প্রযুক্তির উন্নয়নের সুবাদে মানব সমাজ প্রবেশ করেছে সম্পূর্ন নতুন এক জগতে। যার নাম ভার্চুয়াল জগত। বাস্তব জগতের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন সংযোগের মধ্যদিয়ে এ জগত সমৃদ্ধ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ভার্চুয়াল জগত হচ্ছে এমন এক জগত যেখানে মানুষে মানুষে সংযোগ ঘটে কম্পিউটার, মোবাইল তথা যন্ত্রের সহযোগিতায়। ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড বা ভার্চুয়াল জগত পরিভাষাটি প্রথমবার ব্যবহার করেন উইলিয়াম গিবসন। তিনি হচ্ছেন সায়েন্স ফিকশনের বিখ্যাত লেখক। ইন্টারঅ্যাকশন বা মিথস্ক্রিয়া হচ্ছে ভার্চুয়ালজগতের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। যেখানে একইসঙ্গে পরস্পরকে দেখা যায়, কথা বলা যায়, লিখে বা না লিখে ভাব প্রকাশ করা যায়। রেডিও, টিভি ও পত্রপত্রিকার মতো গণমাধ্যমে যা এত ব্যাপকভাবে সম্ভব নয়। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে কোটি কোটি মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ইমেইল ও চ্যাটরুমের মাধ্যমে ভার্চুয়াল জগতে তৎপরতা চালান।
ভার্চুয়াল জগত মানুষের সামনে এমন সব দিগন্ত খুলে দিয়েছে যা জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নয়ন এবং সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজে লাগানো সম্ভব। ভার্চুয়াল জগতের নানা ইতিবাচক দিক থাকলেও এর বিপদের মাত্রাও কম নয়। এই জগতে তৎপর সব শ্রেণির মানুষেরই বিপদে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ বাস্তব জগতের মতো ভার্চুয়াল জগতেও তৎপর রয়েছে নানা পর্যায়ের অপরাধী। যারা ভালো মানুষের ছদ্মবেশে প্রতিনিয়ত মানুষের ক্ষতি করে যাচ্ছে। কখনো হাতিয়ে নিচ্ছে মানুষের সর্বস্ব। অনেক দুষ্টু স্বভাবের পুরুষ নারীর নাম ব্যবহার করে সরল মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ধোকা দিচ্ছে। সত্যিকার অর্থেই ভার্চুয়াল জগত স্থান ও সময়ের প্রচলিত ধারণাকে পাল্টে দিচ্ছে। এক সময় যা ছিল অকল্পনীয়। এসব কারণে যোগাযোগের ধরন ও মডেলে পরিবর্তন এসেছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো মানুষের বাস্তব জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। মাঝেমধ্যেই নতুন এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিত্যনতুন অ্যাপ ছাড়া হচ্ছে। তবে এত দিন শুধু গেমের কথাই শোনা গিয়েছে। এখন আরো জটিল জটিল কিছু বিষয় চলে আসছে মানুষের সামনে।
করোনা মহামারীপরবর্তী অর্থনীতির ক্ষতি কাটাতে বহু বছর লেগে যাবে। ততদিনে দেখা যাবে এক নতুন দেশ, নতুন বিশ্ব। যার আলামত এরই মধ্যে স্পষ্ট। জীবনহানির সঙ্গে জীবিকার দুর্বিপাক মোকাবিলায় দেশে-দেশে তথ্যপ্রযুক্তি ভর করেছে। বাধ্য হয়েই তাদের এই নির্ভরতা। কেনাকাটা, চিকিৎসা, পড়াশোনা, অফিস-ব্যবসা সব কিছুতে ভার্চুয়ালনির্ভরতা এখন আঠার মতো লেপ্টে গেছে মানুষের জীবনে। তা গড়িয়েছে রাজনীতি থেকে আদালত পর্যন্ত। যদিও করোনা ভাইরাসের দৌরাত্ম্য আজ সমগ্র বিশ্বকে হতচকিত করে দিয়েছে। জীবন- জীবিকাকে করেছে ভারসাম্যহীন, অসাড় ও স্থবির। জীবনের সকল আশা-আকাংখা, চাওয়া-পাওয়া, স্বাদ-আহলাদ ও মানোন্নয়নকে করেছে আশাহত ও নি¤œগামী। শিশু-কিশোর, বড়-ছোট, তরুণ-প্রবীন তথা সর্বস্তরের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা ক্রমশ হয়ে পড়ছে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও আতংকগ্রস্ত। প্রত্যেকেরই মানসিক স্বাস্থ্য এখন ঝুকিপূর্ণ।
অফকমের নতুন একটি জরিপ অনুযায়ী যুক্তরাজ্যে ৮-১১ বছর বয়সী শিশুদের ৯৩ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। তাদের মধ্যে ৭৭ শতাংশ ইউটিউব দেখে এবং ১৮ শতাংশের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট আছে। ১২-১৫ বছর বয়সীদের ৯৯ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করে, ৮৯ শতাংশ ইউটিউব ব্যবহার করে এবং ৬৯ শতাংশের সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকাউন্ট আছে। তারা ইউটিউব ব্লগারদের ভিডিওগুলো উপভোগ করে।
ইউনিভার্সিটি অব লিভারপুলের ‘অ্যাপিটাইট অ্যান্ড ওবেসিটি রিসার্চ’ বিভাগের পিএইচডি স্টুডেন্ট অ্যানা কোয়াটেস তার গবেষণায় শিশুদের খাদ্যাভ্যাসে সোশ্যাল মিডিয়ার বিরূপ প্রভাবের বিষয়টি তুলে এনেছেন। সেখানে দেখা গেছে ব্লগারদের অনেক ভিডিওতেও স্ন্যাকস এর প্রতি আকৃষ্ট করা হয়েছে শিশুদের। ১৭৬ জন শিশুর উপর করা এই গবেষণায় বয়স সীমা ছিল ৯ থেকে ১১ বছর। তাদেরকে তিনটি গ্রুপে ভাগ করে দেয়া হয়। জনপ্রিয় কিছু ব্লগারের ইনস্টাগ্রাম পেজ কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয় তাদের জন্য। একটি গ্রুপকে দেখানো হয় অস্বাস্থ্যকর খাবারসহ ব্লগারের ছবি দেখানো হয়, আরেকটি গ্রুপকে স্বাস্থ্যকর খাবারসহ ব্লগারের ছবি দেখানো হয় এবং তৃতীয় গ্রুপকে কোনো খাবারের আইটেম ছাড়া ব্লগারের ছবি দেখানো হয়। এরপর অংশগ্রহণকারীদের স্ন্যাকস খাওয়ার পরিমাণ লক্ষ্য করা হয়। দেখা গেছে যারা অস্বাস্থ্যকর খাবারের ছবি দেখেছে, তারা অন্যদের তুলনায় ৩২ শতাংশ বেশি অস্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস গ্রহণ করেছে।
সিএনএন এর তথ্যমতে, বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী লকডাউনের স্বিকার এবং সেটি খুবই স্ট্রেসফুল। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মানসিক রোগসহ অন্যান্য অসংক্রামক ব্যাধির (নন-কমিউনিকেবল ডিজিজেস) প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রাদুর্ভাব, নগরায়ণ, আর্থসামাজিক অবস্থা, মানসিক চাপ এবং অন্যান্য শারীরবৃত্তিক ও মনোসামাজিক কারণ মানসিক রোগের প্রকোপ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। আমাদের দেশও এর ব্যতিক্রম নয়। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর শতকরা ১৬ ভাগ ও শিশু-কিশোরদের শতকরা প্রায় ২০ ভাগ এমনিতেই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগে থাকে। করোনার কারনে এর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বহু গুনে। তবে ঘরবন্ধি শিশুদের হাতে থাকা অ্যান্ড্রয়েট ফোনের ইন্টার এই সঙ্কটের মাত্রাকে বাড়িয়েছে তুলছে অতিমাত্রায়। কারণ বন্ধী জীবনে নতুন এই জগতে শিশুরা আসক্ত হয়ে পড়ছে ভয়ানক হারে।
ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচ ও) এর গবেষণা মতে দীর্ঘকাল লকডাউন স্থায়ী থাকার কারনে ছাত্র ছাত্রীদের মানসিক স্বাস্থের ওপর চরম প্রভাব পড়েছে। সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ভিশনের এক জরিপে একটি তথ্য উঠে এসেছে যে, বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রভাবে ৯১ শতাংশ শিশু মানসিক চাপে রয়েছে। এ জরিপে ১৩টি দেশের ১০১ জন শিশু ও তরুণের (৫৮ মেয়ে এবং ৪৩ ছেলে ) সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। যাদের বয়স ৮ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। দেশগুলো হল- আলবেনিয়া, বাংলাদেশ, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, ব্রাজিল, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, মালি, মঙ্গোলিয়া, নিকারাগুয়া, পেরু, ফিলিপাইন, রোমানিয়া, সিয়েরা লিওন এবং তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তে শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া সিরীয় শিশুরা। উল্লেখ্য যে, এ ভাইরাসের সংক্রমণ শিশু ও তরুণদের ওপর কেমন প্রভাব ফেলেছে- তা জানতে গত ২ মাসে উন্নয়নশীল ১৩টি দেশে একটি জরিপ পরিচালনা করে আন্তর্জাতিক শিশুকেন্দ্রিক উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন। জানা