সিরাজদিখানের কোলা ইউনিয়নে জমি আত্মসাৎ ও বাড়িতে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় মহিলা ইউপি সদস্যসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গত মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। গাঙ্গুলী বাড়িতে অগ্নিকান্ডের ঘটনার দুইজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এ মামলায় বাকিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে আরো মানুষের জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। মামলা হওয়ায় কোলা ইউনিয়নের ভুক্তভোগীরা স্বস্তি প্রকাশ করেছে।
এলাকাবাসী অনেকে জানান, দীর্ঘদিন ধরে এ ইউনিয়নের মানুষকে মামলা দিয়ে ও নানা অত্যাচারের মুখে জিম্মি বানিয়েছে সিদ্দিক মোল্লা, রওশন আরা বেগম ও তার ছেলে বিদ্যুৎ মোল্লা, সহিদুল ইসলাম এবং সোবাহান বেপারীসহ তাদের সিন্ডিকেটের সদস্যারা। তারা আরো অনেক মানুষের জমি জোর দখল করে নিয়েছে। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ মানুষ গুলোর দাবী তাদের উপযুক্ত বিচার হওয়া উচিত, যাতে আর কোন অন্যায় কাজ করতে না পারে।
সুদর্শণ গাঙ্গুলীর ছেলে মিঠুন গাঙ্গুলী জানায়, আমাদের সম্পত্তির ৮১ শতাংশ প্রতারণা করে নেওয়ার কারণে প্রতিবাদ ও সংবাদ সম্মেলন করেছি। ১০ জুলাই গভীর রাতে আমাদের বাড়িতে আগুন দেয়। একটি ঘর পুরে যায়, সিদ্দিক মোল্লা, রওশন আরা বেগম, বিদ্যুৎ মোল্লা, সাইদুল ইসলাম ও সেবাহান মাঝিসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে আমরা থানায় অভিযোগ করেছি। সৌদীপ্রবাসী মোহাম্মদ আলী মোল্লা টেলিফোনে জানান, আমার পূর্ব কোলা গ্রামের ৪২ শতাংশ জমি সিদ্দিক মোল্লা আত্মসাৎ করেছে। গত ৮ মাস আগে আমি দেশে এসেছিলাম জমির খাজনা দিয়েছি। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তিসহ উপজেলা চেয়ারম্যানকে বিষয়টি অবহিত করেছি, এখনো কোন সুরাহা হয় নাই। আমি দেশে এসে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে যাবো।
কোলা গ্রামের বাচ্চু সরদার জানান, আমাদের ৩ ভাই ও ১ বোনের কোলা গ্রামে ৩২ শতাংশ সম্পত্তি তাদের দখলে, আমরা ঐ বাড়িতে থাকিনা। বাবা অসুস্থ হওয়ার পর ৯২ সালে আমরা বাড়ি ছেরেিেছ। সিদ্দিক মোল্লা ঐ বাড়ি থেকে অন্য মালিকের অংশ কিনে আমাদেরটা সহ বসবাস করছে। আমি আপনাদের এর বেশি বলতে পারব না, আমরা গরীব মানুষ, আবার মামলা খাব নাকি।
গৌরীপুরা গ্রামের হাসেম সরদার জানান, আমার বাপ-দাদার পশ্চিম কোলা গ্রামের ৩২ শতাংশ সম্পত্তি দীর্ঘ ১০-১২ বছর ধরে সিদ্দিক মোল্লা (৬৪) ও তার স্ত্রী কোলা ইউপি ৪,৫,৬ নং ওয়ার্ড মহিলা সদস্য রওশন আরা বেগম (৪৫) ওরফে রুশি জোর দখল করে আছে। বর্তমানে সে জায়গায় মুরগীর ফার্ম করেছে। সে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও তার ছেলে বিদ্যুৎ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ায় ক্ষমতার দাপট দেখায়। আগের ও বর্তমান নিকট লিখিত ভাবে জানিয়েছি, তারা চেয়ারম্যানদের পাত্তা দেয় না। বর্তমানে আমার এক চাচা বেঁচে আছে। ওয়ারিশদের সাথে আলোচনা করে আদালতে যাবো।
কোলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম তারণ জানান, সিদ্দিক মোল্লা তার স্ত্রী মহিলা ইউপি সদস্য রওশন আরা বেগম ও তার ছেলে বিদ্যুৎ এর নানা প্রকার অত্যাচারে এলাকাবাসী এখন অতিষ্ঠ। গত কয়েকদিন আগে সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ মোল্লা, বিপ্লব মোল্লা ও রওশন আরা কোলা আওয়ামী লীগের অফিসে এসে তালা ও ভীতরে ঢুকে জিনিসপত্র ভাঙ্গে। রওশন আরা বলে আমরা ছাড়া এখানে আওয়ামী লীগ কে? আমার ছেলেরা ক্লাবে বসতে পারবে না কেন। বিদ্যুৎ মোল্লা বলেছে ক্লাবে আমরা বসতে না পারলে ক্লাবে আগুন জালায় দিমু। বিষয়টি থানা নেতাদের জানিয়েছি। তারণ আরো জানান, গাঙ্গুলী বাড়ি নিয়া সংবাদ সম্মেলনে আমি কথা বলায় আমাকে মেরে ফেলার হুমকী দেয় বিদ্যুৎ মোল্লা।
মহিলা ইউপি সদস্য রওশন আরা বেগম মোবাইল ফোনে জানান, কারো জমি দখর করি নাই, আমরা কিনে নিয়েছি দলিলপত্র আমাদের আছে। হাসেম সরদারের বাপ দাদার সম্পতি আমরা গত ৪ বছর আগে কিনেছি। আর আওয়ামী লীগের অফিসে তারণ তালা দিয়েছিল। ওখানে আমার ছেরে কেরাম কিনে দিয়েছিল। ওরা ওখানে বিকালে বসত। এটা নিয়ে আমরা থানায় জিডি করেছি। উপজেলা চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন দাদাকে বলেছি, সে সব জানে। অন্যান্য অভিযুক্তরা পলাতক ও গ্রেপ্তার থাকায় তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া সম্ভব হয় নাই।
সিরাজদিখান থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ মো. ফরিদ উদ্দিন জানান, অগ্নিকান্ডের ঘটনায় সন্দেহজনক ৫-৬ জনের নাম রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব রয়েছে। তাই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২ জনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছি।