করোনা মহামারিতে অন্য সব খাত ভুগলেও চাঙ্গাভাব ধরে রেখেছে দেশের ওষুধশিল্প। বিশ্ববাজারে দেশের ওষুধশিল্পের অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে। তবে কাঁচামাল আমদানিতে কিছুটা প্রভাব পড়লেও অভ্যন্তরীণ বাজারে ওষুধের চাহিদা বেড়েছে। বিশেষ করে করোনাসংক্রান্ত ওষুধের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে ওষুধ বিক্রি। ওষুধ শিল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নিজের চাহিদা মিটিয়ে এদেশের ওষুধ বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। আর বাড়ছে ক্রমেই ওষুধ রপ্তানি। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে এ দেশীয় ওষুধশিল্পের আধিপত্য বাড়ছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ২৬৯টিরও বেশি ছোট-বড় ওষুধ কারখানা রয়েছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী ওসব অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বছরে ২৪ হাজার রকমের ১২ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকার ওষুধ ও ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদন করে।
সূত্র জানায়, জাতীয় অর্থনীতিতে ওষুধশিল্পের অবদান বাড়ছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জিডিপিতে ওষুধ খাতের অবদান ছিল ১.৮৫ শতাংশ। বর্তমানে ২৫৭টি অনুমোদিত কম্পানির মধ্যে উৎপাদনে রয়েছে ১৫০টি কম্পানি। বর্তমানে ওষুধশিল্পের বাজার ২০ হাজার ৫১১ কোটি টাকা। বিগত পাঁচ বছরে এই শিল্পের প্রবৃদ্ধি গড়ে ১৫.৬ শতাংশ। পরবর্তী পাঁচ বছরে গড়ে ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আশা করা যাচ্ছে। ওষুধশিল্প দেশের ৯৮ শতাংশ চাহিদা মেটায়। বিগত চার দশক থেকে এই শিল্পে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। ওষুধের বৈশ্বিক বাজারের হিসাবে দেখা যায়, ২০১৮ সালের হিসাবে বিশ্বব্যাপী ওষুধের বাজার এক হাজার ২০৫ বিলিয়ন ডলার, যার ৪.০৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। ২০১৮ সালে ওই বাজার দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৪৫ বিলিয়ন ডলার। পাঁচ বছরে গড়ে ৩ থেকে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে ২০২৩ সালে ওই বাজার দাঁড়াবে এক হাজার ৫০৫ বিলিয়ন থেকে এক হাজার ৫৩৫ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বে ওষুধে ব্যয় ১ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলার। ২০২৩ সালে তা ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
সূত্র আরো জানায়, বিগত দুই বছরে এক হাজার ২০০ প্রকারের ওষুধ রপ্তানির অনুমোদন নিয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশে তৈরি ওষুধ বিশ্বের ১৪৭টি দেশে রপ্তানি হয়। রপ্তানিতে শীর্ষ সাত দেশ হচ্ছে মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, আফগানিস্তান, কেনিয়া ও স্লোভেনিয়া। ওই দেশগুলোতে মোট ওষুধ রপ্তানির ৬০.৩২ শতাংশ আর বাকি ৩৯.৬৮ শতাংশ অন্যান্য দেশে রপ্তানি করা হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ ওষুধ রপ্তানি করেছে ১৩ কোটি ডলার, যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ১০ কোটি ৩৫ লাখ ডলার। আর সদ্য শেষ হওয়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে ওষুধ রপ্তানি হয়েছে ১৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকার। আগের বছরের চেয়ে ওষুধ রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪.৪৯ শতাংশ। যদিও ওই বছরে রপ্তানির টার্গেট ছিল ১৬ কোটি ৯৫ লাখ ডলারের।
এদিকে করোনায় ওষুধের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দামের পালেও হাওয়া লেগেছে। বিগত মে ও জুন মাসের শেয়ার লেনদেন ওষুধ খাতে ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ডিএসইর তথ্যানুযায়ী মে মাসে ১৪৩ কোটি ২৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যার মধ্যে শুধু ওষুধ খাতে লেনদেন ৯০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ওষুধ খাতের দখলে মোট লেনদেনের ৬৩.২৩ শতাংশ। আর জুনে মোট লেনদেন হয়েছে ৪ হাজার ৭১৭ কোটি ২৮ লাখ টাকার। তবে ওষুধ খাতে লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ৪৯২ কোটি ২২ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনে ৭৩.০৬ শতাংশ।
অন্যদিকে বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সভাপতি সাদেকুর রহমান জানান, করোনার কারণে ওষুধের উৎপাদন কম। তবে ওষুধের চাহিদা ভালো। কিন্তু অনেক কোম্পানি কাঁচামাল সংকটের কারণে পর্যাপ্ত ওষুধ উৎপাদন করতে পারছে না। ফলে থমকে গেছে কিছু কিছু কোম্পানির উৎপাদন।