বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটরা ইউনিয়নের মাটিহাঁস গ্রাম। সেই গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ কৃষিজীবী। জমিতে ধানের পাশাপাশি কেউ কেউ জড়িয়েছেন সবজি চাষে। তাঁদের মধ্যে ব্যতিক্রম একজন শিক্ষক আজিজুর রহমান। তিনি হেঁটেছেন ভিন্ন পথে। চাষ করছেন ড্রাগন ফলের। এখানেই শেষ নয়, তাঁর ড্রাগন পথ দেখাচ্ছে অন্যদের। তাঁর দেখাদেখি ড্রাগন ফল চাষ শুরু করেছেন অনেকে।
ড্রাগন ফলের বাগান ঘুরে দেখা গেছে, পাঁচ ফুট উচ্চতার খুঁটি পেঁচিয়ে উঠেছে ড্রাগন ফলের গাছ। গাছে গাছে ঝুলছে চার থেকে পাঁচটি করে কাঁচা-আধা পাকা ড্রাগন ফল। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসে ড্রাগনের চাষপদ্ধতি জেনে নিচ্ছেন।
কুমিড়া পন্ডিতপুকুর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আজিজুর রহমান। বাগানে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, মাটিহাঁস গ্রামে নিজের তিনবিঘা জায়গাজুড়ে তিনি ২০১৮ সালে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেন। নাটোর জেলা থেকে প্রথমে ৬০ টাকা করে ১০ টি ড্রাগন ফল গাছের চারা কিনে রোপন করেন। পরবর্তী সময়ে বাগানে যুক্ত করা হয় আরও ৫০টি চারা। চারা রোপণের এক বছরের মাথায় গাছে ফল আসে। ওই একই জমিতে সাথী ফসল হিসেবে রয়েছে ৬০টি থাই পেয়ারা, ৬৫টি আম গাছ ও ১৫০টি লিচু গাছ। প্রায় প্রতিটি গাছে ড্রাগন ফল ধরেছে। ফল বিক্রি করে ৪০-৫০ হাজার টাকা পাওয়া যাবে। বর্তমানে প্রতি কেজি ড্রাগন ফল বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়।
কৃষি বিভাগ জানায়, সব ধরনের মাটিতে ড্রাগন চাষ হয়। তবে উঁচু জমিতে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তিন মিটার পরপর গর্ত করে চারা রোপণ করতে হয়। বছরের যে কোনো সময় চারা রোপণ করা যায়। তবে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে হলে ভালো। সিমেন্ট অথবা বাঁশের খুঁটিতে গাছ বেঁধে দিতে হয়। গাছে ফুল আসার ২০-২৫ দিনের মধ্যে ফল ধরে। প্রতিটি ফলের ওজন হয় ২০০-৬০০ গ্রাম। পরিপক্ব একটি গাছে সর্বোচ্চ ৮০টি ফল পাওয়া যায়। ছাদবাগানের টবেও ড্রাগন ফল উৎপাদন করা যায়।
শিক্ষক আজিজুর রহমান বলেন, একটি গাছ পরিপক্ব হতে দুই থেকে তিন বছর সময় লাগে। পরিপক্ব গাছে ২৫ থেকে ৭০টি ড্রাগন ফল ধরে। পরীক্ষামূলক চাষে সাফল্য আসায় তিনি ড্রাগন ফলের চাষ আরও বাড়াচ্ছেন। বাজারে ড্রাগন ফলের চাহিদাও অনেক। ‘বাজারে এ ফলের চাহিদা এবং দাম দুটোই রয়েছে। তবে সাধারণ মানুষের কাছে আরও পরিচিত করে তুলতে আমি কম দামেই বিক্রি করছি। ফলটি বেশ রসালো ও সুস্বাদু হয়। ফলে আমার ড্রাগন ফল যিনি একবার খেয়েছেন তিনি আবারও ফোন করে অর্ডার করছেন। আগ্রহীরা যে কেউ সহজেই দেশের মাটিতে বিদেশি ফল ড্রাগন চাষে সফলতা অর্জন করতে পারেন।
এদিকে উপজেলার সিংজানি গ্রামের নার্সারী ব্যবসায়ী আবদুল হালিম ১৩০ টি ড্রাগন গাছের চারা রোপন করেছেন। এখন কয়েকটি গাছে ফুল এসেছে। ফুল আসার ২০-২৫ দিনের মধ্যে ফল ধরে। তিনি বলেন, ড্রাগন চাষে ঝুঁকি কম, ফলের দামও বেশি দেখে অনেকে উৎসাহিত হচ্ছেন।
জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আদনান বাবু বলেন, বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া ড্রাগন চাষের উপযোগী। চার প্রকারের ড্রাগনের মধ্যে বাণিজ্যিক চাষের জন্য বাউ-ড্রাগন-১ (সাদা) ও বাউ-ড্রাগন-২ (লাল) উপযোগী। ড্রাগন চাষের সফলতা পাওয়া যাচ্ছে। শিক্ষক আজিজুর রহমানের দেখাদেখি অনেকে ড্রাগন চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন। বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষ করা বিষয়ে কৃষি বিভাগ চাষিদের উৎসাহিত করছে।