বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির যে সাময়িক হিসাব বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশ করেছে, তার নানা অসংগতি তুলে ধরেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডয়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটির মতে, করোনার কারণে বিদায়ী অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে অর্থনীতি স্থবির ছিল। শিল্প উৎপাদন, পরিবহন, হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে অর্থনীতির প্রতিটি খাতই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কিন্তু এগুলোর যথাযথ প্রতিফলন হয়নি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) হিসাবে। গত অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রভাবে অর্থনীতিতে কোনো প্রবৃদ্ধি হওয়ার কথা নয়। রোববার আয়োজিত এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। এতে বক্তব্য দেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ও সংস্থার গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। মূল উপস্থাপনা সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন সংস্থার জ্যেষ্ঠ গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান। উল্লেখ্য, গত জুনে সিপিডি এক প্রতিবেদনে বলেছিল, করোনার কারণে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি আড়াই শতাংশের নিচে নেমে আসতে পারে। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ তাদের প্রতিবেদনে বলেছিল, ২ শতাংশের নিচে নেমে আসতে পারে প্রবৃদ্ধির হার। কিন্তু বিবিএসের হিসাবে এই হার ৫ শতাংশের ওপরে প্রাক্কলন করা হয়েছে। রোববার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে রাজনৈতিক সংখ্যায় পরিণত করা হয়েছে। প্রবৃদ্ধি নিয়ে নীতিনির্ধারকদের মধ্যে একধরনের মোহ সৃষ্টি হয়েছে। প্রবৃদ্ধির তথ্যকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটাকে সরকারের সাফল্য আকারে দেখানো হয়। কিন্তু প্রবৃদ্ধির ফলে যদি দারিদ্র্য না কমে, কর্মসংস্থান না হয়, সেই প্রবৃদ্ধি অর্থবহ হয় না। এ ধরনের প্রবৃদ্ধির হিসাব সরকারের নীতি প্রণয়নে বিভ্রান্তি তৈরি করবে। ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, কোভিডের আগে একমাত্র রেমিট্যান্স ছাড়া সব সূচকেই ঋণাত্মক অবস্থা ছিল। বিবিএস উল্লেখ করেছে, গত অর্থবছরেও জিডিপির ৩২ শতাংশ বিনিয়োগ এসেছে। ৩২ শতাংশ বিনিয়োগ নিয়ে আগের অর্থবছরে ৮ শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধি হলো, কিন্তু এবার ৩২ শতাংশ বিনিয়োগ দিয়ে ৫ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখানো হলো। দেশের অর্থনীতি যদি এতই ভালো থাকত, এত বিনিয়োগ হতো, তাহলে ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙ্গা রাখার জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়ার দরকার হতো না। মূল উপস্থাপনায় সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, করোনার প্রভাব জিডিপির এই হিসাবে আসেনি। সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়েছে, কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি করোনার কারণে সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থায় ছিল সেবা খাত। হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ ছিল, আবাসন ব্যবসায়ও খারাপ ছিল। তাছাড়া শিল্প উৎপাদনও অনেক কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আমদানি-রপ্তানির তথ্য দেখলেই সেটা বোঝা যায়। সিপিডি মনে করে, বিবিএসের এই হিসাব ব্যবহারোপযোগী নয়। এ রকম একটি বিশেষ সময়ে এই তথ্য নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ব্যবহার করা ঠিক হবে না। যে তথ্য-উপাত্ত রয়েছে, সেটি বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে। পরিসংখ্যান ব্যুরো অনেক হিসাব পুরোনো তথ্যের ভিত্তিতে করে থাকে। তাদের তথ্য হালনাগাদ করে জিডিপির হিসাব ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে প্রকাশ করার সুপারিশ করে সিপিডি। সেই সঙ্গে জিডিপির হিসাবে গুণগত পরিবর্তন আনতে হবে। পরিসংখ্যান নিয়ে বিভ্রান্তি ও অবিশ্বাস জন্ম নিয়েছে। এজন্য একটি স্বাধীন পরিসংখ্যান কমিশন গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছে সিপিডি।