যশোর পুলেরহাট শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে বন্দি তিন কিশোর নিহত হওয়ার ঘটনায় সমাজসেবা অধিদপ্তর দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে এ কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে নিহত তিন কিশোরের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শেখ রফিকুল ইসলাম ১৪ আগস্ট স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, যশোরে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার ৩ বন্দি কিশোর নিহত ও চারজন আহত হওয়ার সুষ্ঠু তদন্ত করার জন্য দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলো, যুগ্ম সচিব। সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক ( প্রতিষ্ঠান) সৈয়দ মো, নুরুল বসির ও উপপরিচালক ( প্রতিষ্ঠান- ২) এস, এম, মাহমুদুল্লাহ। তিন কর্মদিবসের মধ্যে মহাপরিচালকের নিকট তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে শুক্রবার দুপুরে যশোর জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তার আহম্মেদ তারেক সামস নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রট হাফিজুল হকের উপস্থিতে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেছেন।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের মারপিটের ঘটনায় ৩ বন্দি কিশোর নিহত হয়। এ সময় আহত হয়েছে অন্তত ১৭। আহতদের পুলিশ উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেছে।
ঘটনার পরপরই শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের প্রবেশন কর্মকর্তা মুশফিক আহমেদ দাবি করেন, সম্প্রতি কেন্দ্রে বন্দি কিশোরদের দুই গ্রুপের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এরই জেরে বৃহস্পতিবার বিকেলে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। রড ও লাঠির আঘাতে মারাত্মক জখম হয় ১৭ কিশোর। প্রাথমিকভাবে উন্নয়ন কেন্দ্রে তাদের চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা চলে। তবে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় আশঙ্কাজনক একে একে আহতদের উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। এর মধ্যে নাইম, পারভেজ ও রাসেলকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
নিহতরা হলো, খুলনার দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা পশ্চিম সেনপাড়ার রোকা মিয়ার ছেলে পারভেজ হাসান রাব্বি (১৮), রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ১১৮৫৫৩, বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার মহিপুর গ্রামের আলহাজ নুরুল ইসলাম নুরুর ছেলে রাসেল ওরফে সুজন (১৮) রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ৭৫২৪ এবং একই জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার তালিপপুর পূর্বপাড়ার নানু প্রামাণিকের ছেলে নাঈম হোসেন (১৭), রেজিস্টেশন নম্বর ১১৯০৭। নাঈম হোসেন ধর্ষণ এবং রাব্বি হত্যা মামলার আসামি ছিল।
বালকদের জন্য দেশে দুটি কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র আছে। যার একটি গাজীপুরের টঙ্গিতে, অন্যটি যশোর শহরতলির পুলেরহাটে। এ কেন্দ্র মোট বন্দির সংখ্যা ২৮০ জন। যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে প্রায়ই অঘটন ঘটে। লাশ উদ্ধার, মারপিটের ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বে অবহেলা, দুর্নীতির কারণে প্রতিষ্ঠানটিতে অনিয়ম জেঁকে বসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর আগে একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটি এই তথ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য একগুচ্ছ সুপারিশ করেছিল। কিন্তু অবস্থার যে উন্নতি হয়নি; বরং অবনতি হয়েছে।