মুক্তির গান, মাটির ময়না, আদম সুরত, রানওয়েসহ সাড়া জাগানো চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদের নবম মৃত্যুবার্ষিকী বৃহস্পতিবার। আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান এই চলচ্চিত্রকারের মৃত্যু দিনটিতে তাঁর নিজ গ্রামের সরকারি কোনো কর্মসূচি না থাকলে, পরিবারের উদ্যোগে স্বল্প পরিসরে দোয়ার অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। মৃত্যুর দীর্ঘ নয় বছর পেরেয়ে গেলেও তারেক মাসুদের স্মৃতি রক্ষায় তারেক মাসুদ স্মৃতি কম্পলেক্স নির্মিত না হওয়ায় হতাশ তারেক মাসুদের পরিবার ও এলাকাবাসী। তবে তারকে মাসুদের স্মৃতি ধরে রাখতে তারেক মাসুদের বাড়ির সামনে একটি ভাঙ্কর্য ও পৌরসভার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের নাম করন করা হবে বলে জানালেন পৌর মেয়র।
মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদের নবম মৃত্যুবার্ষিকী বৃহস্পতিবার ১৩ আগষ্ট। ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট তিনি নিজ পরিচালনায় নির্মিতব্য চলচ্চিত্র “কাগজের ফুল” এর শুটিং লোকেশন দেখে ঢাকায় ফেরার পথে মানিকগঞ্জের জোকা নামকস্থানে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদ এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন মারা যান।
তারেক মাসুদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার নূরপুরে তারেক মাসুদের সমাধীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও ছোট পরিসরে দোয়ার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
এই চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব ছিলেন ৫ ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড়। শৈশবে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় কিছুদিন লেখাপড়া করেছেন। তারপর তিনি ভাঙ্গা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশুনা শেষে ঢাকা চলে যান। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন।
আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন সাড়া জাগানো চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদের বাড়িতে এসে হতাশ হয়ে ফিরে জান দর্শনার্থীরা। তারেক মাসুদের বাড়িতে নেই তারেকের স্মৃতি। তারেক মাসুদের বাড়ি দেখতে এসে হতাশা প্রকাশ করেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠণ আমরা করবো জয় এর সাধারণ সম্পাদক শরিফ খান। তিনি বলেন, তারেক মাসুদ গত হয়েছেন দীর্ঘ নয় বছর। নয় বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তারেক মাসুদের স্মৃতি ধরে রাখার কোন কিছুই নির্মান হয়নি। আমি চাই সরকার দ্রুত তারেক মাসুদ স্মৃতি কমএরক্স নির্মান করবে।
সাংস্কৃতিক কর্মী এ্যাড. শিপ্রা গোষ্মামী বলেন, তারেক মাসুদ শুধু ফরিদপুরের নয় সারা বাংলাদেশের গর্ব, তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন একজন মানুষ। তাঁর জন্মদিন ও মৃত্যু বার্ষিকী সরকারি ভাবে পালন করার দাবী জানান তিনি। তিনি আরো বলেন,
দীর্ঘ নয় বছর পেরিয়ে গেছে এখনও তারেক মাসুদ স্মৃতি কম্পলেক্স নির্মিত হয়নি। আমরা হতাশ হয়ে পড়েছি। তারেক মাসুদকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে দ্রুত তারেক মাসুদ স্মৃতি কম্পেলেক্স নির্মাণ করতে হবে।
তারেক মাসুদের মা নুরুননাহার মাসুদ হতাশা ব্যক্তকরে বলেন, এখানে আর কিছুই হবে না। আমি মনে করেছিলমি তারেকের নামে কম্পেলেক্স হবে, লাইব্রেরী হবে, রাস্তার পাশে একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ হবে, কিন্তু দীর্ঘ নয় বছরেও কিছুই হয়নি। আমি দেখে যেতে পারলাম না। আমার সময় শেষ হয়ে এসেছে। তারেক মাসুদ স্মৃতি কম্পেলেক্স নির্মিত হলে আমি সব কিছু সাজিয়ে রেখে যেতে পারতাম। তারেক মাসুদের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে তারেক মাসুদ স্মৃতি কম্পলেক্স নির্মান করতে হবে। তাহলেই তারেক মাসুদ যুগের পর যুগ বেঁচে থাকবেন মানুষের মাঝে।
তারেক মাসুদের স্মৃতি ধরে রাখতে ভাঙ্গা পৌরসভার পক্ষ থেকে ব্যপক কর্মকাণ্ড হাতে নেওয়ার কথা জানালেন, ভাঙ্গা পৌরসভার মেয়র আবু ফয়েজ মো. রেজা। তিনি বলেন, তারকে মাসুদের স্মৃতি ধরে রাখতে তারেক মাসুদের বাড়ির সামনে একটি ভাঙ্কর্য ও পৌরসভার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের নাম করন করা হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাস্কর্য ও গুরুত্বপুর্ণ সড়ক গুলোকে তারেক মাসুদের নামে করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
তবে তারেক মাসুদের স্মৃতিকে আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে সরকার প্রদক্ষেপ গ্রহণ করবে এমনটাই প্রত্যাশা ফরিদপুরবাসীর।