চারঘাট পৌরসভার অধিকাংশ এলাকায় পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পৌরসভার অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও ব্রীজ কালভার্ট গুলো ভরাটের কারণে ঠিকমতো পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ফলে পৌর এলাকার পাড়ায় পাড়ায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টিতেই চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে পৌরবাসীকে।
চারঘাট পৌরসভা ও পৌর এলাকার প্রবীণ কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১ম শ্রেনীতে উত্তীর্ন হয়েছে চারঘাট পৌরসভা। পৌরবাসির সার্বিক সুযোগসুবিধা এবং অবকাঠমোর উন্নয়নে প্রায় ১৫২ কোটি টাকা প্রস্তবনা আছে। ইউজিআইআইপি-৩ এর প্রায় ৩৪ কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে। তবে পৌর কতৃপক্ষের অবহেলায় এই কাজ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। অপরিকল্পিত, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট, জলাবদ্ধতা, নিম্ন মানের উপকরণ ব্যবহার ও নদী দখল করে চলছে পৌরসভার উন্নয়ন কাজ।
আরো জানা যায়, চারঘাট পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় অপরিকল্পিত ভাবে ড্রেনগুলো নির্মান করা হয়েছে। পৌরবাসী ও সচেতন মহল বার বার অপরিকল্পিত কাজের প্রতিবাদ করলেও পৌর কতৃপক্ষ কোনো কর্ণপাত করেনি। ফলে প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা হওয়া সত্ত্বেও চারঘাট পৌরবাসীর ভাগ্যে জুটেছে জলাবদ্ধতা।
পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় কিছু বড় পুকুর ও মাঠ ছিল। বৃষ্টি হলে ব্রীজ কালভার্ট দিয়ে মহল্লার পানি এসব পুকুরে ও মাঠে চলে যেত। ড্রেন দিয়ে চারঘাট সদরের বিভিন্ন এলাকার পানি বড়াল নদীতে যেত। দখলের কারণে সরু হয়ে গেছে বড়াল নদী। পৌরসভা নিজেই বড়াল নদী দখল করে বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করেছে। ময়লা-আবর্জনা জমে ড্রেন দিয়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ রয়েছে। অধিকাংশ ব্রীজ কালভার্টের মুখগুলো ভরাট করে বাড়ি তৈরি করা হয়েছে। ফলে ঠিকমতো পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। এতে পৌর এলাকার অধিকাংশ পাড়া-মহল্লা দীর্ঘ সময় ধরে জলাবদ্ধতা থাকছে।
সোমবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, একটু বৃষ্টিতেই চারঘাট সদরসহ পুরো পৌর এলাকা জুড়ে নাজেহাল অবস্থা। চারঘাট মেডিকেল মোড়, মেডিকেল মোড় থেকে বাবুপাড়া রোড, উপজেলা থেকে থানা রোড, ট্রাফিক মোড় থেকে মুক্তারপুর রোড, গোপালপুর থেকে পিরোজপুর রোড, ম্ক্তুারপুর, গোপালপুর, বাবুপাড়া, পিরোজপুরসহ বেশ কিছু সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পানি আটকে আছে। পানি মাড়িয়ে বহু কষ্টে চলাচল করছে পৌরবাসী।
মহল্লার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, পৌরসভার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পর্যাপ্ত পানিনিষ্কাশনের ড্রেন রয়েছে। কিন্তু সবগুলো ড্রেনই তৈরি করা হয়েছে অপরিকল্পিত ভাবে। ড্রেনগুলো পরিষ্কারও থাকছে না। বিভিন্ন বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানের টয়লেটের লাইন করা হয়েছে ড্রেনের সাথে। ময়লা-আবর্জনায় অধিকাংশ ড্রেন আটকে আছে। ফলে পানিনিষ্কাশন ব্যাহত হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।
পৌর সদরের বাসিন্দা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম বাদশা বলেন, ‘বৃষ্টি হলে আমাদের ভোগান্তির শেষ থাকছে না। একদিকে ভাঙাচোরা রাস্তা অন্যদিকে জলাবদ্ধতা। জীবন অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে। আগে বৃষ্টি হলে আনন্দ লাগত, এখন জলাবদ্ধতার কারণে ভয় লাগে। তাই আমরা পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই। পৌরসভা উন্নয়নের টাকাগুলো অপরিকল্পিত ভাবে খরচ না করে জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পিত ভাবে পৌরসভার উন্নয়ন করুন'
এ প্রসঙ্গে চারঘাট পৌরসভার মেয়র জাকিরুল ইসলাম বিকুল বলেন, ‘ পৌরসভার নিচু এলাকাগুলোতে সামান্য জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে, এটা ঠিক। তবে আমরা এই জলাবদ্ধতা নিরসনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। জলাবদ্ধতা নিরসনের আলাদা কোনো বাজেট না থাকলেও আমরা পৌরসভার তহবিল থেকে অর্থ নিয়ে বালুসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনের চেষ্টা করছি।