রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার গোদাগাড়ী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আবদুর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয় রাজশাহী কর্তৃক চার্জশীট প্রদান করা হয়েছে।
চার্জশীটে আসামি আবদুর রহমানের বিরুদ্ধে ক্রোকী পরোয়ানা ও হুলিয়ানামা জারির জন্য বিজ্ঞআদালতে প্রার্থনা জানানো হয়েছে।
আব্দুর রহমান অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে কলেজ পরিচালনাসহ ঘুষ, দুর্নতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়ে পড়েন। এরূপ অবস্থায় কলেজের উপাধ্যক্ষ উমরুল হক অধ্যক্ষ আবদুর রহমানের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ সিনিয়র স্পেশাল ট্রইবুনাল ও দায়রা জজ রাজশাহী আদালতে মামলা করেন। মামলা নং ৭/২০১৮। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে দুদক রাজশাহী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপর তদন্ত ভার অর্পণ করেন। রাজশাহী জেলা দুদকের সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মোঃ আলমগীর হোসেন মামলাটি তদন্ত করেন
অধ্যক্ষ আবদুর রহমান নিজ শ্যালক সেলিম হাসানকে অন্যত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত থাকলেও গোদাগাড়ী কলেজেও তার পূর্বের যোগদান বহাল রাখেন এবং তাকে সরকারি কলেজের শিক্ষক করার মানসে সেলিম হাসানের কাগজপত্র ডিজিতে প্রেরণ করেন।
এছাড়াও কলেজের অর্থ তিনি নিজ নামীয় একাউন্টে রেখে কোন নমিনী ছাড়াই লেনদেন করতে থাকেন।
তদন্ত কালে আবদুর রহমান রাকাব গোদাগাড়ী শাখা এবং অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড গোদাগাড়ী শাখায় কলেজকে নমিনী করেন। পরবর্তিতে তার স্ত্রী নাহিদা সুলতানাকে নমিনী করা হয়। এদুটো অ্যাকাউন্ট থেকে ৭২ লক্ষ ৪২ হাজার ৭৩০ টাকা উত্তোলন করে আবদুর রহমান আত্মসাৎ করেছেন।
অধ্যক্ষ আবদুর রহমান মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক তারেক আজিজকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য ৯ লক্ষ টাকা দাবি করেন। যার মধ্যে তারেক আজিজ ৬ লক্ষ টাকা চেকের মাধ্যমে প্রদান করেন এবং অবশিষ্ট ৩ লক্ষ টাকার চেক সোনালী ব্যাংক লিমিটেড আড়ানী শাখার চেক প্রদান করেন। ফলে দুদকের তদন্তে তার ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে।
এছাড়াও বাংলা বিভাগের প্রভাষক মনিরুল ইসলামের নিকট হতে ৮ লক্ষ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছেন মর্মে মনিরুল ইসলাম ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬১ ধারায় দুদকের নিকট জবাব বন্দি প্রদান করেছেন।
দুদক রাজশাহী সমন্বিত কার্যালয় বিভিন্ন নথিপত্র পর্যালোচনা এবং তদন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে এবং তথ্য সংগ্রহ করে ৪২০/৪০৯/ ১৬১/৫১১ ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫ (২) ধারায় শস্তিযোগ্য অপরাধ বিবেচনা করে বিজ্ঞ আদালতে গত ২২ মার্চ ২০২০ ইং তারিখে চার্জশীট প্রদান করেন।
অধ্যক্ষ আবদুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী শক্তি। কারণ হিসেবে বলা যায়, গোদাগাড়ী উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভাষা শহিদদের স্মৃতি স্মারক শহিদ মিনার নির্মিত হলেও সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরীর ঐকান্তিক ইচ্ছে থাকা সত্বেও অধ্যক্ষের অনাগ্রহের কারণে কলেজে শহিদ মিনার নির্মিত হয়নি।
সর্বশেষ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের রাজশাহী বিভাগীয় অফিসের উপ-পরিচালক আবদুর রহমানকে গোদাগাড়ী সরকারি কলেজ চত্বরে ১৫ দিনের মধ্যে শহিদ মিনার নির্মানের নির্দেশ প্রদান করেন। কলেজের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল সভায় শহিদ মিনার নির্মানের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এবং গোদাগাড়ী সদরের একজন ব্যক্তিকে দিয়ে শহিদ মিনারের ডিজাইন করানো হয়। কিন্তু স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের হোতা আবদুর রহমানের একগুয়েমী মনোভাবের কারণে আজও কলেজ চত্ত্বরে শহিদ মিনার নির্মিত হয় নি।