করেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। মেলান্দহ হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফজলুল হক জানিয়েছেন, ১৭ আগস্ট ময়না তদন্ত সম্পন্ন শেষে ডা. সুলতানা পারভীনের স্বজনরা মৃতদেহ গ্রহণ করেন।
১৬ আগস্ট সন্ধ্যায় ওই ডাক্তারের মৃতদেহ হাসপাতাল কোয়ার্টার থেকে উদ্ধার করা হয়। মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে ধারণা করা যায়, মানষিক অবসাদ থেকে তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন। মেলান্দহ থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ রেজাউল করিম এমনটাই বলেছেন। তদন্ত এবং পোস্টমর্টেম রিপোর্টের পর মৃত্যুর রহস্য নিশ্চিত করা যাবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। ওই ডাক্তারের কক্ষ থেকে প্যাথেডিনের ৪টি খোসা পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও আরেকটি প্যাথেডিনের অর্ধেক সুলতানা পারভীনের শরীরে পুশিং অবস্থায় আটকা ছিল।
মেলান্দহ ইউএনও তামিম আল ইয়ামীন এবং স্বাস্থ ও প.প. কর্মকর্তা ডা. ফজলুল হক জানান- মৃত ডা. সুলতানা পারভীনের বাসা থেকে আলামত হিসেবে তার হাতের লেখা কাগজপত্র, ডায়েরি জব্দ করেছে পুলিশ। ওসি রেজাউল করিম আরো জানান-ডায়েরিতে অনেক লেখাই আছে। যা তদন্তের স্বার্থে প্রকাশ করা ঠিক হবে না। ডায়েরিসহ অন্যান্য লেখাগুলো অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সীমা রানী সরকারের তত্ত্বাবধানে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছে। স্বাস্থ ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফজলুল হক বাদি হয়ে মেলান্দহ থানায় ইউডি মামলা করেছেন।
উল্লেখ্য, সুলতানা পারভীনের বিয়ে হয় সাব্বির নামে এক বুয়েটের এক মেধাবী ছাত্রের সাথে। বিয়ের এক বছর পর সাব্বির কানাডায় পাড়ি জমায়। ৩ বছর আগে সাব্বির কানাডা থেকে সুলতানাকে ডিভোর্স দেয় এবং আরেক মেয়েকে বিয়ে করেছে। বিবাহ বিচ্ছেদের পর থেকেই সুলতানা পারভীন মানষিকভাবে আঘাত প্রাপ্ত হন। সাব্বির খুলনার খুলশী এলাকার বাসিন্দা বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
হাসপাতালের আরএমও ডা. নাজমুল হাসান এবং সুলতানা পারভীনের অত্যন্ত বিশ্বস্ত অপারেশন সহকারি সিনিয়র স্টাফ নার্স আতাউর রহমানসহ সহকর্মীরা জানান-চলাফেরা এবং কর্তব্যপালনে কখনো তাঁকে অবসাদগ্রস্থ মনে হয়নি। ডেলিভারি সংক্রান্ত অপারেশনে খুবই দক্ষ ছিলেন। শিশু সুলভ আচরণে সবাইকে মুগ্ধ করতো। তাঁর বাসায় কোন পুরুষ লোক প্রবেশের সাহস ছিল না। খুবই শান্ত স্বভাবের লোক ছিলেন। সহকর্মীরা আরো জানান-তিনি বিবাহিত বা অবিবাহিত এ বিষয়ে কোন কথা বলতেন না। কেও জানতে চাইলেও পারিবারিক বিষয়ে কারোর সাথে মুখ খুলেননি।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, ডা. সুলতানা পারভীনের আদিবাস চট্রগ্রাম বিভাগের বাউনিয়া এলাকায়। পিতা বীরমুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন ছিলেন রেলওয়ে পুলিশ। পিতার চাকরির সুবাদে রাজশাহীর পোস্টাল একাডেমি গলিতে ভাড়া বাসায় থাকতেন। পরে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছিলেন। তারা ৪ বোন।
১৯৯৭ সালে সুলতানা পারভীন রাজশাহী বোর্ড থেকে প্রথম শ্রেণিতে এসএসসি, ১৯৯৯ সালে নিউ গভঃ ডিগ্রি কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণিতে এইচএসসি, ২০০৭ সালে রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস, ২০১৮ সালে ডিপ্লোমা ইন পোস্টগ্র্যাজুয়েট পাশ করেন। সর্বশেষ তিনি ৩২তম বিসিএস (স্বাস্থ) পাশ করেন। ২০১০ সালের ১ জুলাই টেকনাফ স্বাস্থ কমপ্লেক্সে মেডিকেল কর্মকর্তা পদে যোগদান করেন। ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই ওএসডি হন। ২০১৫ সালের ১৬ অক্টোবর দিঘলিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ কেন্দ্রে সহকারি সার্জন, ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার, সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর মেলান্দহ স্বাস্থ কমপ্লেক্সে মেডিকেল কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন।
ডা. সুলতানা পারভীন ১৫ আগস্ট জাতীয় শোকদিবসের ছুটির দিনে জামালপুর হযরত শাহ জামাল (রহ) জেনারেল হাসপাতালে প্রাইভেট প্র্যাকটিস শেষে রাতে মেলান্দহ হাসপাতাল কোয়ার্টারে ঘুমিয়ে পড়েন। পরদিন তাঁর কোন সাড়া না পেয়ে পুলিশের সহায়তায় দরজার ছিটকেরি ভেঙ্গে তাঁর কক্ষে প্রবেশ করে মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।