বকশীগঞ্জে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার-সাংবাদিকদের হয়রানি বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার দুপুরে বকশীগঞ্জ এন এম হাইস্কুল মাঠে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে ঘন্টাব্যাপী এই মানববন্ধন করেন বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্টনিক মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকরা। মানববন্ধনে বক্তারা অবিলম্বে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষনা দেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ময়মনসিংহ বিভাগীয় প্রেসক্লাব বকশীগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক আলহাজ¦ সরকার আবদুর রাজ্জাক,বকশীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবদুল লতিফ লায়ন,এম এ ছালাম মাহমুদ ও মনিরুজ্জামান মনির প্রমুখ। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে সাংবাদিক মাসুদ উল হাসান,এ কে এম নুর আলম নয়ন,উৎপল মোহন্ত,মতিন রহমান,আলমাছ আলী,ইলিয়াছ আলী,মজনু মিয়া, আসাদ মিয়া,শ্রীবরদী প্রেসক্লাবের সভাপতি বকুল,সাধারণ সম্পাদক রানাসহ সাংবাদিকরা মানববন্ধনে অংশ গ্রহন করেন।
জানাযায়,২০১৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বকশীগঞ্জ উপজেলার মেরুরচর গ্রামের এক স্কুল ছাত্রীকে রাতের বেলায় ঘরে ডুকে ধর্ষনের চেষ্টা চালায় প্রতিবেশী চিনারচর গ্রামের বখাটে যুবক মোস্তাইন বিল্লাহ রনি। স্কুল ছাত্রীর স্বজনরা রনিকে হাতে নাতে আটক করে। এই ঘটনায় ধর্ষনের চেষ্টাকারী রনির পক্ষে অবস্থান নেয় এসআই শরিফ আহমেদ।
স্কুলছাত্রীর যৌন হয়রানির ঘটনার খবর অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও একাধিক দৈনিকে প্রকাশিত হলে এসআই শরীফ আহমেদ অভিযুক্ত বখাটে রনির পক্ষ নিয়ে তার ফেইসবুক আইডিতে স্কুলছাত্রীর নাম পরিচয় দিয়ে মানাহানিকর স্ট্যাটাস পোস্ট করেন। একই সময় স্কুল ছাত্রীকে সহায়তা করার জন্য স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাংবাদিক শাহীন আল আমীনের নামেও নানা মানহানিকর স্ট্যাটাস পোস্ট করেন।
তৎকালীন বকশীগঞ্জ থানার ওসি মো. হযরত আলীকে বিষয়টি জানানো হয় ভুক্তভোগীদের তরফ থেকে। কিন্তু এস,আই শরিফ আহমেদ তার পোস্টকৃত মানহানিকর ওই স্ট্যাটাস ফেইসবুক থেকে প্রত্যাহার না করায় বিষয়টি গত বছরের ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি দপ্তরে লিখিতভাবে জানান ভুক্তভোগীরা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এসআই শরিফ আহমেদ তার ফেইসবুক আইডিতে কমেন্ট করেন “...আইজি কি তার দুলাভাই বিচার দিলেই শুনবে...” ?
পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে মানহানিকর পোস্টের প্রতিকার চেয়ে পুলিশের আইজিপির কাছে অভিযোগ করায় বকশীগঞ্জে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা,গ্রেফতারসহ নানা ভাবে হয়রানি করছে বকশীগঞ্জ থানার এস আই শরীফ আহমেদ। এস আই শরীফের ভয়ে আতঙ্কিত বকশীগঞ্জের নির্যাতিত সাংবাদিক ও তাদের পরিবার।
ভুক্তভোগিদের অন্যতম হলেন মেরুরচর হাছেন আলী উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও বকশীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক শাহীন আল আমীন। তিনি দৈনিক ইত্তেফাকের বকশীগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি এবং এশিয়ান টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টারের দায়িত্ব পালন করছেন। গণজয় নামে একটি স্থানীয় দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক তিনি। মামলার এজাহারে নাম না থাকলেও চার্জশীটে আসামী বকশীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক শাহীন আল আমীনের নাম অর্ন্তভুক্ত করে তাকে হয়রানি করা হচ্ছে।
এছাড়াও সাংবাদিক এম এ ছালাম মাহমুদ, মনিরুজ্জামান মনির ও আলমাছ আলী এস আই শরীফ আহমেদের রেষানলে পড়ে মিথ্যা মামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন ।
উল্লেখ্য যে,স্কুল ছাত্রী নির্যাতনকারী মোস্তাইন বিল্লাহ রনির পক্ষ নিয়ে স্কুলছাত্রীর ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধ দাদাকে পিঠ মোড়া দিয়ে বেঁধে থানায় এনে হয়রনি ও নির্যাতন করেন এসআই শরিফ আহমেদ। ছাত্রী নির্যাতনকারী বখাটে যুবক মোস্তাইন বিল্লাহ রনির পক্ষ নিয়ে এসআই শরিফ আহমেদ ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রী, তার মা, বাবা, দাদা, নানা, চাচা, মামা, স্কুলের সভাপতি, ৩ সাংবাদিক, স্কুলছাত্রীর আইনজীবীসহ তার আত্মীয় স্বজনদের বিরুদ্ধে মামলায় স্বাক্ষী দেয়। পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়েও নির্যাতিত ওই স্কুলছাত্রীকে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ রয়েছে এস আই শরীফের বিরুদ্ধে। ফলে জীবনের অনিরাপত্তায় পড়া লেখা ছেড়ে দিয়ে স্বপরিবারে ঢাকায় অবস্থান করছে দরিদ্র্র ওই স্কুলছাত্রী। অপরদিকে বহাল তরিয়তে রয়েছে নির্যাতনকারী মোস্তাইন বিল্লাহ রনি ও তার পরিবার।
ভূক্তভোগিদের অভিযোগ, স্কুলছাত্রীসহ তার পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন মোস্তাইন বিল্লাহ রনির বড় ভাই মামলাবাজ, নারী নির্যাতনকারী, পুলিশের উপর হামলাসহ একাধিক মামলার আসামি ফোরকান আলী। মোস্তাইন বিল্লাহ রনিকে মারপিট করার অভিযোগে আদালতে দায়েরকৃত ওই মামলার আর্জিতে চাঁদা দাবির বিষয় উল্লেখ না থাকলেও চাঁদাবাজির ধারা সংযোজন করে স্কুলছাত্রী, তার মা, বাবা, দাদা, নানা, চাচা, মামা, স্কুলছাত্রীর আইনজীবী ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাংবাদিক শাহীন আল আমীনের বিরুদ্ধে আদালতে মনগড়া তদন্ত দাখিল করে পুলিশ। এতে ঘটনা সত্যতা মর্মে স্বাক্ষী দেয় এসআই শরিফ।
সাংবাদিক শাহীন আল আমীন জানান, ওই মামলার বাদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ইউনুছ আলী সুনির্দিষ্ট ২ জনের নামে মামলা দায়ের করলেও এসআই শরিফ আহমেদ তার নাম সংয়োজন করে মামলার চার্জশীট দেন। মামলার বাদীর আপত্তির পরেও তাকে গ্রেফতার করেন এসআই শরিফ। একইভাবে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে অন্য একটি মামালায়ও তার নাম সংযোজন করে মামলার চার্জশীট দেয়া হয়।
অভিযোগে প্রকাশ, পৃথক একটি ঘটনায় সাংবাদিক এম এ সালাম মাহমুদ ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সাংবাদিক মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করে চলেছেন এসআই শরিফ আহমেদ। এছাড়া মাস দুয়েক আগে আলমাস হোসেন নামে এক স্থানীয় এক সাংবাদিককে থানায় নিয়ে হয়রানি করারও অভিযোগ রয়েছে এসআই শরিফের বিরুদ্ধে।
আইজিপি বরাবর অভিযোগ দায়েরের ১১ মাস পর জামালপুর পুলিশ সুপারকে তদন্তের ভার দিয়েছেন পুলিশ হেড কোর্য়াটার। গত ২৭ আগস্ট ভুক্তভোগী সাংবাদিক শাহীন আল আমীন এবং ২৮ আগস্ট নির্যাতিত স্কুলছাত্রীর পক্ষে স্বাক্ষীদের লিখিত জবানবন্দি গ্রহণ করেছে পুলিশ সুপার কার্যালয়।