বিভিন্ন মাধ্যমে বিদেশি ঋণ পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে যুবলীগ নেতাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে বগুড়ার গোয়োন্দা (ডিবি) পুলিশ।
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় বুধবার বিকেলে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে রাত পৌনে ১২ টার দিকে বগুড়া গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানানো হয়।
আমানতউল্লাহ তারেক নামে এক প্রতারিত হওয়া ব্যক্তির করা মামলায় তাদের গ্রেফতারকরা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১২শ' কোটি টাকার চেক জব্দ করা হয়।
গ্রেফতারব্যক্তিরা হলেন-সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি ও তাড়াসের খাঁ পাড়া এলাকার কাজী গোলাম মোস্তফার ছেলে রাব্বী শাকিল ওরফে ডিজে শাকিল (৩২), কুসুমদ্বী এলাকার আবদুল মালেকের ছেলে আইটি এক্সপার্ট হুমায়ূন কবির মিলন (২৮) এবং নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার গাড়ীক্ষেত্র এলাকায় সাইদুর রহমানের ছেলে হারুন রশিদ ওরফে সাইফুল ইসলাম (২৬)।
পুলিশ জানায়, বুধবার বিকেলে তারাশ উপজেলা পরিষদ গেট সংলগ্ন রিশান গ্রুপের প্রধান কার্যালয় থেকে তাদের গ্রেফতারকরা হয়। প্রতারক চক্রের এ দলটি দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া অনলাইন পেজ চালিয়ে মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছিল। সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক ও লোন সার্ভিস নামে একটি অনলাইন পেজে দেশে-বিদেশে ঋণ করে দেওয়ার ভুয়া বিজ্ঞাপন প্রচার করে তারা।
বিজ্ঞাপন দেখে বগুড়া সদর উপজেলার মালতিনগর এলাকার বাসিন্দা ও আমায়রা এগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী আমানতউল্লাহ তারেক ও অভি এগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী মো. আশিক দৌলতানা নামের দুই উদ্যোক্তা তাদের সাথে যোগাযোগ করেন। তারা ব্যাংক ঋণ নেওয়ার জন্য ওই প্রতারক চক্রের শাকিলের সাথে কথা বলেন। কথাবার্তায় শাকিল ঋণের ৫ শতাংশ কমিশন হিসেবে দাবি করেন এবং ঋণ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে ১৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা নেয় শাকিল। এরপর তাদের বগুড়া যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সাড়ে চার কোটি টাকার দুটি চেক দেন। ওই চেক ব্যাংকে জমা দেওয়ার পর তারা জানতে পারেন চেকগুলো ভুয়া এবং তারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
প্রতারিত ব্যক্তিরা এ বিষয়ে বগুড়া ডিবি কার্যালয়ে অভিযোগ করেন। এর ভিত্তিতেই ওই তিনজনকে গ্রেফতারকরা হয়।
বগুড়া পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা জানান, প্রতারক চক্রের ওই তিন সদস্যকে গ্রেপ্তারের সময় তাদের অফিসের কম্পিউটার, কয়েকটি ফাইল এবং ১২ শ' ১ কোটি ৭২ লাখ ১০ হাজার টাকার ভুয়া চেক জব্দ করা হয়। এ প্রতারক চক্রটি তিন শতাধিক ব্যাংক লোন দেওয়ার নামে বিভিন্ন অনলাইনে ভুয়া বিজ্ঞপ্তি ছাড়ে। তারা সামরিক বাহিনী, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্টান ও বিভিন্ন প্রিন্ট-ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার নিয়োগ পত্রসহ আইডি কার্ডের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করতেন।
এ সময় তাদের কাছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের জাল নথি, ভূয়া চেক বই, সিল, নকল নিয়োগপত্র তৈরির বিপুল সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া এই প্রতারক চক্রের ১২টি ফেসবুক আইডি, ৩৫টি ফেসবুক পেজ ২২টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও ভুয়া সাংবাদিকতার আইডি, ৭টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়। একই সঙ্গে ফেস এডিটিং ডকুমেন্ট ভর্তি দুই টেরা বাইটের হার্ডডিস্কসহ রবির সিম ৪৩টি, গ্রামিন ১৪টি ও বাংলালিংক ৩টি উদ্ধার করেছে পুলিশ।
তিনি বলেন, প্রতারণার কাজ করতে তারা ২২ টি নিউজ পেপার, ১২টি ফেসবুক আইডি এবং ৩৫টি ফেসবুক পেজ তৈরি করেছে। তাদের আটকের কথা জানতে পেরে প্রতারিত হওয়া প্রায় ২০ জনের মতো সাধারণ মানুষের ফোন কল আসে। বৃহস্পতিবার এদেরকে আদালতে তুলে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হবে।