ঝিনাইদহ জেলায় সাপের কামড়ে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে এ নিয়ে ক্রমান্বয়ে আতংকগ্রস্থ হয়ে উঠছে। বিশেষ করে কালীগঞ্জ,ঝিনাইদহ ও শৈলকুপায় সাপের উপদ্রব বেশি। এসব সাপ রাতে ঘুমন্ত অস্থায় কামড় দিচ্ছে। আর সাপে কামড় দেবার পরে সে আর বাচতে পারছে না। বিষধর সাপের কামড় দেবার পরে তারা প্রথমে ঝাড়ফুঁক করে পরে হাসপাতালে নিলে প্রতিটি রোগি মারা যাচ্ছে। যেহেতু হাসপাতাল গুলোতে সর্প দংশনের রোগিদের জন্য এন্টিভেনম রাখা হচ্ছে না। বিশেষ করে গত জুন মাস থেকে সাপের উপদ্রব ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
ঝিনাইদহ,কালীগঞ্জ ও শৈলকুপায় সর্পদংশনে বেশির ভাগ মানুষ মারা যায় বিষধর প্রজাতির সাপের কামড়ে। বাদবাকি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে বিভিন্ন প্রজাতির সাপের কামড়ে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সাপের কামড়ে মৃত্যু হয় যেসব এলাকায় দ্রুত চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায় না। বর্ষা কালে সাপ বাইরে বেরিয়ে আসে এজন্য সর্প দংশন বৃদ্ধি পায়।এই সময় সাপ বাইরে বেরিয়ে আসছে বলে সাধারন মানুষ মনে করছে।। আর সাপ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কামড় দিচ্ছে রাতের বেলায় ও প্রতিটি ব্যাক্তির পায়ে কামড় দিয়েছে। এই অঞ্চলে বিষধর জাত এই সাপ দেখা যায় খুবই বেশি। এরা সাধারণত ইঁদুর জাতীয় প্রানী খায়। কাজেই শহরাঞ্চলে এবং গ্রামে ও মানুষের বাসার আশেপাশেই তাদের ঘোরাফেরা বেশি। কালীগঞ্জ,ঝিনাইদহ ও শৈলকুপায় খুবই বিষধর প্রজাতির সাপ।
সাপ সাধারণত দিনের বেলা কামড়ায় না। কিন্তু রাতের বেলা তারা হিংস্র হয়ে ওঠে। এই সাপ দৈর্ঘে প্রায় পাঁচ ফুট থেকে ৬ ফুট লম্বা হয়। এসব গোখরা সাপ সাধারণত কামড়ায় অন্ধকারের পর। গোখরার কামড়ে শরীরের ভেতর রক্তক্ষরণ হয়। ফলে এই সাপ কামড়ালে সাথে সাথে জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন।
বিশেষ করে বেশি ঝুঁকিতে আছেন গ্রামের কৃষক সম্প্রদায়ের মানুষ। তারা বর্ষা কালে সর্প দংশনের বড় ঝুঁকিতে থাকেন। কিন্তু এ অঞ্চলে যাদের সাপে কামড়ে মারা গেছে তারা সবাই রাতে নিজ ঘরে ঘুমিয়ে থাকা অস্থায়।
অনেকে বলছেন এলাকায় "সচেতনতা বাড়ানো, শিক্ষা এবং কিছু সহজ পদ্ধতি শেখানোর" কর্মসূচি নেওয়া উচিত। তাদের "সাপ থেকে নিরাপদ" থেকে কৃষিকাজ করার সহজ কিছু পদ্ধতি শেখানো সম্ভব, যেখানে তারা রবারের তৈরি বুট পরে মাঠে যেতে পারেন, হাতে গ্লাভস পরতে পারেন কৃষি কাজের সময় এবং ঝুঁকি কমাতে রাতে হাতে টর্চ রাখতে পারেন। কিন্তু বড় সমস্যা হল রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় সাপে কামড় দিলে কেউ বুঝতে পারছে না। পরে জ্বালা জন্ত্রনা শুরু হলে বা কামড়ের দাগ দেখে বুঝতে পারছে। আর অরেক সময় সাপ কামড় দিয়ে চোলে যাচ্ছে আবার ঘরের মধ্যে ও থাকছে। অনেকে সাপ দেখে মেরে ফেলছে।
গত জুন মাস থেকে যারা সাপের কামড়ে মারা গেছে তারা হলে ১ জুন কালীগঞ্জে বিষাক্ত সাপের কামড়ে জুলিয়া খাতুন (৭) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। রোববার দিবাগত রাত ৩টার দিকে সে মারা যায়। জুলিয়া খাতুন কালীগঞ্জ উপজেলার রায়গ্রাম ইউনিয়নের ভাতঘরা দয়াপুর গ্রামের জসিম উদ্দিনের মেয়ে এবং ভাতঘরা দয়াপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেনীর শিক্ষার্থী।
