কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় বিয়ের প্রলোভনে পড়ে তিন বছর ধরে শিক্ষক কর্তৃক ধর্ষিত হওয়ার বিষয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে কলেজ ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় পাকুন্দিয়া থানায় মামলা রুজু হয়েছে।
গত রোববার (২৩ আগষ্ট) বিকেলে আত্মহননকারী কলেজ শিক্ষার্থী সুমাইয়ার বাবা মো. শামীম মিয়া পাকুন্দিয়া থানায় উপজেলার কালিয়াচাপড়া সুগার মিল হাইস্কুলের সাবেক খ-কালীন গণিত শিক্ষক করিমগঞ্জ উপজেলার নোয়াবাদ ইউনিয়নের পাড়া বালিয়া গ্রামের রহমত আলীর ছেলে রাসেল আহমেদকে একমাত্র আসামি করে এ মামলা দায়ের করেন।
পাকুন্দিয়া উপজেলার চ-ীপাশা ইউনিয়নের ষাইটকাহন গ্রামের শামীম আহমেদের মেয়ে এবং কিশোরগঞ্জ সরকারী মহিলা কলেজের ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের বিএসএস প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার গত শনিবার (২১ আগষ্ট) ভোরে নিজ বাড়িতে আত্মহত্যা করে।
আত্মহত্যার আগে সুমাইয়া নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে দেয়া স্ট্যাটাসে স্কুল শিক্ষক রাসেল আহম্মেদর ছবি সংযুক্ত করে তিন বছর ধরে তার বিয়ে করার প্রলোভনে পড়ে ধর্ষিত হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ করে।
সুমাইয়া ওই ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রকাশ করে, "বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিন বছর ধরে ছাত্রীকে ধর্ষণের পর অন্য মেয়েকে বিয়ে করে ছাত্রীকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা আমার প্রিয় শিক্ষক। আর সেই ভাগ্যবান ছাত্রী আমি নিজে। আল্লাহ আমায় মাফ করো। দেশে এমন শিক্ষক আর কোনো ছাত্রীর জীবনে না আসুক। সবাই আমায় মাফ করবেন। সদ্য এসএসসি পাশ করা একটা মেয়ে বিয়ে মানে এসব জানতামই না। ভদ্র স্যারকে বিশ্বাস করতাম। যা বলতো, তাই শুনতাম। যাই হোক ভাল থাক সে... বিদায়"
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, সুমাইয়ার এ স্ট্যাটাস দেখে চট্টগ্রাম প্রবাসী সুমাইয়ার চাচা বাড়িতে ফোন করে তার মাকে খোঁজ নিতে বলেন।তার মা সুমাইয়ার মা বাবাকে এ ঘটনা জানালে তারা শনিবার ভোর ৭টার দিকে দৌঁড়ে সুমাইয়ার কক্ষে গিয়ে দেখেন সুমাইয়া ও-ই কক্ষের ধর্ণার সঙ্গে ওড়না জড়িয়ে আত্মহত্যা করেছে।
মামলার এজাহার ও পরিবার সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে সুমাইয়া উপজেলার কালিয়াচাপড়া চিনিকল উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। সেই সময় জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার নোয়াবাদ গ্রামের রহমত আলীর ছেলে কালিয়া চাপড়া চিনিকল উচ্চবিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের খ-কালীন সহকারী শিক্ষক রাসেল আহমেদের কাছে প্রাইভেট পড়তো।
প্রাইভেট পড়ার সময় বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সুমাইয়ার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেন শিক্ষক রাসেল আহম্মেদ। দীর্ঘদিন ধরে এ সম্পর্ক চলে আসার সময় বিয়ের প্রলোভনে দৈহিক সম্পর্কও গড়ে তুলেন ওই শিক্ষক।
২০১৯ সালে রাসেল আহম্মেদ মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর উপজেলার বি.বি.সি. ডিগ্রি কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করার পর থেকে সুমাইয়ার সঙ্গে ভিন্ন রকম আচরণ শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত ওই শিক্ষক সুমাইয়াকে প্রতারিত করে গত ২১ আগস্ট অন্য এক মেয়েকে বিয়ে করেন।
এ ঘটনার পর প্রতারণার শিকার বিষয়টি বুঝতে পেরে কলেজছাত্রী সুমাইয়া দুঃখ-ক্ষোভ ও অভিমানে ২২ আগস্ট শনিবার ভোর ৭টার দিকে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। এদিকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে কলেজ ছাত্রীর আত্মহত্যার এ ঘটনা এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি করে। ভাইরাল হয়ে ওঠে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ওই শিক্ষকের বিচার দাবিতে স্থানীয় পুলেরঘাট বাজারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে এলাকাবাসী।
পাকুন্দিয়া থানার ওসি (তদন্ত) শ্যামল মিয়া কলেজছাত্রী সুমাইয়ার বাবা কর্তৃক গত রোববার বিকেলে শিক্ষক রাসেল আহম্মেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের কথা নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরও জানান, অভিযোগ তদন্ত করে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।