ইতিহাসে নিষ্ঠুরতা ও নির্মমতার ঘটনা যেমন অশ্রুধারা ও বিষাদের, তেমনি এর প্রায়শ্চিত্তের প্রাপ্তিও কম নহে। প্রাপ্তি অনেক সময় দুনিয়াতেই তা কমবেশী দৃশ্যমান হয়ে থাকে। তাই হয়তো বলা হয়ে থাকে পাপী কখনও দুনিয়া থেকে শাস্তি ছাড়া বিদায় হয় না। অর্থাৎ সিনার ক্যান নেভার গো আনপানিসড।
মহররম মাস তামাম জাহানের মুসলমানদের জন্য একটি শোকাতোর হৃদয় বিদারক ও মর্মান্তিক মাস। এই মাস আগমন হলেই মুসলমানদের অন্তরে দুঃখ, জ্বালা, বেদনা ও অনুতাপের হাহাকার পড়ে যায়। এই মাসে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর দৌহিত্র, হযরত আলী (রাঃ) পুত্র ও মা জননী ফাতেমা (রাঃ) আদরের দুলাল, ইসলামের অকুতোভয় সিপাহসালার হযরত হাসান ও হোসেন (রাঃ) এর ওপর কাপুরুষ দানব এজিদের নিষ্ঠুরতা, নৃশংসতা, দানবীয়তা ও নির্মমতায় কারবালার ফোরাত প্রান্তর শহীদদের রক্তে রঞ্জিত হয়ে পড়ে। চারিদিক থেকে আওয়াজ আসে হায় হাসান, হায় হোসেন (রাঃ)। কোনো মুসলমান এই অমানবিক নিষ্ঠুরতা ও নির্মমতা যেমনি আজও ভুলতে পারেনি তেমনি সহ্য করতে পারেনি। যে নিষ্ঠুরতা মনে হলে মুসলমানদের কলিজা দুঃখ বেদনায় খান খান হয়ে যায়।
তাই পাষন্ড দানব, অমানুষ ও নিষ্ঠুর ক্ষমতালোভী এজিদ মৃত্যুর আগে বলে গিয়েছিল, আমাকে কোথায় কবর দেয়া হবে তা যেন কেহই জানতে না পারে। তা জানলে কবর থেকে লাশ তুলে তা ছিন্ন ভিন্ন করা হবে। লাশের হাড়গোরও ধুলিসাৎ করা হবে। তাই পাষন্ড এজিদের কবর কোথায় দেয়া হয়েছে তা হয়তো কেহই জানে না বলে ঐতিহাসিকদের মন্তব্যে তা ওঠে এসেছে।
ইসলামের আবির্ভাবের পর ইসলামকে সমূলে ধ্বংস করার জন্য বিধর্মীদের চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র ও আরও অনেক মর্মস্পর্শী ঘটনা ঘটেছে। যা বর্ণনা করলে এ কলামে অন্য কিছু লেখা সম্ভব হবে না বিধায় সংক্ষিপ্তভাবে কিছু ঘটনার বর্ণনা করা হল। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ওফাতের পর তোলায়হা, মুসায়লামা, সাজাহসহ চারজন ভন্ড নবী হিসেবে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর স্থানে স্থলাভিষিক্ত হওয়ার জন্য নবী হিসেবে নিজেদেরকে দাবী করে থাকে। প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ফিলিপ কে হিট্টির বর্ণনা থেকে জানা যায় (ঐরংঃড়ৎু ড়ভ অৎধন) সেই সময় অর্ন্তদ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়ে চারজন ভন্ড নবী দাবীদাররা নির্মমভাবে নিহত হয়। তিনি আরও লিখেছেন, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ওফাতের পর হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) মতো ইসলামের বলিষ্ট খেদমতগার ও নেতৃত্ব না থাকলে ইসলাম বেদুইন গোত্রদের সাথে মিশে গিয়ে অংকুরেই বিনষ্ট হয়ে যেত। অর্থাৎ ঐধফ ঃযবৎব নববহ হড় ঐধুৎধঃ অনঁ ইধশবৎ (জ.) ওংষধস ড়িঁষফ সধষঃবফ ধিু পড়সঢ়ৎড়সরংব রিঃয ঃযব ইবফরিহ ঃৎরনবং. এতসব কিছুর উত্তোরন ঘটিয়ে ইসলাম ধর্ম আজ সারা দুনিয়ায় বিস্তার লাভ করেছে। ভারত, আমেরিকা, কানাডা, যুক্তরাজ্য, আফ্রিকাসহ দুনিয়ার অনেক দেশে ইসলাম ধর্মের তীব্র বিরোধীরাও কলেমা তৈয়বা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) পড়ে ইসলামের সুন্দর ও সুশীতল পতাকা তলে এসে মুসলমান হচ্ছে।
