বৃদ্ধা সামছুন্নাহার। বয়স ৫৫ বছর। বাড়ি সরাইল উপজেলার কাটানিশার গ্রামে। স্বামী আলী আহাম্মদ। আর্থিক অবস্থাও খারাপ। দুটি চোখই সমস্যা করছে। দেখেনও ঝাঁপসা। চোখের ডাক্তার দেখাবেন। ডাক্তার দেখাতে গিয়ে পড়েন বিপাকে। সামছুন্নাহার জানান, গত রোববার সকালে জেলা সদর হাসপাতালের উদ্যেশ্যে রওনা দেন। পৌর শহরের মেড্ডায় গিয়ে রিকশা চালককে হাসপাতালে যাওয়ার কথা বলেন। চালক খুবই খুশি হন। বলেন সদর হাসপাতাল আজ বন্ধ। চিকিৎসা করাবেন? তিনি বললেন চোখ দেখাব। ভাল ডাক্তার আছে। টাকা আনছেন তো? গ্রামের বাসিন্ধা সামছুন্নাহার বিষয়টি বুঝতে পারেননি। হাতের টাকাও দেখালেন। স্পেশালিষ্টের কাছে নিয়ে চললেন রিকশা চালক। মুন্সেফ পাড়া (মসজিদ সংলগ্ন) পুরাতন জেলখানার পশ্চিম পাশে নামালেন। রিকশা চালক নিজেই নিয়ে গেলেন হলি ক্রিসেন্ট শিশু জেনারেল হাসপাতাল নামক প্রতিষ্ঠানে। পাঁচশত (৫০০) টাকা ভিজিট। সামছুন্নাহার ভিজিট দিলেন। চিকিৎসক চোখ দেখলেন একটি গ্লাস দিয়ে। কোন মেশিন বা চোখ দেখার যন্ত্রপাতিও নেই ওই চিকিৎসকের চেম্বারে। ইসিজি, প্র¯্রাব, কিডনি সহ মোট ৭ ধরণের নিরীক্ষা লিখে দিলেন। চার্জ চাইলেন ৩ হাজার টাকা। সামছুুন্নাহার একটু আপত্তি করলেন। দাপট খাটিয়ে ১ হাজার কমিয়ে দিলেন চিকিৎসক। প্রেসক্রিপশনেই লিখে দিলেন নিরীক্ষার চার্জ ২ হাজার টাকা। নিরীক্ষা দেখে চিকিৎসক টেবলেট, ড্রপ ও ক্যাপসুুলসহ ৮ প্রকারের ওষুধ লিখে দিলেন। ফার্মেসিও দেখিয়ে দিলেন। সব টাকা শেষ। বিব্রতকর অবস্থায় পড়লেন সামছুন্নাহার। ওষুধ ক্রয় না করেই সরাইল চলে আসলেন। প্রেসক্রিপশনে দেখা যায়, উপরে লিখা মেডিসিন, কিডনি ও শিশু রোগের চিকিৎসক। ডা: মোশাররফ হোসেন, এম,বি,বি,এস (আর ইউ), এক্স মেডিকেল কর্মকর্তা ইউনিসেফ, মেডিসিন বক্ষব্যাধি, হৃদরোগ, গেস্ট্রোলিভার ও চর্ম রোগের চিকিৎসক, ইন্টারনাল মেডিসিন ও কার্ডিওলজী (মিশর), প্রাক্তন জুনিয়র কনসালটেন্ট, অবারী সরকারি জেনা: হাসপাতাল লিবিয়া, রেজি: নং-৩৫১১৭। প্রেসক্রিপশনের কোথাও লিখা নেই উনি চোখের চিকিৎসক। তারপরও উনি কিভাবে ও কেন বৃদ্ধার চোখের ব্যবস্থাপত্র দিলেন। বিএমডিসি’র নেট সিয়ার্স দিয়ে দেখা যায়, ৩৫১১৭ রেজি: নম্বরের চিকিৎসকের নাম ডা: মোশাররফ হোসেন মাসুদ। বাবার নাম নেই। বাড়ি নরসিংদী জেলার মুসাপুর গ্রামে। প্রেসক্রিপশনের নামের সাথে রেজি: নম্বরের নামের মিল নেই ওই চিকিৎসকের। সামছুন্নাহার কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, ওই চেম্বার থেকে বের হওয়ার পরই জনৈক ব্যক্তি আমাকে বলেন রিকশা চালক চিকিৎসক ও হাসপাতালের দালাল। ফুসলিয়ে রোগী বাগিয়ে আনাই এদের কাজ। বিনিময়ে এদেরকে ওই জাতীয় চিকিৎসকরা টাকা দেয়। আপনাকে (বৃদ্ধাকে) চোখের ডাক্তার দেখেননি। যিনি দেখেছেন তিনি চিকিৎসক কিনা সন্দেহ আছে। তখন আমি বুঝতে পারি রিকশা চালক আমাকে ভুল জায়গায় এনেছে। আমার তিন বেলার আহার যোগাড় করা খুবই কষ্টের। তারা কয়েক মিনিটের মধ্যে আমার ২৫ শত টাকা খরচ করিয়ে নিল। আর ডাক্তার স্যাররা যদি এমন প্রতারণা করে আমাদের মত অজপাড়া গায়ের কম শিক্ষিত লোকজন যাব কোথায়? এ বিষয়ে জানতে রোববার বিকাল ৪টা ১৬ মিনিটে ওই হাসপাতালের (০১৭২২-১৮১০১০) নম্বরে ফোন করলে একজন মহিলা রিসিভ করেন। পরিচয় দিয়ে ডা: মোশাররফ হোসেনকে চাইলে অপেক্ষা করতে বলেন। কিছুক্ষণ পর মোশাররফ হোসেন বলছি বলে জানান। আপনি আসলে কিসের চিকিৎসা করে থাকেন? উত্তরে মোশাররফ হোসেন বলেন আমি ইন্টারনাল মেডিসিন কার্ডিওলজী চিকিৎক। আপনি কি চোখের চিকিৎসা দেন? তিনি বলেন না। আমি চোখের চিকিৎসা দিব কেন? প্রেসক্রিপশনের কথা বলতেই তিনি বলেন আমি জরূরী একটা চিকিৎসার কাজে আছি। আপনার সাথে এখন কথা বলতে পারছি না।