জামালপুর জেলার ৭টি উপজেলা এবং ৮টি পৌরসভায় বন্যার পানির স্রােতে অসংখ্য ঘর-বাড়ি,রাস্তাঘাট লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে। দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষ।
জেলা ত্রান ও পুর্ণবাসন কর্মকর্তা মো.নায়েব আলী জানিয়েছে,এবারের বন্যায় জেলার ৭টি উপজেলার ৬৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৯টি ইউনিয়ন এবং ৮টি পৌরসভার ৬৭৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে শিশু বৃদ্ধসহ মোট ২৫জন মানুষ পানিতে ডুবে মারাগেছে। এ ছাড়া ২লাখ ৪৮হাজার ৬৩৪টি পরিবারের ৯ লাখ ৯৪ হাজার ৭০৭জন লোক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সারা জেলায় ৩৮৬টি ঘর-বাড়ি সম্পূর্ণ এবং ১৩ হাজার ৭৩৮টি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ১৯৪ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা,৬৬কিলোমিটার পাকা রাস্তা, ৫টি ব্রীজ-কালভাট, ৪টি বন্যানিয়ন্ত্রন বাঁধ, ২৬৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,এবং ৬৫৮টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসার অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানিয়েছে সারা জেলায় দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় ১২হাজার ৮৬৩ হেক্টর জমির ফসল, বিশেষ করে পাট,ইক্ষু বীজ তলা,কাঁচা তরিতরকারিসহ অসংখ্য পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সরকারী হিসাবের চেয়ে আরো বেশী ক্ষতি হয়েছে দাবী বন্যা দুর্গত এলাকাবাসির।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলার বন্যার পানি কমার সাথে সাথেই জেগে উঠছে বিধ্বস্ত ঘর-বাড়ি ও রাস্তাঘাটের ধ্বংসাবশেষ। জেলার দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ,সরিষাবাড়ি,বকসিগঞ্জ ও জামালপুর সদরসহ ৭টি উপজেলা এবং ৮টি পৌরসভার অধিকাংশ ঘর-বাড়ি,রাস্তাঘাট বন্যার পানির স্রােতে লন্ডভন্ড বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। টানা দেড়মাস বন্যায় পানির তোড়ে বেশীর ভাগ রাস্তা লন্ডভন্ড হয়ে ইউনিয়নের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। উলিয়া থেকে আগত সোলাইমান বলেন, ইসলামপুর উপজেলা সদরে আসা খুবই কঠিন। কখনও নৌকা,কখনও পায়ে হেঁটে আবার কখনও রিক্সা চেপে আসতে হয়, ২০ টাকার ভাড়ার স্থলে এখন ৫০ টাকা দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। অপরদিকে কেউ হঠৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে পৌছানোর আগেই মারা যাচ্ছে। চিকিৎসা নিতে পারছে না বন্যা উপদ্রুত এলাকার মানুষ।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ইসলামপুর চিনাডুলি ইউপির আলামিন,আইমনা ও শহিদুল, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের আলী আজাদ, রহিমা,আবু সামা বলেন, এবারের বন্যার পানির প্রবল স্রােতে তাদের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে কোন কাজকর্ম নেই। অর্থও নেই, তাই তারা বাড়িঘর মেরামত করতে পারচ্ছে না। কোথায় গিয়ে আশ্রয় নিবে তারা জানে না। এমতাবস্থায় দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের ঘরবাড়ি মেরামত করে বসবাসের উপযোগী করে দিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
অপরদিকে মেলান্দহের মাহমুদপুরের রিক্সা চালক,আব্দুর রহিম,আলী আজগর,দেওয়ানগঞ্জের অটো চালক সাইফুল ইসলাম,ইসলামপুরের কুলকান্দির আনোয়ার,ছাবেদালী জানায়, বন্যার পানির তোড়ে বেশির ভাগ রাস্তাঘাট লন্ডভন্ড,চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ফলে রিক্সা,অটোরিক্সা চালাতে পারছি না। আমরা এখন বেকার হয়ে পড়েছি। কামাই রোজি না থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে থাকতে হচ্ছে আমাদের। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙ্গা রাস্তা মেরামত করে দিলে রিক্সা-অটোরিক্সা চালিয়ে আয় রোজি করে কোন মতে খেতে পেতেন।
এ ব্যাপারে পার্থশী ইউপির চেয়ারম্যান ইফতেখার আলম বাবুল,বেলগাছা ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল মালেক,চিনাডুলি ইউপির চেয়ারম্যান আবদুস ছালাম,বাহাদুরাবাদ ইউপির চেয়ারম্যান সাকিরুজ্জামান রাখাল বলেন,তাদের ইউনিয়নে বন্যায় অসংখ্য ঘরবাড়ি,রাস্তা ঘাট ভেঙ্গে লন্ডভন্ড হয়ে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইসলামপুরের গাইবান্দা ইউপির চেয়ারম্যান মাকছুদুর রহমান আনসারী বলেন,ইসলামপুর-ঝগড়ারচর পাকা রাস্তাটির বিভিন্ন অংশে ভেঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাস্তাটি সচল রাখতে নিজস্ব অর্থায়নে ইট-বালি ফেলে মাটি ভরাট করে দিয়েছি। কিন্তু টুংরাপাড়া ব্রীজটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়েগেছে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যেই এসব রাস্তাঘাট-ঘরবাড়ি মেরামত করে দিতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জামালপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন,বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হয়েছে। বরাদ্ধ পেলে দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।