মুজিব ছিলো, মুজিব আছে, মুজিব থাকবে!
ওইতো তাকে দেখা যায়, জনকের নাম
এতো সহজেই কি মোছা যায়....
১৯৭৫ সালের রক্তাক্ত ১৫ আগস্ট। সেই কলঙ্কিত দিন। রক্তের অক্ষরে লেখা মহামানবের বিয়োগ ব্যাথায় বিহ্বল হওয়ার শোকাবহ দিন। যার নামের উপর চিরকাল নেমে আসে এ দেশের মানুষের দু’চোখে শ্রাবণের বৃষ্টিধারা। যার নামের উপর কখনো ধুলো জমতে দেয় না প্রকৃতির হাওয়া। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম সেই পুরুষ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একটি বিশেষ রাষ্ট্রের এ দেশিয় কতিপয় চাটুকার দালাল ঘাতকের নির্মম বুলেটে বাংলাদেশ হারিয়েছে তার স্রষ্টাকে। জাঁতি হারিয়েছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালিকে। আর আমরা হারিয়েছি আমাদের জনককে।
সেদিন শ্রাবণের মেঘ ঢেকে দিয়েছিলো পুরা বাংলাদেশকে। তবে সেই কৃষ্ণ মেঘ নিষ্ঠুরভাবে গ্রাস করেছিল রাজধানী ঢাকাকে। আর সেই কাল রাতে রচিত হয় ইতিহাসের নির্মম নিষ্ঠুর জঘন্যতম ঘৃণ্য কলঙ্কিত এক হত্যাযজ্ঞের। একাত্তরের পরাজিত শক্তির ঘৃণ্য সর্বনাশা চক্রান্তে এ দেশিয় কতিপয় ঘাতক পৈশাচিকভাবে হত্যা করে বাঙালির জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। সেদিনের সেই দানবের নিষ্ঠুর রক্তের হলি খেলায় শহিদ হয়েছেন বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের দেশে থাকা সদস্যরা।
হায়নারা সেদিন রচনা করেছিলো ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায়। এ দেশিয় ঘাতকচক্র সেদিন আমাদের জাতীয় ইতিহাসে যে কলঙ্কের কালিমা লেপন করেছিলো, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দীর্ঘ পথপরিক্রমায় সেই পথ ধরেই জাতির পিতার নামটি এ দেশ থেকে মুছে ফেলার অনেক অপচেষ্টাও করেছিলো একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বদানকারীরা। সেটি আর সম্ভব হয়নি। শুধু তাই নয়; ওই চক্রটি মহান স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়েও মিথ্যার ধুম্রজাল সৃষ্টি করেছিলো। কিন্তু মিথ্যা দিয়ে কি ঢাকা যায় ইতিহাসের অমোঘ সত্যকে?
পুরো বিশ্ব জানে বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু-ই স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা। সেই সিংহ হৃদয় আর লৌহ মানবের মিশেলে প্রখর ব্যক্তিত্ব বঙ্গবন্ধুর দৈহিক বিনাশ ঘটলেও তার আদর্শের বিচ্যুতি ঘটতে পারেনা। চিরঞ্জিব সেই মহামানবের মৃত্যু নেই। মানুষ মরে যায় কিন্তু আদর্শ মরেনা। বঙ্গবন্ধু শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি নয়; বঙ্গবন্ধু হাজার জনমের বর্ণীল আর স্বপ্নীল আদর্শের অন্য আর এক নাম। অবিনশ্বর সেই আদর্শ। সেই আদর্শে চলুন এগিয়ে যাই আগামীর পথে।
’৭৫-পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। আজ বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পুরো বাংলাদেশে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় সারাবিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। আজ শুধু বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশেই নয়; বিশ্বের অনেক দেশে জাতীয় শোক দিবসে স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়েছে। আমি মনে করছি, বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানানোর শ্রেষ্ঠ উপায় হচ্ছে-তিনি যে সুখী, সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, তার বাস্তব রূপ দেয়া। এমন একটি দেশ গড়ে তোলা যেখানে স্বাধীনতার মূল চেতনা