মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের মুদারকান্দি গ্রাম সংলগ্ন মেঘনা নদীর তীর ঘেঁসে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালী একটি মহল। আজ ( সোমবার) বিকেলে এলাকাবাসী একজোট হয়ে তাদের বাধা দিতে গেলে গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এলাকাবাসীকে লক্ষ্য করে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ, ১০/১১ রাউন্ড গুলি বর্ষণ ও টেঁটা নিক্ষেপ করে বালুমহালে লোকজন। তাদের হামলায় আহত হয় অন্তত ছয়জন, আহতের মধ্যে তিনজন টেঁটাবিদ্ধ বলে জানা গেছে। আহতরা হলেন,ফাইজুল (২৫),রাশেল (২৪), ইপু (২৮), আবুল(৩৫) মাহবুব (১৮),সোহেল (৩৬)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের মুদারকান্দি গ্রাম সংলগ্ন মেঘনা নদীর মেঘনা উপজেলার সীমানায় গত কয়েক মাস আগে একটি বালুমহল চালু হয়। কুমিল্লার মেঘনা উপজেলা প্রশাসন বালুমহলটির অনুমোদন দেয় তবে বালু উত্তোলনের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে রাতের আঁধারে নদীর তীর ঘেঁসে বালু উত্তোলন করে নিচ্ছে ইজারাদাররা। এতে করে নদীর তীরের গ্রামগুলি বিলিন হওয়ার আশঙ্কায় নিরঘুম রাত কাটাচ্ছে নাদীর পাড়ের গ্রামবাসী। বালু মহলের নির্ধারিত এলাকা মুদারকান্দি গ্রাম থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে হলেও রাতের অন্ধকারে গ্রাম সংলগ্ন এলাকা থেকে বালি কেটে নেয় ইজারাদাররা এতে ভাঙ্গন ঝুঁকিতে রয়েছে পুরো গ্রামটি। এমত অবস্থায় স্থানীয় লোকজন আজ বিকাল চারটার দিকে একজোট হয়ে বালু মহল ইজারাদারদের বাধা প্রদান করতে গেলে তাদের ওপর হামলা চালায় বালু মহলের লোকজন। এলাকাবাসীকে লক্ষ্য করে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ, ১০/১১ রাউন্ড গুলি বর্ষণ ও টেঁটা নিক্ষেপ করে তারা। এ সময় আহত হয় অন্তত ছয়জন।
সরজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মেঘনা উপজেলার নলচর ও মইষারচর দুইটি বালু মহল রয়েছে এর মধ্যে নলচর এলাকায় বালু উত্তোলনের ইজারা পেয়েছেন মেসার্স ভূইয়া এন্টারপ্রাইজ এবং মইষারচর এলাকায় বালু উত্তোলনের ইজারা পেয়েছে নার্গিস এন্টারপ্রাইজ। ইজারায় উল্লিখিত এলাকা থেকে তারা বালু উত্তোলন না করে তারা তাদের উত্তোলন খরচ কমাতে এবং অতিরিক্ত বালু তোলতে রাতের আঁধারে নদীর তীরে চলে আসে। স্থানীয় প্রভাবশালী চালিভাংগা গ্রামের কাইয়ুম, মেঘনা উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ মিয়া রতন শিকদারের ছোট ভাই মাহাবুব, সানাউল্লাহ, জাহাঙ্গীর আলম সহ আরও কয়েকজন এর নেপথ্যে রয়েছে। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে রাতের আঁধারে তারা এই অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এর আগেও এলাকাবাসীর বেশ কয়েক বার প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও কোনো লাভ হয়নি।
মেঘনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ মিয়া রতন শিকদার বলেন, যারা ইজারাদার তারা কোটি টাকা খরচ করে ইজারা আনে এবং তাদেরকে একটি নির্দিষ্ট এড়িয়া থেকে বালু উত্তোলনের নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু তারা ওই নির্দিষ্ট এলাকা ছেড়ে নদীর তীরে চলে আসে। এতে করে নদীর পাড়ের গ্রামগুলো ভাঙনের আশঙ্কা থাকে। যাতে করে বালু উত্তোলনের ফলে কোনো গ্রামের ক্ষতি না হয় এবং ইজারাদাররা যেন তাদের নির্দিষ্ট এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করে আমি প্রশাসনকে নিয়ে সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে গজারিয়া থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ মোঃ ইকবাল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, স্থানীয়দের সাথে বালুমহল ইজারাদারদের একটা সংঘর্ষের খবর পেয়েছি তবে গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণের কোন ঘটনা আমার জানা নেই।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান সাদীর যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, উল্লিখিত জায়গায় গজারিয়া উপজেলার কোন বালুমহাল ইজারা দেওয়া হয়নি। পার্শ্ববর্তী মেঘনা উপজেলার একটি বালুমহাল ইজারা দেওয়া থাকতে পারে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইমাম রাজিব টুলুকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে।