বাদশা বলেন, একই প্যাকেজে আমতলা থেকে বকচর রাস্তার বিলবকচর মধ্য বকচর এলাকায় ১ কিলোমিটার ও ত্রিলোচনপুর গ্রামে ৮২০ মিটার কাজ চলছে। বিলবকচর এলাকায় রাস্তাটির বেড কেটে বালু ফেলানোর পর বালুতে কিছু ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়। সে কারনে উক্ত স্থানের কাজ সাময়িক ভাবে বন্ধ করা হয়। পরবর্তীতে বালু পরিবর্তন করে ঠিকাদারকে কাজ শেষ করার জন্য তাগাদা দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ২০% কাজ শেষ হয়েছে, আশা করছি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, রাস্তার কিছু কাজ করে বন্ধ করে রাখা হলে মানুষের দুর্ভোগ হয়। উপজেলা প্রকৌশলীকে ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করে জরুরী ভিতিত্তে কাজ সমাধানের জন্য বলা হয়েছে। আশা করছি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে।