গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর আওতায় ভাওয়াল গড়, মির্জাপুর, পিরুজালী ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ২১, ২২ ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের পরিচালক হিসাবে মোঃ নুরুল ইসলামকে একক প্রার্থী ঘোষনা করার অভিযোগে আদালত তা স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। একই এলাকার অপর পরিচালক পদপ্রার্থী হাজী মোঃ বাবুল হোসেনের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে গাজীপুরের বিজ্ঞ সিনিয়র সহকারী জজ আদালত গত ২৯ জুলাই এ আদেশ প্রদান করেন।
জানা যায়, গত প্রায় একবছর আগে গাজীপুরের জয়দেবপুর থানাধিন গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২, এর ৬ নং এলাকার পরিচালক পদে আগ্রহী প্রার্থী হিসাবে মোঃ নুরুল ইসলাম ও মোঃ বাবুল হোসেন আবেদন পত্র দাখিল করেন। পরবর্তীতে নির্বাচনের দিনে কোন প্রকার কারণ ছাড়াই বাবুল হোসেনের মনোনয়ন পত্র বাতিল করে নুরুল ইসলামকে একক প্রার্থী হিসাবে ঘোষনা ও তালিকা প্রকাশ করেন। ফলে বাবুল হোসেন আপত্তি জানিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশন প্রধানের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগে গাজীপুরের দেওয়ানি আদালতে একটি মামলা (নম্বর ১০৫/২০২০) দায়ের করেন।
আদালত দীর্ঘ শুনানীর পর সার্বিক পর্যালোচনায় ন্যায় বিচারের স্বার্থে লিখিত আপত্তি দাখিল না করা পর্যন্ত নালিশী বিষয়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য বিবাদীদের নিদের্শ দিয়েছেন।
এছাড়া গাজীপুর সদরের জানাকুর গ্রামের আবদুর রহমানের পুত্র মোঃ নুরুল ইসলাম নরওয়ের পাসপোর্টধারী। তাঁর বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে বিগত দিনে পরিচালক মনোনীত হয়ে সাধারণ গ্রাহকদের দালালি ও সুবিধা না পেয়ে লাইন স্থাপনে বাধাসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ ক্যান্টনমেন্ট এলাকার নয়নপুরে দাতব্য প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ নরওয়ে ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল’ পরিচালনা করছেন। পল্লী বিদ্যুৎ অফিসটি একই এলাকায় হওয়ায় স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে সে দ্বিতীয় মেয়াদেও পরিচালক নির্বাচিত হন। পরিচালক হওয়ার পর থেকে সার্বক্ষণিকভাবে অফিসে বিচরণ করেন এবং সাধারণ গ্রাহকের যে কোন কাজ করতে হলে তার শরণাপন্ন হতে হয়। অফিসের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজসে তিনি দালালি করে বিপুল পরিমাণ টাকা-পয়সার মালিক হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে জানাকুর এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মহল্লার উপর দিয়ে ১১ হাজার ভল্টের লাইনটি রাস্তার পাশে স্থানান্তরে বাধা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগকারী মোঃ বাবুল হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত ওয়ারেন্ট কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান, সার্জেন্ট মোঃ শহিদ, মোসাঃ তাসলিমা জানান, তারা গত একবছর যাবৎ তাদের বাড়ির উপর দিয়ে স্থাপিত ঝুঁকিপূর্ণ লাইনটি সরানোর কাজে প্রতিনিয়ত বাধার সম্মূখীন হচ্ছেন। গত বছরের মে মাসে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর আবেদনের প্রেক্ষিতে নতুন করে নকশা তৈরি করা হয়। লাইন স্থানান্তরে ঠিকাদার পদক্ষেপ নিলেও নুরুল ইসলামের অনুগত ব্যক্তিরা বারবার বাধা সৃষ্টি করছে।
বাবুল হোসেন জানিয়েছেন, নুরুল ইসলাম সাবেক সভাপতি হয়েও রানিং সভাপতি পরিচয় দেন। জিডিতেও তিনি সভাপতি পরিচয় দিয়েছেন। সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) শাহ্ নেওয়াজও জানিয়েছেন, নুরুল ইসলাম এখন আর সমিতির সভাপতি নেই। আগেই তার মেয়াদ শেষ হয়েছে।
এদিকে গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানায় বাবুল হোসেন গত ২৫ জুলাই নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে একটি জিডি করেছেন। ওই জিডির নম্বর ১০৩৭। জানাকুর গ্রামের মৃত হাসমত আলীর পুত্র ওই জিডিতে অভিযোগ করেছেন, একই গ্রামের মৃত আঃ রহমান শেখের পুত্র অভিযুক্ত নুরুল ইসলাম জিডি দায়েরকারীকে চিঠি লিখে ও আচরণে হুমকি দিয়েছেন। অপর দিকে নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে জয়দেবপুর থানায় ২০১৮ সালের ২৯ নভেম্বর তারিখের (এফ আই আর নং- ৫৯) একটি মাদ্রক মামলা রয়েছে। এতে ১৯৯০ সালের মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯(১) এর ৯(ক)/২৫ ধারায় এজাহারে ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসাবে অভিযুক্ত আসামি ছিলেন বলে পুলিশের অনলাইন জীবন বৃত্তান্তে জানা যায়।
গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২, এর ৬ নং এলাকার পরিচালকের মেয়াদ ৯ এপ্রিল শেষ হয়। ওই দিনই তৃতীয় বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে তা অনুষ্ঠিত হয়নি। এ ছাড়া সব ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত বাড়াবাড়িসহ নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগও রয়েছে। সময়-অসময়ে অফিসে তার আচরণ ও বিচরন বিরক্তিকর। তাই কর্তৃপক্ষ তাকে অফিসে আসতে বারণ করে দিয়েছেন বলে জানা গেছে।