ইসলামের বিরুদ্ধে ফেরাউন (রামেসিস) অত্যাচার ও উৎপীড়ন কম করেনি। ফলশ্রুতিতে আল্লাহর অশেষ মেহেরবাণীতে নীলনদ দিয়ে হযরত মূসা (আঃ) সঙ্গীসাথীসহ ঘোড়ায় চড়ে পাড়ি দিলেও ফেরাউন সেই নীলনদ পাড়ি দেয়ার সময় আল্লাহর কুদরতে নীলনদের দুই ধারের পানি চাপ দিলে এখানেই ফেরাউন (রামেসিস) তার সাঙ্গপাঙ্গসহ নীলনদের পানিতে মৃত্যু হয়। আল্লাহ রাব্বুল আল আমীনের এমন নিদর্শনের শেষ নেই। কাবা শরীফ জয় করতে আসা আবরাহার বিশাল হস্তী বাহিনীকে আবাবিল পাখীর কংকর নিক্ষেপে ধ্বংস করা হয়েছিল। উল্লেখ রয়েছে, আবাবিল পাখির মুখের কংকর যেখানে পড়েছিল সেখানে বিশাল গর্ত হয়ে যায়। এই কংকর আবরাহার যে সৈন্য ও হাতির ওপর পড়েছিল সেই সৈন্য ও হাতী ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়ে। উল্লেখ রয়েছে আবাবিল পাখির মুখের কংকরের ওজন নাকি একটনের (সাড়ে সাতাশ মন) বেশী ছিল। নমরূদের নাকে ছোট মশা ঢুকলে সেই পরাক্রমশালী ইসলাম বিদ্বেষী নমরূদ যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে মাথা থাপড়াতে থাপড়াতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এমনিভাবে হযরত ইবরাহিম (আঃ) কে আগুনের কুন্ডে নিক্ষেপ করা হলে আগুন বরফের মতো শীতল হয়ে যায় এবং আগুনের কুন্ড ফুলের বিছানা হয়ে যায়। এমনিভাবে ইসলামের বিরোধীতাকারীদের শাস্তির অসংখ্য দৃষ্টান্তের শেষ নেই।
ইতিহাসের আলোকে ও সমসাময়িক কিছু ঘটনা এখানে উল্লেখ করা হল। তাতে দেখা যায়, নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করে যারা সিংহাসন দখল করতে চেয়েছিল সেই বিশ্বাসঘাতক মীরজাফর আলী খান সহ নাটের গুরুদের অনেকেই নির্মম, নিষ্ঠুরভাবে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করেছে। ইতিহাসের শিক্ষা কখনও শুভ হয় না। যার রয়েছে ভুরি ভুরি প্রমাণ ও উদাহরণ।
বিশ্বাসঘাতক মীরজাফর দীর্ঘদিন কুষ্টরোগে ভোগার পর মারা যায়। এমনকি এখনও তার কবরের পাশ দিয়ে যাওয়া আসার সময় মানুষ থুথু ও জুতা নিক্ষেপ করে থাকে। ঘসেটি বেগমকে পানিতে চুবিয়ে মারা হয়। যে মীরনের নির্দেশে মুহাম্মদী বেগ নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করে সেই মীরনের নৃশংসভাবে মৃত্যু হয় ইংরেজদের হাতে। রায় দুর্লভ দীর্ঘ কারাভোগের সময় কারাগারেই মৃত্যু হয়। জগৎ শেঠকে মীর কাশেম হত্যা করে। উমি চাঁদ পাগল অবস্থায় ঘুরে ঘুরে মারা যায়। ধনকুবের ও ষড়যন্ত্রকারী নন্দ কুমারকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। নাটের গুরু ও গডফাদার ইস্ট ইন্ডিয়া বেনীয়া কোম্পানির বেঈমান রবার্ট ক্লাইভ ১৭৭৬ সালে আত্মহত্যা করে নিজেই নিজের জীবন লীলা সাঙ্গ করে থাকে।
৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেক পোস্টে পুলিশের গুলিতে মর্মান্তিকভাবে নিহত হয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত চৌকস মেজর সিনহা রাশেদ খান। এই নির্মম হত্যাকান্ডকে যারা মিথ্যাচার ও ধামাচাপা দিতে চেয়েছিল আজ র্যাব ও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের তদন্তে একটার পর একটা ঘটনার মূল রহস্য বেড়–তে শুরু হয়েছে। মেজর (অবঃ) সিনহা এক সময় প্রধানমন্ত্রীর এস.এস.এফের সদস্য হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মেজর (অবঃ) সিনহা রাশেদ খান একজন মেধাবী ও চৌকস সেনা কর্মকর্তা ছিলেন বলেও জানা যায়। যারা মেজর (অবঃ) সিনহাকে হত্যা করে ঘটনা অন্য দিকে নিতে চেয়েছিল আজ ঘটনার নায়করা ধরা পড়তে শুরু করেছে। কোনো অবস্থাতেই সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢাকা যায় না। জাতির দুর্ভাগ্য মহান স্বাধীনতার পর ৭৫ সালে ১৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ১৯৮১ সালে ৩০ মে যারা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল তাদের স্বরূপও গোপন থাকেনি। অর্থাৎ এ দুনিয়াতে যত নিষ্ঠুরতা ও নির্মমতা সংঘটিত হয়েছে একদিন আগে হোক আর পরে হোক কোন অবস্থাতেই তা গোপন থাকেনি। বাস্তবিক অর্থে ইতিহাস বড়ই নিষ্ঠুর ও নির্মম। যার যতটুকু প্রাপ্তি তা পেতেই হয়। বিলম্বে হলেও মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত ও ইয়াসির আরাফাতের হত্যার ঘটনাও বেড়িয়েছে।
১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের কুখ্যাত জল্লাদ, কসাই, দানব ও হায়েনারা এদেশের নিরীহ, নিরপরাধ মানুষকে নির্মম, নিষ্ঠুর ও অমানবিকভাবে হত্যা করে। ৯৩ হাজার হানাদার পাকবাহিনী ও নাটের গুরু ১৯৫ জন হানাদার বাহিনীর ঘাতকদের এদেশের মাটিতে বিচার হওয়ার কথা থাকলেও ১৯৭৩ সালে ভারতের সিমলায় ইন্দিরা ভূট্টোর সিমলা চুক্তির মাধ্যমে তাদেরকে পাকিস্তানে ফেরৎ পাঠানো হয়ে থাকে। সিমলা চুক্তিতে তখন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের কোনো প্রতিনিধিকে রাখা হয়নি বলে জানা যায়। তারপরও এসব দানব ও কষাইরা পাকিস্তানে ফিরে গিয়েও বিভিন্নভাবে নাজেহালের সম্মুখীন হচ্ছে। পাকিস্তানে অবস্থানরত অনেক প্রবাসী বাংলাদেশীদের তথ্য ও সূত্রে জানা যায়, এ সমস্ত দানবরা কোনো সেমিনার বা সভা সমাবেশে গেলে বাংলাদেশে ৭১ সালে সংঘটিত নরহত্যা সম্পর্কে নাকি নানাভাবে প্রশ্নে জর্জরিত করা হয়ে থাকে। তাদেরকে অনেক সময় পুলিশ বেষ্টনি করে নাকি গণরোষ থেকে উদ্ধার করা হলেও, তাদের ওপর ঘৃণার থুথু ও জুতা নিক্ষেপ করা হয়ে থাকে। এমনিভাবে যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় নিরীহ নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছে মা বোনদের ওপর পাশবিক নির্যাতন, বাড়ীঘর পুড়িয়েছে ও লুন্ঠন করেছে ওরা বিচারের হাত থেকে বেঁচে গেলেও ওদের মধ্যে অনেকেই লোলা, ল্যাংড়া, কানা ও বোবা হয়ে বেঁচে আছে বলেও জানা যায়। জল্লাদ, বিশ্ববেহায়া, দানব