বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে করোনাকালে টেস্ট বাণিজ্য ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে ওসব প্রতিষ্ঠানের যে আয় হচ্ছে তা দিয়ে স্টাফের বেতন পরিশোধ করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে ঢাকায় কিছু প্রতিষ্ঠান সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আর ঢাকার বাইরে বন্ধের পথে ৬০ ভাগ ডায়াগনস্টিক সেন্টার। স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং ভুক্তভোগী ডায়াগনস্টিক সেন্টার সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে সারা দেশে বর্তমানে ১৭ হাজার ২৪৪টি বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। চিকিৎসক, নার্সসহ ওসব প্রতিষ্ঠানে লক্ষাধিক মানুষ কর্মরত। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে রোগীশূন্য থাকায় অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ হয়ে গেছে। আর অনেক প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা ঠিকমতো বেতন পাচ্ছে না। মূলত অধিকাংশ চিকিৎসকই করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির পর থেকে পাইভেট চেম্বারে বসছে না। আর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা অনলাইনে রোগী দেখছে। তারা জরুরি প্রয়োজন না হলে রোগীদের টেস্ট লিখছে না। আবার করোনা মহামারীতে লোকজনও আর্থিক সংকটে পড়েছে। ওসব কারণেই টেস্টের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে।
সূত্র জানায়, বিগত এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই বন্ধ হয়ে গেছে মোহাম্মদপুর হুমায়ূন রোডে হেলাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। ওসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা বেতনও পায়নি। মূলত মার্চের মাঝামাঝি থেকে ওসব প্রতিষ্ঠানে রোগী আসা কমতে শুরু করে এবং এপ্রিল মাসে সেন্টারটি বন্ধ হয়ে যায়। তাছাড়া সারা দেশে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ২৫টি শাখা রয়েছে। তার মধ্যে রাজধানীতেই রয়েছে ৯টি। ওই প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শাখায় দিনে গড়ে এক থেকে দেড় হাজার টেস্ট হতো। এখন টেস্টের সংখ্যা দেড় থেকে দু’শতে নেমে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে ওই প্রতিষ্ঠানটি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একইভাবে রাজধানীর আরেক ডায়াগনস্টিক সেন্টার মেডিনোভাতেও করোনার কারণে টেস্টের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। প্রতিদিন গড়ে যেখানে এক হাজার টেস্ট হতো, এখন সেখানে টেস্ট প্রায় নেই বললেই চলে। একই অবস্থা কমফোর্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারেরও।
সূত্র আরো জানায়, রোগী ও টেস্টশূন্য হয়ে পড়ায় ঢাকার বাইরে ৬০ ভাগ ডাগায়গনস্টি প্রতিষ্ঠানই বন্ধের পথে। ঢাকায়ও বেশকিছু ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া ছোট ছোট কয়েকটি হাসপাতালও সেবা দেয়া বন্ধ রেখেছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রাইভেট হসপিটাল, ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিসিডিওএ) অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ১০ হাজারেরও বেশি। বর্তমানে আর্থিক সংকটে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের একটা বড় অংশ সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। আয় না থাকায় ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকদের পকেট থেকে কর্মীদের বেতন দিতে হচ্ছে। ওই প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচাতে সরকারের প্রণোদনা প্রয়োজন। সরকারের কাছে প্রণোদনা চাওয়া হয়েছে কিন্তু কোনো আশ্বাস পাওয়া যাচ্ছে না।