গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে হাট-বাজারে মিলছে দেশী প্রজাতির মাছ, ফিরতে শুরু করেছে হারিয়ে যাওয়া সোনালী দিনের সেই চিরচেনা রূপ। কিশোর-কিশোরী,যুবক-যুবতীসহ বয়স্কদেরও দেখা যায় মাছ ধরতে।
প্রায় দু'দশক ধরে প্রকৃতির বিরূপ আচরণে বর্ষা মৌসুমেও অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের দরুন উত্তরাঞ্চলের খরা প্রবণ এ উপজেলার খাল-বিল, নদী-নালা শুকিয়ে যাওয়ায় দেশী প্রজাতির মাছ বংশ বিস্তার করতে পারতো না। যতটুকু বংশ বিস্তার ঘটতো তাও আবার খরায় শুকিয়ে যাওয়ায় খাল-বিল সেচে নিধন করা হতো দেশী প্রজাতির মাছের পোনা। যদিওবা বন্যা হতো তাও আবার ছিল ক্ষণস্থায়ী। ফল স্বরূপ দেখা দিয়েছিল মাছের আকাল। হাট-বাজারগুলোতেও খুব একটা দেখা মিলত না দেশী প্রজাতির- পুঁটি, ডানকানা(ডাইরকা), মলা, ঢেলা, চান্দা, ভেদা(ভেদাই), গুতম(পঁয়া), কাকিয়া(খাইকলা) টেংরা, টাকি, শোল, শিং, মাগুর, কৈ, কালবাউশসহ বিভিন্ন মাছের। আর রাণী (বৌ), পাবদা ও গজার মাছ বিলুপ্ত হয়েছে সেই কবেই!
ত্রিশের কম বয়সী নতুন প্রজন্মের কাছে এসব মাছের মধ্যে অনেক মাছের নামই ছিল অজানা। চল্লিশোর্ধদের কাছে মাছের প্রাচুর্য আর স্বাদের গল্প শুনলে অনেকটাই কিংবদন্তী মনে হত তাদের।
কিন্তু চলতি বছরের শুরু থেকেই প্রকৃতি তার স্বরূপ ফিরে পেলে শুরু হয় নিয়মিত বৃষ্টি। বর্ষাকাল যেন ভালোভাবেই জানান দেয় এবার। বৃষ্টি আর দীর্ঘ স্থায়ী দু'দফা বন্যায় উপজেলার নদী-নালা,খাল-বিল, প্লাবন ভূমি কানায় কানায় ভরে যায়। উপজেলার ২৯টি বিল, ৩টি নদী ও ৪৫টি প্লাবন ভূমিসহ বিভিন্ন জলাশয়ে দেশী প্রজাতির মাছ পায় তার বংশ বিস্তারের এক সুবর্ণ সুযোগ। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় এসব মাছ এখন খাবার উপযুক্ত হয়েছে। ধরা পড়ছে জালে। হাট-বাজারসহ বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে উঠছে দেশী প্রজাতির বিভিন্ন মাছ। দামেও বেশ সস্তা। ক্রেতারা তুলছেন তৃপ্তির ঢেঁকুর আর প্রান্তিক জেলেরা দেখছেন স্বপ্ন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের চাচিয়া মীরগঞ্জের বসুনিয়া পাড়া ও দহবন্দ ইউনিয়নের ধুমাইটারিতে চাষকৃত জমিতে ভেসে উঠছে মাছ। আর ওই মাছ ধরার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ। কেউ চালুনি, কেউ ডালি, কেউ আবার ছোট ছোট জাল দিয়ে ধরছে সেই মাছ। এ দৃশ্য যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে হারানো সেই সোনালী অতীত।