ও নরপশু হিসেবে ধিকৃত ইয়াহিয়া বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মদ্যপ অবস্থায় বেসামাল ও উলঙ্গ হয়ে মারা যায়। আজও তার অরক্ষিত কবরের পাশ দিয়ে যাওয়া আসার সময় মানুষ তাকে ধিক্কার, ঘৃণা ও থুথু দিতে ভুল করেনি। পাকিস্তানে ফেরৎ ১৯৫ জন কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীকে বাংলাদেশে এনে বিচারের দাবী কারও মন থেকে আজও নিবৃত হয়নি।
মুক্তিযুদ্ধ কালে পাকহানাদার বাহিনীর কুখ্যাত মেজর ইফতেখার ও অন্যান্যরা কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশান সংলগ্ন ডাক বাংলোতে তাদের আস্তানায় ধরে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাসহ অগনিত নিরীহ মানুষকে হত্যা ও নারী নির্যাতন করেছে। মানুষ আজও এ
নৃশংসতা ভুলতে পারেনি। প্রতিবছর মহান স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসের দিন অগনিত মানুষ, সন্তানহারা পিতামাতা, পিতামাতা হারানো সন্তান, ভাই হারা বোন ও স্বামী হারা স্ত্রীদের বিলাপে ডাক বাংলো অঙ্গন মহরম মাসের কারবালা ট্রেজেডির মতো হৃদয় বিদারক মর্মান্তিক দৃশ্যপটের অবতারণা হয়ে থাকে। অনেকেই হানাদার বাহিনীর নরঘাতকদিগকে কুলাঙ্গার বলে বিলাপ করে, আল্লাহ রাব্বুল আল আমীনের দরবারে তাদের বিচারের জন্য ফরিয়াদ জানিয়ে লুপ্ত ব্যথা, বেদনা ও আহাজারি সংবরণ করে থাকে।
যারা ক্যাসিনো কেলেংকারী ও করোনা ভাইরাস কোভিড- ১৯ কে উপলক্ষ করে স্বাস্থ্য সামগ্রী সরবরাহে অনিয়ম, দুর্নীতি করেছে তাও গোপন থাকেনি। যদিও এসবের নাটের গুরুদের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ আজও অনেকেই জানতে পারেনি। তারপরও আশার কথা এ সমস্ত কুশীলবদের বিরুদ্ধে দুদকসহ বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত করছে এবং মাঠে থাকার কথা শুনা যায়। এক সময় তাদের মুখোশ উম্মোচন হলে কারাগারে আটক দুদকের পরিচারক এনামুল বাছির ও বরখাস্তকৃত পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমানের মতো দেশের মানুষ হয়তো আরও অনেক কিছু দেখতে পারবে। বাংলাদেশ পুলিশ এবং দুদক এবং অনেক সংস্থায় অনেক ভালো ও জনবান্ধব কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছে। বর্তমান বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ ও দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ ন্যায়, নিষ্ঠাবান ও জনবান্ধব হিসেবে পরিচিত।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে স্বাধীনতা দিবসে জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ঘোষনা করেছেন, দুর্নীতি করে কেহই রেহাই পাবে না, সে যত বড়ই হোক। দুদক চেয়ারম্যানও বারবার বলে আসছেন, দুর্নীতিবাজদের সাথে কোনো আপোষ নেই। যত ক্ষমতাশালীই হোক না কেন, বিচার থেকে রেহাই পাবে না। দেশের মানুষ মনে করে ইহা একটি ভালো উদ্যোগ। দুদক আরও ঘোষণা করেছে প্রতি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চলছে এবং তা অব্যাহত থাকবে। তাদের পালিয়ে যাওয়ার পথ রুদ্ধ বলেও জানা যায়। এ প্রসঙ্গে একটি কথা না বললেই নয়। অনেক সময় টি.