রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার কার্যক্রম চালাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। কিন্তু সাধারণ মানুষ তাতে আশানুরূপ সাড়া দিচ্ছে না। গত মে মাস থেকে বিনামূলে ডেঙ্গু পরীক্ষা শুরু হলেও নির্ধারিত স্বাস্থ্যকেন্দগুলোতেও লোকজন কম যাচ্ছে। ডিএনসিসির ৪০টি স্বাস্থ্যকেন্দে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। তাছাড়া ৮ আগস্ট থেকে ওয়ার্ডভিত্তিক বিশেষ কর্মসূচির মাধ্যমেও বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হচ্ছে। ডিএনসিসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই ডেঙ্গু পরীক্ষা সহজ করতে বিশেষ কর্মসূচি নেয়া হয়। গত বছর আগস্টে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল ৫০ হাজারের বেশি মানুষ। সেজন্য এ বছর আগস্টকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে মাসব্যাপী পরীক্ষা কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। গত ১১ মে থেকে ৪০টি নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও মাতৃসদনে ডেঙ্গু শনাক্তের এনএস১ পরীক্ষা করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিনামূল্যে ডেঙ্গুর আইজিজি ও আইজিএম পরীক্ষাও করা হচ্ছে। কিন্তু পরীক্ষা করতে আসা লোকজনের সংখ্যা খুবই কম। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষ কর্মসূচির মাধ্যমে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর বাইরেও বিনামূল্যে এলাকাভিত্তিক পরীক্ষা শুরু করা হয়েছে। ৮ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া ওই কর্মসূচিতেও আশানুরূপ সাড়া মিলছে না।
সূত্র জানায়, জ্বরের রোগীদের করোনা নিয়ে আতঙ্ক আছে। এমন পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে লোকজন আগ্রহী হচ্ছে না। ফলে ডিএনসিসির বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার কেন্দ্রগুলোতে কোনো কোনো দিন কারোর ডেঙ্গু পরীক্ষা না করার ঘটনাও ঘটছে। আবার কোনো কোনো হয়তো এক’দু জন ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে আসে। ধারণা করা হচ্ছে করোনা প্রার্দুভাবে সচেুনতার কারণে গত বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গু রোগী নেই বললেই চলে। তারপরও লোকজন যাতে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে আসে সেজন্য প্রচারপত্র বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু তারপরও লোকজন আসছে না।
সূত্র আরো জানায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু শনাক্তের সব ধরনের পরীক্ষার সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও রোগনির্ণয় কেন্দ্রে ডেঙ্গুর মূল পরীক্ষা এনএসওয়ানের জন্য সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা এবং আইজিজি ও আইজিএম- এ দুটি পরীক্ষার মূল্য ৫০০ টাকা। আর ডিএনসিসি ওসব পরীক্ষা বিনা মূল্যে করছে। যদিও ডেঙ্গু পরীক্ষা করা সিটি করপোরেশনের মূল কাজ নয়। সংস্থাটির মূল কাজ হচ্ছে ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে পরিকল্পিতভাবে কাজ করা। মশা জরিপে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত এলাকাগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে মশকনিধন কার্যক্রম চালানো।
এদিকে গণমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী বিগত ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৩০০ লোক প্রাণ হারিয়েছে। তবে সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ১৭৯ জন। গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা এর আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গিয়েছিল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে ২০১৯ সালে সারা দেশে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। তার মধ্যে শুধু আগস্টেই আক্রান্ত হয় ৫২ হাজার ৬৩৬ জন। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্যানুযায়ী চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গত মঙ্গল পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে মাত্র ৩৯৩ জন। তাদের প্রায় সবাই চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। আর গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মাত্র ১৩ ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি ছিল।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান জানান, করোনার কারণে অনেকে হাসপাতালে যেতে চাইছেন না। আবার অনেকে বলছেন ডেঙ্গু আছে কিন্তু পরীক্ষা না হওয়ায় রোগী শনাক্ত হচ্ছে না। তাই মাসব্যাপী কর্মসূচির মাধ্যমে ডেঙ্গুর প্রকৃত চিত্র বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে।