কিশোরগঞ্জে ভাসমান বেডে সবজি চাষের জনপ্রিয়তা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। কিশোরগঞ্জের হাওড় ও উজান এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে আবাদ না হওয়ায় অনেক জমি পতিত থাকতো। কিন্তু এখন ভাসমান বেডে সবজি চাষের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কচুরিপনা দিয়ে তৈরি ভাসমান বেডে বিভিন্ন প্রকার সবজির ভালো ফলন হওয়ায় লাভের মুখ দেখছেন কৃষকরা। জেলা সদরের মহিনন্দ ইউনিয়নের চংশোলাকিয়া কাশোরারচরবিলের উন্মুক্ত জলাশয়ে ভাসমান বেডে সবজি চাষ করা হয়েছে। এতে করে জেলার অন্যান্য উপজেলার কৃষকদের মধ্যে এ চাষে আগ্রহ বাড়ছে।
কৃষকেরা জানান, অতিবৃষ্টি ও বন্যায় কখনও ডুববে না, সেচের প্রয়োজন পড়বে না বরং কোনো প্রকার কীটনাশক ছাড়াই সম্পূর্ণ জৈব সার ব্যবহার করে সবজি উৎপাদন করা সম্ভব। তাছাড়া এ পদ্ধতির চাষ করা সবজি দেখতে যেমন সুন্দর দেখায়, তেমনি খেতেও সুস্বাদু। এদিকে ভাসমান বেডে চাষাবাদের জন্য উৎসাহী করতে এবং এটিকে একটি লাভজনক পদ্ধতিতে পরিণত করতে স্থানীয় কৃষি বিভাগ কৃষকদের পরামর্শ দেয়াসহ মাঠ প্রদর্শনী ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
কৃষি বিভাগ জানায়, ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ একটি প্রাচীন পদ্ধতি। বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে গবেষণার মাধ্যমে ৭৬টি বেড নির্ধারণ করেছে। ভাসমান সবজি চাষের ফলে রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়, কীটনাশক লাগে না ও জৈব প্রযুক্তির মাধ্যমে সহজে রোগ ও পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করা যায়। পাশাপাশি উচ্চ ফলনশীল শশা, বরবটি, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, চালকুমড়া, ধুন্দল, করলা, ঢেঁড়স, লালশাক, পাটশাক, পালংশাক, পুঁইশাক আবাদ করা হয়েছে।
চংশোলাকিয়া এলাকার বাসিন্দা ফয়েজ উদ্দিন ও নুরুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন কৃষক মিলে কাশোরারচর বিলের পতিত ভূমিতে ৭ বছর যাবত ভাসমান বেডে সবজি চাষ করে আসছেন। তারা জানান, ভাসমান বেডে যে সবজি চাষ করা যায়, আগে তাদের জানা ছিল না। কৃষি কর্মকর্তাদের উৎসাহে পরীক্ষামূলকভাবে ভাসমান সবজির বেড করেন। ফসল যা হয়েছে তা দেখে প্রাণ জুড়িয়ে গেছে। ভাসমান বেডের সবজি বিক্রি করে আমাদের পরিবার পরিজনের ব্যায় নির্বাহ করতে পারছি।
স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উম্মে কুলসুম জেবুন্নেছা জানান, প্রথমে আমি চংশোলাকিয়া এলাকার দুজন কৃষক ফয়েজ উদ্দিন ও নুরুল ইসলামের মাধ্যমে কয়েকটি পরীক্ষামুলক বেড তৈরী করাই। এতে ফলন ভালো হওয়ায় বর্তমানে চাষী ও বেডের সংখ্যও বেড়েছে।
সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ জামাল উদ্দিন জানান,কাশোরারচর বিলে দীর্ঘ বছর যাবত অনেক জমি পতিত ছিলো। সে সমস্ত পতিত ভূমিতে কৃষি বিভাগের সহায়তায় কৃষকদেরকে প্রশিক্ষিত করে তোলে ৫২টি বেডে সবজি ও ২৪টি বেডে বীজতলার আবাদ করা হয়েছে। এতে করে এলাকার অন্য চাষীরাও ভাসমান বেডে সবজি আবাদে আগ্রহী হচ্ছে।
কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শষ্য) আশেক পারভেজ জানান,ভাসমান বেডে কম জমিতে বেশি ফসল আবাদ সম্ভব। ফলে কৃষকরা ভাসমান বেডে সবজি আবাদে ঝুঁকেছে।
কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ সাইফুল আলম জানান, ভাসমান এসব বেডে বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষে বদলে যাচ্ছে কৃষকের ভাগ্য। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে যথেষ্ট লাভ হওয়ার কারণে কৃষকদের মধ্যে দিন দিন যেন আগ্রহ বাড়ছেই।