গেছে, করোনায় স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় শিশু-কিশোররা এখন ভার্চুয়াল জগতেই সময় পার করছে। চীনের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের পড়াশুনার জন্য বিরাট একটা অংশ ব্যয় করেন এবং এখনো পর্যন্ত সেখানে অনলাইন শিক্ষার প্রিমিয়ার সার্ভিস হিসেবে ভিআইপি কিডসের মতো ইংরেজি শিক্ষার সার্ভিসগুলোই জনপ্রিয়। দেশটির পুরো জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা অনলাইনকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। চীনের বিনোদন ব্যবসাও অনলাইনভিত্তিক হয়ে গেছে। নববর্ষের ঠিক আগ মুহূর্তে সিনেমা হলগুলোর পাশাপাশি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে মুভির রিলিজ। বিশেষ করে চীনের নতুন বছরের ছবি লস্ট ইন রাশিয়া এবং এন্টার দ্য ফ্যাট ড্রাগন এখন অনলাইনেই স্ট্রিমিং করে দেখছেন দেশটির নাগরিকরা। এই সময়টাতে অনলাইন ভিডিও প্ল্যাটফর্ম বিশেষ করে বাইডুর ইকি কিংবা টেনসেন্ট ভিডিওর জনপ্রিয়তা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় অনলাইন গেমস এবং টিকটকের মতো ভিডিও অ্যাপগুলোও বেশ পরিচিতি পেয়েছে। ভাইরাসের হানায় জিম কিংবা খেলাধুলা করে সময় কাটানোর সুযোগ না থাকায় লোকজন এগুলোর বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করছেন। কিভাবে বাসায় বসেই জিম করবেন এমন তথ্যদানকারী অ্যাপ কিংবা লাইভ ক্লাসে যোগদান করে ঘরে বসেই জিম বা ইউগা ব্যায়াম করার মতো বিষয়গুলোর প্রতি ঝুঁকছে মানুষ।
ভার্চুয়ালে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। ক্ষেত্র বিশেষে কারো কারো চেয়ে এগিয়ে। বদলে গেছে শহুরে লাইফস্টাইল। অনলাইনে ঘর থেকেই চলছে অফিস, বাচ্চাদের স্কুলের ক্লাস। নতুন এই জীবনে মানুষের মৌলিক চাহিদার মতো প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে একটি মোবাইল সেট আর উচ্চ গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সংযোগ। ঘরবন্দি এই সময়ে জীবনকে গতিশীল রেখেছে প্রযুক্তির স্পর্শ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অনলাইনের মাধ্যমে সারাদেশে মিটিং করছেন। তবে আমাদের শিশুরা ফেইসবুক, টুইটার বা ইন্সটাগ্রাম যেভাবে বহুলভাবে ব্যবহার করছে তাতে এটি আসক্তির পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। এটা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে অভিভাবকদের জন্য। বাংলাদেশ বা উন্নত বিশ্বের প্রায় সবদেশে এ চিত্র অভিন্ন।
পরিসংখ্যান মতে, মাসে অন্তত একবার ফেইসবুক ব্যবহার করেন এমন লোকের সংখ্যা ২.১৩ বিলিয়ন। গত বছর এপ্রিলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে ফেইসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা আড়াই কোটি। ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে একটি গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ফেইসবুক ব্যবহারকারী হিসেবে স্থান করে নিয়েছে ঢাকা। ফেইসবুক, ভায়োলেন্স এন্ড সেইফটি অফ চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ নামের এক গবেষণা প্রতিবেদনে উদ্বেগজনক চিত্র ফুটে উঠেছে। ২০১৬ সালে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে দেখা গেছে আট বছর বয়সের শিশুরাও ফেইসবুক ব্যবহার করছে। গবেষণা জরিপে অংশগ্রহনকারী ১৪ শতাংশ শিশু স্বীকার করেছে তারা ১৩ বছরের কম বয়সী হলেও আইন অমান্য করে ফেইসবুকে একাউন্ট খোলেছে। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যে ১১ ও ১২ বছর বয়সী শিশুদের অর্ধেকেরও বেশি শিশুর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাউন্ট আছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা অফকম। এসব মাধ্যমে একাউন্ট খুলতে হলে আইন অনুযায়ী ১৩ বছর বয়সী হতে হয়। ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে প্রকাশিত ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ১০ বছর বয়সীদের ২৮ শতাংশ, ১১ বছর বয়সীদের ৪৬ শতাংশ এবং ১২ বছর বয়সীদের ৫১ শতাংশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাউন্ট আছে। প্রতি দশজন অভিভাবকের মধ্যে আটজনই এসব মাধ্যম ব্যবহারের জন্য যে বয়সের বাধ্যবাধকতা রয়েছে সেটা জানেন না।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ফেইসবুক আসক্তি কোকেন আসক্তির মতো মানুষের মগজে প্রভাব ফেলে। একে কারের এক্সেলেটরের সঙ্গে তুলনা করে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওফির টুরেল বলেছেন, ফেইসবুক আসক্তি মানুষের মগজকে বেশি পরিমাণে সক্রিয় করে তুলে। এই গবেষণায় দেখা গেছে, ফেইসবুক ব্যবহারকালে মানুষের মস্তিষ্কের এমেগডালা নামক একটি অংশ সক্রিয় হয়, যেটি আবেগের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং স্ট্রেইটাম নামক আরেকটি অংশকেও সক্রিয় করে, যেটি পরবর্তী প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা দেয়। এতে আরো দেখা যায়, অংশগ্রহনকারীদের অনেকে সড়ক চিহেৃর চেয়েও ফেইসবুকের প্রতি অতিমাত্রায় দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখায়।
পরবর্তীতে এরা জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা-ের সাথে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রকাশ হওয়া খবর থেকে দেখা গেছে, কিশোরেরা সমাজের মধ্যে নিজেদের মতো করে নতুন এক সমাজ গড়ে তুলছে। ওই সমাজের সংস্কৃতি, ভাষা, বিশ্বাস, মূল্যবোধ, আচার-আচরণ সবকিছু আলাদা। বিগবস, নাইন এমএম, নাইন স্টার, ডিসকো বয়েজ ইত্যাদি নামে গড়ে তুলছে অদ্ভূত এবং মারাত্মক কিশোর গ্যাং। যার ফলে সংঘটিত হচ্ছে নানাবিধ অপরাধ। আধিপত্য বিস্তারের নেপথ্যে মারামারি, ছিনতাই, চুরি, পাড়া বা মহল্লার রাস্তায় মোটরসাইকেলের ভয়ঙ্কর মহড়া, মাদক এবং ইয়াবা সেবন ও বিক্রি, চাদাঁবাজি, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা এমনকি খুনখারাবিসহ বিভিন্ন হত্যাকা-ের সাথে জড়িয়ে পড়ছে ভবিষ্যত সমাজের অপার সম্ভাবনাময়ী এসকল গ্যাং-এর তরুণ এবং কিশোর সদস্যরা।
বিশ্লেষকদের মতে, আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন, আকাশ সংস্কৃতি ও ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা বা তথ্যপ্রযুক্তি কিশোরদের অপরাধ প্রবণতা বাড়ার অন্যতম কারণ। তথ্য-প্রযুক্তির কারণে শিশু-কিশোরদের নৈতিক স্খলন হচ্ছে। শহরের শিশু-কিশোররা পরিবার থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। এর ফলে তারা মাদকাসক্ত হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও রাজনৈতিকভাবে কিশোরদের ব্যবহার করার কারণেও তাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক, টিকটক এবং লাইকিতে বিভিন্ন ধরনের কিশোর গ্যাং-এর পদচারণা এবং তাদের কর্মকা- সহজেই দৃশ্যমান হচ্ছে সমাজের মানুষের নিকট।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছুটি গল্পে লিখেছিলেন, তেরো-চৌদ্দ বৎসরের ছেলের মতো পৃথিবীতে এমন বালাই আর নাই। তাহার মুখে আধো-আধো কথাও ন্যাকামি, পাকা কথাও জ্যাঠামি এবং কথামাত্রই প্রগলভতা। কৈশোরে ছেলেমেয়েদের আচরণ পরিবর্তিত হয়, তাদের মধ্যে এক ধরনের উন্মাদনা পরিলক্ষিত হয়। সমাজ পরিবর্তনের সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সামাজিক অবক্ষয়। সামাজিক অবক্ষয়, সমাজ পরিবর্তন এবং সমাজের নানাবিধ অসঙ্গতি এবং অস্বাভাবিকতায় খেই হারিয়ে ফেলছে সমাজের কিশোর এবং তরুণেরা। তাই শিশু-কিশোরদের ভার্চুয়াল জগৎ থেকে ফেরানো এখনেই উত্তম সময় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
লেখক : এম. শাহজাহান, সাংবাদিক