পাহাড়ের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের দাবিকৃত লক্ষ টাকার চাঁদা পরিশোধ না করায় রাঙ্গামাটি কাপ্তাই উপজেলায় মৎস্য ব্যবসায়ীদের বৃহস্পতিবার (২৭ আগষ্ট) হতে মাছ আহরণ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে পাহাড়ের আঞ্চলিক দলের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। আর হ্রদে মাছ আহরণ করতে না পেরে বিপাকে পড়েছে এশিয়ার বৃহত্তর কাপ্তাই হ্রদে সংশ্লিষ্ট খুচরা ও পাইকারি মৎস্য ব্যবসায়ী, মাঝি, শ্রমিকসহ পেশাজীবি হাজারও মানুষ।
কাপ্তাই মৎস্য ব্যবসায় সমিতির নেতা মোঃ জসিম উদ্দিন জানান, পাহাড়ের একটি সশস্ত্র গ্রুপ আমাদের কাছে ৮লক্ষ টাকার চাঁদা দাবি করে। ওই গ্রুপ ছাড়াও আরও মোট ৪টি গ্রুপ প্রায় ২০ লক্ষ টাকা চাঁদার দাবি করে। বুধবার (২৬ ই আগষ্ট) পর্যন্ত ছিল এই চাঁদা প্রদানের শেষ সময়। এই সময়ে টাকা পরিশোধ না করায় তারা বুধবার বিকেলে আমাদের জেলেদের মোবাইলের মাধ্যমে বলে দিয়েছে তোমরা আর হ্রদে জাল মারতে পারবানা না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক মাঝি বলেন, আমাদের সওদাগরদের কাছ থেকে উপরের পার্টি (সন্ত্রাসী গ্রুপ) চাঁদা দাবী করে। চাঁদা না দেওয়াই এমন অবস্থা। আমার মাধ্যমে দেড় শতাধিক শ্রমিক দেশের বিভিন্ন স্থান হতে কাপ্তাই উপজেলায় কাজ করতে এসেছে। এখন যেহেতু মাছ ধরা বন্ধ করতে হচ্ছে তাই এদের সবাইকেই বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া ছাড়া বিকল্প কোন উপায় দেখছি না।
এশিয়ার বৃহত্তম কাপ্তাই লেকে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক মে মাস হতে জুলাই এই তিন মাস মাছ আহরণ থেকে বিরত ছিল রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাইয়ের মৎস্য ব্যবসায়ীরা। অবশেষে জেলা প্রশাসন থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ায় স্বস্থি মিললেও সন্ত্রাসীদের দাবিকৃত চাঁদা যেন এখন আবার মরার উপর খাড়ার ঘাঁ বলে মনে করছেন মৎস্য ব্যবসায়ীরা।
কাপ্তাইয়ে মৎস্য ব্যবসায়ী নেতা মোঃ জসিম উদ্দিন জানান, কাপ্তাইয়ের মাছ ঢাকা, যাত্রাবাড়ি, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানী করা হয়ে থাকে। এই খাতে সরকার প্রচুর পরিমাণে রাজস্ব পেয়ে থাকে।
আরেক ব্যবসায়ী নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কাপ্তাই হ্রদে জাল থেকে মাছ সংগ্রহ থেকে শুরু করে বিপনন পর্যন্ত হাজারো লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এই মুহুর্তে চাঁদার জন্য কাপ্তাই লেকে যদি মাছ আহরণ চিরতরে বন্ধ হয় তাহলে দেশের আমিষের চাহিদায় বড় প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি কর্মসংস্থান হারাবে এই পেশায় সংশ্লিষ্ট হাজারো মানুষ। সরকার হারাবে রাজস্ব।
মৎস্য শ্রমিক মোঃ আলাউদ্দিন, নাদির মিয়া, তোফাজ্জল, জয়নাল আবেদীনসহ আরও অন্যান্য মৎস্য শ্রমিক জানান, জীবনে মাছ সংশ্লিষ্ট কাজ ছাড়া আর কোন কাজই শিখিনি। গত তিন মাস মাছ ধরা বন্ধ থাকা ও লকডাউনের প্রভাবে কষ্টে কেটেছে আমাদের দিন। এখন চাঁদার দাবীতে আবার মাছ ধরা বন্ধ করে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। আমাদের পথে বসা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
এই ব্যাপারে কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান জানান, চাঁদার দাবীতে সন্ত্রাসীরা কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর আমাকে এই বিষয়ে কেউই অবহিত করেননি।
এদিকে এই বিষয়ে কাপ্তাই সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুনায়েদ কাউছার ও কাপ্তাই থানার ওসি নাসির উদ্দীনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, এখনো পর্যন্ত এই বিষয়ে থানায় কেউ অভিযোগ দায়ের করতে আসে নাই। যদি কেউ অভিযোগ করে তা হলে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।