আর, কাবিখা, কাবিটা, সাশ্রয়ী মূল্যের চাউল, উন্নয়নের অর্থ আত্মসাতের কথা শুনা যায়। এসব দুর্নীতির প্রেক্ষাপটে সরকারি কর্মকর্তা, স্থানীয় সরকারের অধীন উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর চেয়ারম্যান, মেয়র, ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার এমনকি জেলা পরিষদের অনেককে তদন্ত সাপেক্ষে দুর্নীতির কারণে অপসারণ বা বরখাস্ত করা হলেও লক্ষ্য করলে দেখা যায় তদন্তে প্রমাণিত দুর্নীতি, আত্মসাৎ, অনিয়ম দেখা গেলেও এ ব্যাপারে বরখাস্ত পর্যন্তই যেন স্টপ হয়ে যায়। তাদের গতানুগতিক দুর্নীতি, আত্মসাৎ ও অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ার পরও আইনের ফাঁক ফোকড়ে যথাযথ বিচার বিভাগের মাধ্যমে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি অনেক সময় দেখা যায় না। তাতে দুর্নীতিবাজ রাঘব বোয়ালরা আরও উৎসাহ লাভ করে থাকে। বরখাস্তের অভিযোগ থেকে ছাড় পেয়ে তাদের মধ্যে অনেকেই নতুন উদ্যম ও বেপরোয়া গতিতে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরে থাকে।
অনেকেরই অভিমত এসব চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ ও সরকারি সম্পদ আত্মসাৎকারীদের যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা এবং এ সমস্ত দুর্নীতিবাজরা বিশেষ করে সরকারি দলের মনোনয়ন নিয়ে কোনো পর্যায়ে নির্বাচনেই যাতে অংশগ্রহণ করতে না পারে এর জন্য কালো তালিকা (ব্ল্যাক লিস্ট) গ্রহণ পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ অবশ্যম্ভাবী। এদেশ কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠি ও দলের নয়। অর্জিত স্বাধীনতা ও এদেশ সকলের। তাই এক সময় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের সময় লুটেপুটে এদেশ থেকে সবকিছু নিয়ে গেছে। লাখ লাখ মানুষ হত্যা করেছে। নারীর ইজ্জত সম্ভ্রম ধূলায় লুন্ঠিত করেছে। কিছু আর অবশিষ্ট রাখেনি। কিছু চোর রেখে গেছে। ওদেরকে নিয়ে গেলে হয়তো দেশটা বাঁচত।
ইতিহাসের আলোকে নিষ্ঠুরতা ও নির্মমতার প্রাপ্তি যেমন কাহাকেও ক্ষমা করে না, তেমনি যারা দেশের সম্পদ লুটপাট ও দুর্নীতির মাধ্যমে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ ও বটগাছ হয় তাদেরও আগে পরে হোক ক্ষমা না হওয়াই মুখ্যম। কথায় বলে পাপ বাপকেও ছাড়ে না। তাই দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্তকৃত সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের বিচারের কাঠগড়ায় এনে মুখোশ উন্মোচনে জন প্রত্যাশা কম নহে।
পরিশেষে বলব, দুদকের চেয়ারম্যানের প্রতি আস্থার কমতি নেই। দয়া করে এসব কিছু দেখুন, শুনুন ও চলুন। দুদকের কেহ যেন দুর্নীতি, অপকর্ম ও আত্মসাতের পাহাড়াদার ও ভাগীদার হয়ে বন্য হাতির মতো ক্ষেতের উটতি ফসলের যেন সর্বনাশ না করে।
এ.কে.এম শামছুল হক রেনু
লেখক কলামিষ্ট