বাস্তবায়িত হবে এবং ধর্মগোত্র নির্বিশেষে সব মানুষ সমঅধিকার ভোগ করবে। গণতন্ত্র, সামাজিক এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়েই সেই কাজটি করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশের আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেদিন ঘাতকের ছোঁড়া বুলেটে ৩২ নাম্বারের বাড়ির সিঁড়ি বেয়ে মুজিব পরিবারের রক্তে বাংলার মানচিত্রে যে রক্ত লেগেছিল তা আজও রক্তত্ব হয়ে জ্বলজ্বল করছে বাংলার আকাশে-বাতাসে। আজও খ্যান্ত হয়নি পরাজিত শক্তির উত্তরসূরিরা। বিদেশী সেই পরাশক্তির বীজ আজও বাংলাদেশের মাটিতে রয়েছে, যারা আজও মানতে চায়না ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ বলে কোন ইতিহাস সৃষ্টি হয়ে আছে। ’৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যে সংকল্প ও অঙ্গিকার এবং ত্যাগের মানসিকতা নিয়ে দেশের কল্যাণের জন্য বঙ্গবন্ধু নিজিকে বিলিয়ে দিয়েছেন, তা থেকে প্রেরনা নিয়ে আজ আমাদের জাতিসত্তায় টিকিয়ে রাখতে হবে।
বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন-কোন মহৎ কাজ করতে চাইলে ত্যাগ ও সাধনার প্রয়োজন। যারা ত্যাগ করতে প্রস্তুত নয় তারা কোন মহৎ কাজ হাসিল করতে পারেনা। তিনি স্বচ্ছ রাজনীতির কথা বলেছেন, প্রলোভন জয় করতে শিখিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারীরা, আমাদের প্রিয় স্বদেশ ভূমিকে গরিয়ান, মহিয়ান হিসেবে জগৎ সভায় প্রতিষ্ঠিত করার নিরন্তন প্রচেষ্টায় নিয়োজিত যারা, দারিদ্র জয়ের সাধনার নিমগ্নদের প্রতি আহবান, সমৃদ্ধ দেশ গড়ার নবতর অভিযাত্রায় বিজয় নিশ্চিত করতে এগিয়ে চলুন দৃঢ় পণে ও অসীম সাহসে। কথা ও কাজে মিল রাখুন, সবার বিশ্বাস থাকুক অবিচল। আর এজন্য অবশ্যই কর্তব্য হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর জন্ম বা শাহাদাত বার্ষিকীতে ব্যানার পোস্টার কিংবা তোরণ লাগিয়ে নয়, তাকে স্মরণ করতে হবে প্রতিদিন। জীবনের প্রতিটি কাজে বঙ্গবন্ধুর মহৎ চিন্তা ও কর্মকাণ্ড থেকে প্রেরণা নিতে হবে। অপরদিকে এটাও মনে রাখতে হবে, যে অপশক্তি বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবারে হত্যা করেছে তাদের অনুসারিরা বাংলাদেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধি চায়না। তারা বাংলাদেশকে জঙ্গী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার গভীর ষড়যন্ত্রে এখনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ওইসব ষড়যন্ত্রকারীদের স্বপ্ন কোনদিনও এদেশে আর কোনদিন সফল হবেনা।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা শতভাগ সফল করতে হলে এখনই এ দেশের শান্তিকামী সাধারণ মানুষকে ষড়যন্ত্রকারীদের সকল বেড়াজাল ছিন্ন করে সব পেশা ও সকল শ্রেণীর মানুষের ঐক্যের মাধ্যমে কর্মদ্যোগ হতে আন্তরিক হতে হবে। এই প্রয়াস আমাদের সাফল্য এনে দেবে। কারণ আমাদের সামনে উজ্জ্বল ধ্রুব তারাসম সমুজ্জল হয়ে রয়েছেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি শুধু আওয়ামী লীগের নেতা নন; তিনি সমগ্র জাতির নেতা। বঙ্গবন্ধু ইতিহাসের মহানায়ক। বঙ্গবন্ধুর নাম কোনদিনও মুছে যাবার নয়। সকল চক্রান্ত ও বাঁধা পেরিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে হাত রেখে গড়ে তুলতে হবে বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশ হিসেবে।-লেখক : চেয়ারম্যান, কাঠালিয়া উপজেলা পরিষদ ও সাধারণ সম্পাদক, কাঠালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ, ঝালকাঠি।