নির্বাচন কমিশন (ইসি) নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নেবে না। সেই প্রেক্ষিতে আগামী সপ্তাহেই ইসি জাতীয় সংসদের দুটি আসনের উপনির্বাচনের তফসিল নির্ধারণ করতে যাচ্ছে। পাশাপাশি শূন্য থাকা অন্য তিন সংসদীয় আসনের নির্বাচনও দ্রুত অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত জানাতে পারে। সেজন্য ক্ষমতাসীন দলও সব শূন্য আসনের জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের কাছে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে। তাছাড়া সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা না থাকলেও অক্টোবর থেকে ইসি স্থানীয় সরকারের ৩০০টির বেশি নির্বাচন শুরু করতে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, করোনা ভাইরাসের কারণে গত ২১ মার্চ দেশে সব ধরনের নির্বাচন স্থগিত করা হয়। ইসি জানিয়েছিল করোনা ভাইরাসের প্রকোপ থাকা পর্যন্ত ওই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। নির্বাচন কমিশনের ওই স্থগিতাদেশের কারণে সব প্রস্তুতি নিয়েও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। গত ২৯ মার্চ ওই নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। একই দিনে বগুড়া-১ ও যশোর-৬ আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠানেরও তারিখ নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ওই দুটি নির্বাচনও স্থগিত করা হয়। কিন্তু ইসির এমন সিদ্ধান্তের ব্যাপক সমালোচনার মুখেও কমিশন ঢাকা-১০, বাগেরহাট-৪ ও গাইবান্ধা-৩ আসনের উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ করে। বগুড়া-১ ও যশোর-৬ আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠানে সাধারণভাবে সংবিধান নির্ধারিত ৯০ দিনের সময়সীমা গত এপ্রিলেই শেষ হয়ে যায়। এমন অবস্থায় নির্বাচন কমিশন সংবিধানের ১২৩-এর ৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে দৈবদুর্বিপাকের কারণে ওই দুই নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আরো ৯০ দিন সময় নেয় এবং সময় বাড়ানোর আর কোনো উপায় না থাকায় গত ১৪ জুলাই ওই দুই আসনের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ সম্পন্ন করে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে জাতীয় সংসদের ৫টি আসন শূন্য রয়েছে। গত ২ এপ্রিল সাবেক ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর মৃত্যুত পাবনা-৪ (আটঘরিয়া-ঈশ্বরদী) আসন শূন্য হয়। গত ৬ মে আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান মোল্লার মৃত্যুতে শূন্য হয় ঢাকা-৫ (ডেমরা-দনিয়া-মাতুয়াইল) আসন। ১৩ জুন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে শূন্য হয় সিরাজগঞ্জ-১ (কাজিপুর) আসন। সর্বশেষ গত ১০ জুলাই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে শূন্য হয় ঢাকা-১৮ (উত্তরা) আসন। ইতিমধ্যে ঢাকা-৫ ও পাবনা-৪ আসনের উপনির্বাচনের সাধারণ সময়সীমা পার হয়ে গেছে। ওই দুই আসনের নির্বাচনের জন্য বর্তমানে কমিশনের হাতে আছে দৈবদুর্বিপাকের বর্ধিত ৯০ দিন; যা যথাক্রমে আগামী ১ নভেম্বর এবং ২৮ সেপ্টেম্বর শেষ হবে। আর ঢাকা-১৮ আসনের নির্বাচনের জন্য কমিশনের হাতে সাধারণ সময় আছে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। এমন অবস্থায় নির্বাচন কমিশন ঢাকা-৫ আসন বাদ রেখেই আগামী রোববার ঢাকা-১৮ ও পাবনা-৪ আসনের উপনির্বাচনের তফসিল নির্ধারণ করতে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদের শূন্য ৫টি আসনেরই মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে।
সূত্র আরো জানায়, চট্টগ্রাম সিটি ছাড়াও করোনার কারণে স্থানীয় সরকারের স্থগিত ১১৫টি নির্বাচন এবং অপসারণ, পদত্যাগ, মৃত্যু ও মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে নির্বাচন উপযোগী ১৮৭টি জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন আসছে অক্টোবর থেকেই শুরু হবে। সেক্ষত্রে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন বিলম্বিত করা হবে না। বরং যথাসাধ্য স্বাস্থ্যবিধি মেনেই নির্বাচন অনুষ্ঠান হবে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর জানান, ইসির সর্বশেষ সভায় সিদ্ধান্ত হয় আগামী অক্টোবর মাস থেকে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন শুরু করা হবে আর নভেম্বর থেকে জাতীয় সংসদের শূন্য আসনগুলোর নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে। ওসব নির্বাচনের জন্য আর সময় ক্ষেপণ করা হবে না। তার আগেই সম্পন্ন করা হবে ঢাকা-১৮ ও পাবনা-৪ আসনের নির্বাচন। আর চট্টগ্রাম সিটির নির্বাচন এমন সময় করা হবে যাতে ওই সিটির প্রশাসকের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরপরই নির্বাচিত নতুন মেয়র দায়িত্ব নিতে পারেন।