জুলিয়ার চাচা নাসির উদ্দিন জানান, রাতে জুলিয়া তার মা-বাবার সাথে ঘরে ঘুমিয়ে ছিল। রাত ২টার দিকে বিষাক্ত সাপ তাকে দংশন করে। পরে তাকে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
২০ জন ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় বিষধর সাপের কামড়ে সোহেল রানা (২০) নামে এক ছাত্র মারা গেছেন। সে রামচন্দ্রপুর স্কুল এ- কলেজের ছাত্র রানা বাঁইশেরদাড় গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে।স্থানীয় ইউপি মেম্বর আমির হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার রাতে গ্রামের বেড়াশুলা মোড়কে মাঠে তিনি পুকুর পাহারা দিতে যান। এ সময় তাকে বিষধর সাপে দংশন করলেও তিনি বুঝতে পারেননি। রাত ৩টার দিকে বাড়িতে এসে শোবার পর যন্ত্রনা শুরু হয়। এরপর পরিবারের লোকজন স্থানীয় কবিরাজের কাছে নিয়ে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ঝাড়ফুঁক করে।পরে অবস্থার অবনতি ঘটলে প্রথমে রানাকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ও পরে ঢাকার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে ফেরিঘাটে তার মৃত্যু হয়।
এদিকে শৈলকুপায় বিষধর সাঁপের কামড়ে ২৪ দিনে ৭ জন সাপের কামড়ে মারা গেল। পৌর এলাকার চতুড়া ও দুধসর ইউনিয়নের নাকোল গ্রামে এক রাতে ২ শিশু সাপের কামড়ে মারা যায়।
শৈলকুপা উপজেলার পৌর এলাকার চতুড়া গ্রামের শুভ’র ছেলে রাব্বি (৫) রাতে বাবা মায়ের পাশে ঘুমিয়ে ছিল। এ সময় ঘুমন্ত অবস্থায় শিশু ছেলেটিকে সাঁপে কামড় দেয়। পরে শিশুটিকে উদ্ধার করে প্রথমে শৈলকুপা হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখান থেকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে রেফার্ড করে। সেখানে ইনজেকশন দেওয়ার সাথে সাথে শিশুটি মারা যায়।
এছাড়া দুধসর ইউনিয়নের নাকোল গ্রামে বিল্লাল হোসেনের ছেলে তাহসিন (৯) ঘরের মেঝেতে শুয়ে ছিল। রাত ২টার দিকে বিষাক্ত সাপে কামড় দেয়। পড়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে ভোরে ছেলেটি মারা যায়।
এলাকাবাসী জানায়, সাপে কাটা রোগি গুলো হাসপাতালে নিয়ে ইনজেকশন দেবার সাথে সাথে মারা যাচ্ছে। সব সমস্যার সমাধান হলেও এই সমস্যার সমাধান কেউ দিতে পারছেনা। এই শাখা কানন, কালাচ নামে পরিচিত সাঁপে কামড়ানো ব্যক্তিদের বেঁচে যাওয়ার রেকর্ড খুবই কম। তাহলে কেন এর এন্টিভেনম ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে রাখা হচ্ছে না। এ পর্যন্ত হাসপাতালে যেয়ে কেউ বাঁচতে পারিনি।
সর্বশেষ সাপের কামড়ে মারা গেছে ২৮ আগস্ট শৈলকুপা উপজেলার দোহারো গ্রামে সাপের কামড়ে শরিফা খাতুন (২২) নামের অন্ত:স্বত্তা এক নারীর মৃত্যু হয়।
শনিবার সকালে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। শরিফা খাতুন দোহারো গ্রামের রাশিদুল ইসলামের স্ত্রী। সে রাতে নিজ ঘরে ঘুমিয়ে ছিল ৭ মাসের অন্ত:স্বত্তা শরিফা খাতুন। রাত ৩ টার দিকে বিষাক্ত সাপ তাকে কামড় দেয়। সকালে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
এদিকে সাঁপের উপদ্রব বৃদ্ধি পাওয়ায় এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। গত ২৪ দিনের ব্যবধানে শৈলকুপা উপজেলায় সাঁপের কামড়ে ৪ শিশুসহ ৭ জনের মৃত্যুু হয়েছে। সাঁপের উপদ্রব বন্ধে ও সাঁপে কাটা রোগীর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে এখন পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি বলে অভিযোগ।