ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের আলোচিত ইয়াকুব হত্যা মামলার তদন্ত নিয়ে দু’টানায় ভূগছে পুলিশ। তবে নিহত ইয়াকুব মিয়ার হামলার ঘটনা, চিকিৎসার কাগজপত্র, মেডিকেল ও পোস্টমর্টেম রিপোর্টসহ আনুষঙ্গিক ঘটনার পরষ্পর পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশের দাবি।
উপজেলার আড়াইসিধা ইউনিয়নের দগরিসার গ্রামের মৃত আবদুল হেকিম ভূইয়ার পূত্র ইয়াকুব ভূইয়া (৬০) মারা যাবার প্রায় এক মাস পর প্রতিপক্ষের হামলায় আঘাত জনিত কারণে তার মৃত্যু হয়েছে উল্লেখ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। গত ২০ ফেব্রুয়ারি নিহত ইয়াকুব মিয়ার চাচা একই গ্রামের মৃত আবদুল গফুর মিয়ার পুত্র সিরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে দগরিসার গ্রামের ১০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
এামলার এজাহারে বলা হয় গত বছরের ৩০ নভেম্বর একটি গ্রাম্য সালিশ সভাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মারধর করে। এতে তিনি গলায় আঘাতপ্রাপ্ত হন। ওই আঘাতের ফলে ইয়াকুব মিয়া ধীরে ধীরে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং গত ২৩ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তাৎক্ষণিকভাবে হত্যা মামলা না করার কারণও ব্যখ্যা করা হয় মামলার এজাহারে।
আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য আশুগঞ্জ থানায় প্রেরণ করে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ ইয়াকুব মিয়ার উপর হামলা ও মারধরের সত্যতা পায়। ফলে পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিতু মরিয়ম কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে ময়না তদন্তের জন্য প্রেরণের নির্দেশ দেন। পরে দাফনের প্রায় দেড় মাস পর ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে পুলিশ ইয়াকুব মিয়ার লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়না তদন্তের জন্য প্রেরণ করে।
ময়না তদন্তে ইয়াকুব মিয়া ইপিগন্টিসে (স্বরযন্ত্রের উপরের অংশ) ‘মেটাস্টেটিক স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা’ নামক ক্যন্সারে মৃত্যুবরণ করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়। এতে ওই মামলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে দু’টানায় পড়ে পুলিশ।
পুলিশের সাথে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নিহত ইয়াকুব মিয়ার উপর প্রতিপক্ষের হামলার সত্যতা রয়েছে। তার ঘাড়ের ডানদিকেসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করা হয়েছে মর্মে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের সার্টিফিকেটও রয়েছে। বিশেষ করে গলায় আগাতপ্রাপ্ত হবার কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতাল থেকে শুরু করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসা নেয়ার ধারাবাহিকতায় মিল রয়েছে। একপর্যায়ে তার ইপিগন্টিসে ‘মেটাস্টেটিক স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা’ ধরা পড়ে। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও ইয়াকুব মিয়ার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, উল্লিখিত আঘাতের আগে তার শরীরে কোন প্রকার ক্যন্সার ছিলনা।
ইয়াকুব মিয়ার স্বজনদের দাবি আঘাতজনিত কারণেই তার ইপিগন্টিসে ‘মেটাস্টেটিক স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা’ সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে।
এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার নূপুর সাহা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের মেডিকেল কর্মকর্তা ডাক্তার মোঃ ফাইজুর রহমান ফয়েজ জানান, স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা’ এক ধরনের ক্যন্সার। আর মেটাস্টেটিক হচ্ছে যা এক জায়গা থেকে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে এমন ক্যন্সার। তবে আঘাতজনিত কারণে এধরনের ক্যন্সার সৃষ্টি হতে পারে কি না তা তারা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি।
তবে গলায় ফুলা থেতলানো জখম থেকে যে দীর্ঘদিনে কার্সিনোমা সৃষ্টি হতে পারেনা সরাসরি এ কথাও বলতে পারছেন না বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা।
আশুগঞ্জ থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ মোঃ জাবেদ মাহমুদ জানান, এটি একটি ষ্পর্শকাতর ঘটনা। তাই পোস্ট মর্টেমের রিপোর্টের পাশাপাশি পূর্বের মারামারির ঘটনা, চিকিৎসার কাগজপত্র, মেডিকেল রিপোর্ট ইত্যাদি পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সাথে পরামর্শ করা হচ্ছে। সুষ্ঠ তদন্তের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে মামলার বাদী পক্ষের কুশলী ব্রাহ্মণবাড়িয়া বারের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট ওসমান গনি বলছেন, নিহত ইয়াকুব মিয়া প্রতিপক্ষের আক্রমনে গলায় আঘাত প্রাপ্ত হয়েছেন। এ-সংক্রান্ত তার চিকিৎসার কাগজপত্রেও ধারাবাহিক মিল রয়েছে। মেডিকেল রিপোর্টে ঘাড়ের ডানদিকে ফুলা জখমের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পোস্টমর্টেম রিপোর্টেও গলায় সংক্রমনের কথাই বলা হয়েছে। এতে প্রমান হয় এটি নিঃসন্দেহ হত্যাকান্ড। তাই এটি হত্যা মামলা হিসেবে চলতে কোন আইনগত বাধা নেই।
এদিকে মৃত ইয়াকুব মিয়ার স্বজনরা তাকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে দ্রুত বিচারের ব্যবস্থার দাবিতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দৃষ্ঠি আকর্ষণ করছে।