দেবহাটা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মদন মোহন পালের বিরুদ্ধে দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগটি দায়ের করেছেন উপজেলার বসন্তপুর মুক্তিযোদ্ধা মৃত বাহাদুর সরদারের ছেলে উপজেলা শ্রমিকলীগের সহ-সভাপতি মনিরুল ইসলাম। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টি তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে জানিয়েছেন। লিখিত অভিযোগ মতে, দেবহাটা সরকারী বিবিএমপি ইনষ্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক মদনমোহন পাল একজন চিহ্নিত অর্থ আত্মসাৎকারী, দূর্নীতিগ্রস্থ ও মাদকসেবীদের আশ্রয়দাতা। তিনি প্রতিষ্টানে আসা অভিভাবকদের সাথে অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করেন। প্রধান শিক্ষক মদন মোহন পাল দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদেরকে আয় ব্যয়ের হিসাব কখনো প্রদর্শণ না করে বিভিন্ন নকল ও ভূয়া ভাউচার এর মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে চলেছেন। কোন শিক্ষক হিসাব চাইলে স্থানীয় বিভিন্ন ব্যাক্তি দ্বারা সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন হয়রানীমূলক দরখাস্ত করান। তিনি সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিধিমালা লঙ্ঘন করে (১) তিনি সকল শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে কোন সরকারি নিয়ম মানেন না। ভর্তি কমিটির সম্মানিত সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সদস্য মাধ্যমিক শিক্ষা, সদস্য উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে না জানিয়ে সারাবছরই সকল শ্রেণিতে ভর্তির কাজ বহাল রেখেছেন। অদ্যাবধি ০৩ বছর ভর্তি হতে আয়কৃত সমূদয় টাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়কে দেওয়ার নাম করে শিক্ষকদের খাতা মূল্যায়নের টাকা পর্যন্ত দেননি। (২) এসএসসি ও জেএসসি পরিক্ষার সময় যে আয় ব্যয় বাজেট সম্মানিত উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে উপস্থাপন করা হয় তা শুধু নামমাত্র বলে শোনা যায়। প্রকৃত পক্ষে কক্ষ পরিদর্শক সম্মানি বাবদ ঐ বাজেটে যা টাকা উল্লেখ আছে তা প্রদান রেজিষ্টারে সেটা সম্পূর্ণ আলাদা। পোষ্ট অফিসের খাতা পাঠানো ভাউচার, অন্যান্য ব্যয় ভাউচার বিগত দশ বছর পরিক্ষা করলে প্রতিবারই তা প্রমান মিলবে বলে অনেকে জানিয়েছেন। (৩) প্রাক্তন সভাপতিকে দিয়ে শিক্ষকদেরকে জব্দ করার জন্য ওই সভাপতিকে প্রতি মাসে পুকুরে মাছের খাদ্য, মিষ্টি, রাজনৈতিক চাঁদার নামে হাজার হাজার টাকার ভূয়া ভাউচার আছে। এমনকি কমিটির বিনা অনুমতিতে ব্যক্তিগত সুবিধা নিতে স্কুলের চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ, মূলবান কাঠ, বাথরূমের কমোড, ইজি চেয়ার এমনকি নাম মাত্র ২০০ টাকা বাকি ভাড়ায় স্কুলের দোকানকে ব্যক্তিগত বাড়ি হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছেন। (৪) তিনি কখনই শিক্ষকদের কাছে স্কুলের আয় ব্যয় হিসাব দেন না বলে অনেক শিক্ষক আলোচনা করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়কে ভুল