পাহাড়ি নদী সোমেশ্বরীর তীব্র ভাঙ্গনে অসহায় নেত্রকোণার দুর্গাপুরের বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা। ইতোমধ্যে পৌর শহরের শিবগঞ্জ, ডাকুমারা ও কুল্লাগড়া ইউনিয়নের বারইকান্দি, ভূলিপাড়া, কামারখালী, বহেড়াতলী, রানীখং সহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র নদী ভাঙ্গন। গত কয়েক বছরে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে প্রায় শতাধিক বাড়িঘর। প্রতিদিনই ভাঙ্গন থেকে বাঁচতে নিজেরাই বাড়িঘর ভেঙ্গে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন এখানকার বাসিন্দারা।
বিগত বছরগুলো থেকে এবছর সোমেশ্বরীর ভাঙ্গন দশা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। তার সাথে প্রতিদিনই পাহাড়ী ঢলে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রভাব পড়েছে শহর রক্ষা বেরিবাধঁ সহ নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে। বাড়ীঘর, গাছপালা। নতুন করে ভাঙ্গন আতঙ্কে দিন পার করছে এখানকার হাজারো পরিবার। আশপাশের ঐতিহ্যবাহী ইসলামপুর জামে মসজিদ, ঈদগাঁ, লোকনাথ মন্দির, কুল্লাগড়া শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ আশ্রম, প্রাচীন কালী মন্দির, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ প্রায় কয়েক হাজার বাড়িঘর পড়েছে হুমকির মুখে। যেকোনো সময় এলাকার এইসব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও নদীগর্ভে বিলীন হয়েযেতে পারে।
স্বাধীনতার পর থেকেই এখন পর্যন্ত নদী ভাঙ্গন রোধে এসব এলাকায় করা হয়নি স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা। ১৯৯১ সাল থেকে এ অঞ্চলে শুরু হয় নদী ভাঙ্গনের তীব্রতা। গেলো ৩০ বছরে এইসব এলাকার হাজারো মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন নতুন ঠিকানায়।
এই দিকে গতবছর সোমেশ্বরী নদীর তীব্র ভাঙ্গন থেকে রক্ষায় স্থানীয় সংসদ সদস্য বিজয়পুর, কামারখালী, বারইকান্দি অংশে মোট ৩৫০ মিটার অস্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন। প্রায় ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই বেড়িবাধঁ বছর ঘুরতে না ঘুরতেই অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এই বেরিবাধেঁও ভাঙ্গন শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের আরো অভিযোগ নদী থেকে যত্রতত্র অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলেই প্রভাব পড়ছে নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে। বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থানা আইন ২০১০ এ ৪ এর খ ধারায় নদীর তীরবর্তী বেড়িবাঁধ ও আবাসিক এলাকা হতে অন্তত এক কিলোমিটার দূর থেকে বালু উত্তোলনের বিধান থাকলেও তা মানছেন না ইজারাদাররা। উল্টো যে যার মতো করে তীরের কাছ থেকে বাংলা ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করায় বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বাড়ার সাথে সাথে শুরু হয় তীব্র ভাঙ্গন। এরই প্রভাবে কামারখালী বাজারের দক্ষিণ পাশে প্রায় দেড়শ বছর পুরনো ঐতিহ্যবাহী বটগাছটি ভেঙে পড়েছে নদীগর্ভে।
কামারখালী গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা বারেন্দ্র দ্রং জানায়, আমি প্রায় ৫০ বছর ধরে এ অঞ্চলে বসবাস করছি কিন্তু আমার এই ৫০ বছরে এরকম নদী ভাঙ্গন কোনদিন দেখি নাই। এবছর যেভাবে নদী ভাঙ্গছে হয়তো এই জায়গা দিয়ে নতুন আরেকটি নদীই সৃষ্টি হতে পারে। ইতোমধ্যে অনেক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আর কামারখালী বাজারের পশ্চিম পাশে ঐতিহ্যবাহী একটি বটবৃক্ষ ছিল। এটাও আজ নদীগর্ভে ভেঙে পড়েছে। এই এলাকা বাঙালি আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা। আমরা দীর্ঘদিন ধরে একত্রে বসবাস করে আসছি কিন্তু যেভাবে নদী ভাঙ্গন শুরু হয়েছে মনে হয় না বেশিদিন এলাকায় বসবাস করতে পারব। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের বিনীত আবেদন এলাকায় স্থায়ী একটি বেরিবাধ করে আমাদের নতুন করে বাঁচার সুযোগ করে দিবেন।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান জানায়, সোমেশ্বরী নদীর দু'পাড় রক্ষায় ইতোমধ্যে একটি কারিগরি টিম কাজ করছে। টিমের প্রতিবেদন হাতে আসা মাত্রই নদী ভাঙ্গন রোধে যা যা করণীয় আমরা তার ব্যবস্থা করবো। তবে এই গুলো একটু সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। বেড়িবাঁধ নির্মাণ সাধারণত দ্রুতগতিতে হয় না। এগুলো জন্য কয়েকটি ধাপ পাড় হয়ে যেতে হয়।
স্থানীয় সংসদ সদস্য মানু মজুমদার এমপি জানান, সোমেশ্বরী নদীর ভাঙ্গন রোধে ইতোমধ্যে একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। আশাকরি দ্রুতই এটি বাস্তবায়ন হবে। আর বর্ষার এই মৌসুমে নদী ভাঙ্গন রোধে বেশ কয়েকটি অস্থায়ী বেড়িবাঁধের প্রকল্প আমরা হাতে নিয়েছি এর কার্যক্রম চলমান।