বুঝিয়ে প্রতিবারই পিছনের ব্যয়ের ভাউচার প্রদর্শন না করে নতুন খরচের জন্য টাকার অনুমোদন নেন এবং ঐ চেকের টাকা উত্তোলন করে হাজার হাজার টাকা আত্মসাৎ করে চলেছেন। তদন্তে প্রমান মিলবে বলে এলাকাবাসী মনে করেন। (৫) বাংলাদেশের জনবল কাঠামোয় বেসরকারি আমলে কোন নৈশ প্রহরীর পদ না থাকা সত্ত্বেও মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে শিক্ষকদের শায়েস্তা করার জন্য এবং সভাপতির অনৈতিক হীন উদ্দেশ্য সফলে স্থানীয় অস্ত্র মামলার আসামি মাদক ব্যবসায়ীকে নৈশ্য প্রহরী পদে নিয়োগ দিয়েছেন। কোন শিক্ষক প্রতিবাদ করলে নৈশ প্রহরী ঐ শিক্ষককে মারতে উদ্ধত হয়। এ ব্যাপারে সকল শিক্ষক কর্মচারী প্রধান শিক্ষকের নিকট অভিযোগ করেছেন বলে জানা যায়। শিক্ষক পরিষদের রেজুলেশন খাতা নিরীক্ষা করলে প্রমান পাওয়া যাবে। (৬) কোন পদ না থাকলেও এমনকি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বাংলাদেশ, ঢাকা কর্তৃক বাতিলকৃত (স্মারক নং- ৪জি-৫০২-ম/১১/৯২৬০/৩ তারিখ ০৭/০৯/২০১৫) শাখা পদে পদত্যাগকৃত সদস্যদের নিয়ে কমিটির মেয়াদের শেষ দিনে ৫,০০,০০০/- (পাঁচ লক্ষ) টাকার বিনিময়ে নিজ প্রতিষ্ঠানের ক্লার্ককে ঠকিয়ে ঐ বাতিলকৃত শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। স্কুলে বর্তমানে চলমান ওয়াইফাই লাইন, আইসিটি ল্যাব, সাংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের সংগীত শিক্ষা প্রোগ্রামে ভুয়া বিল ভাউচারে (জনৈক গানের শিক্ষক গৌর চন্দ্র, সুজিত, অন্তর তরফদার, আবদুল আজিজের নাম মাত্র টাকা দিয়ে) লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করছেন বলে কথিত নৈশ প্রহরী বাজারে প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছে। (৭) তঞ্চকতার কারণে সরকারের আত্মীকরণ তালিকা থেকে জণপ্রশাসন মন্ত্রনালয় প্রধান শিক্ষকের নাম বাদ দিয়েছে বলে উপজেলাব্যাপি প্রচার আছে। শিক্ষকদের মধ্যে কলহ সৃষ্টি করে এলাকার চিহ্নিত গাঁজা সেবনকারীদের নিয়ে শিক্ষকদের ভয় দেখানোর জন্য মাঝে মাঝে বৈঠক করেন। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে বিগত ম্যানেজিং কমিটির সদস্যগণ জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে অভিযোগ করলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয় অভিযোগের তদন্ত করেন। স্মারক নং- উনিঅ/দেব/সাত/১-৪৩/৯১৪-৮২৬ তারিখ: ০৪/০৯/২০১৪। তার বিরুদ্ধে আটটি অভিযোগ প্রমানিত হয়। বিশেষ করে অর্থ আত্মসাৎ, রেজুলেশন খাতার পাতা কেটে নতুন পাতা যোগ করা, স্কুলের নামে ২ টন চাল তুলে আত্মসাৎ করা, শিক্ষকদের মধ্যে ফ্যাসাদ সৃষ্টিসহ আরও অভিযোগ আছে। স্কুলের প্রসংশা পত্র, সনদপত্র বিতরণ, নতুন নতুন ভর্তি, প্রবেশপত্র ইত্যাদি প্রদানকালে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে অবৈধ অর্থ নিয়ে গত দশ বছরে কয়েক লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ বিষয়গুলো উল্লেখ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মনিরুল ইসলাম সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এধরনের অনিয়ম দূর্নীতির সুষ্টু বিচার দাবী করেছেন।