বাংলাদেশ-এর জন্য নিবেদিত থাকা বীরমানুষদেরকে হারাচ্ছি এক এক করে। কেউ যুদ্ধবীর, কেউ বুদ্ধিবীর, কেউ শিল্পবীর, কেউ সংস্কৃতিবীর, কেউ সাহিত্যবীর কিংবা কেউ রাজনৈতিকবীর। এত এত বীরদেরকে হারাতে হারাতে মনে হচ্ছে- আমরা শূণ্য হয়ে যাচ্ছি। এই শূণ্যতার হাত ধরে এগিয়ে যেতে যেতে তাঁকেও হারালাম, যাকে বিশ^ব্যাপী মানুষ চিনতেন বিজয়ীবীর হিসেবে। আমাদের রণাঙ্গণের সি আর দত্ত।
নতুন প্রজন্মের সাহসের প্রেরণা সি আর দত্তের জন্ম আসামের শিলংয়ে, ১৯২৭ সালের ১ জানুয়ারি। বাবার বদলির চাকরির সূত্রে তারা থাকতেন সেখানে। শিলংয়ে তাদের বাংলো টাইপের বিরাট বাড়িটি এখনো আছে। ভাইদের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। তাঁরা পাঁচ ভাই, দুই বোন। বোনেরা বড়। তাঁর ডাকনাম রাখাল। ছোটবেলায় তিনি কিন্তু খুব ডানপিটে ছিলেন। খুব ভালো ফুটবলার ছিলাম। মাঠের একধার থেকে বলে লাথি মারতাম, অন্যধারে চলে যেত। এক-দুবার মোহনবাগান দলেও সুযোগ পেয়েছিলেন। রিজার্ভ বেঞ্চের খেলোয়াড় ছিলেন। মা লাবণ্যপ্রভা দত্ত’র কথা যতটুকু মনে পড়ে, সব সময় তিনি সন্তানদেরকে পরম যতেœ আগলে রাখতেন। মা-ই তো তাদের দেখাশোনা করতেন। বাবা উপেন্দ্রচন্দ্র দত্ত ছিলেন ভীষণ কড়া। ঠিকমতো লেখাপড়া করছি কি না, নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছি কি না এসব ব্যাপারে খুব নজর রাখতেন। বাবা পুলিশ অফিসার ছিলেন। তিনি অবশ্য বাবাকে দেখে আর্মিতে যোগ দেন নি। চাকরিতে যোগদানের পর ভালো লেগেছিলো বলেই দেশকে-মানুষকে ভালোবেসে সাহসের সাথে থেকে গিয়েছিলেন।
সাহসের বিজয়ী বীর সি আর দত্ত একবার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন- ‘২৬ মার্চ খবর পেলাম, ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঢাকাসহ সারা দেশ আক্রমণ করে বাঙালিদের নির্মমভাবে হত্যা করেছে। পরদিন সকালে কয়েকজনের সঙ্গে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলাপ করছিলাম। তখন কয়েকজন ছাত্র আমাকে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে তাদের সাহায্যের জন্য অনুরোধ করলেন। আমিও সেটাই চাইছিলাম। আমি তাদের এমএনএ আবদুর রবের (কর্নেল অব:) সঙ্গে আলাপের জন্য বললাম। তিনি কিছুদিন আগে ঢাকায় আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। ভেবেছিলাম, তাঁর কাছ থেকে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা জানা যাবে। তিনি সেদিনই আমাকে তাঁর বাসভবনে আমন্ত্রণ জানালেন। তাঁর বাসার সামনে দেখি, কয়েকটি বাস ও ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। অপেক্ষ করা ১৫০ জন মানুষ এখনই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। চারদিকে শুধু ‘জয় বাংলা’ স্লোগান। আবদুর রব আমাকে বললেন, ‘আজ বিকেল ৫টায়ই যে লোকবল আছে, তাদের নিয়ে সিলেট মুক্ত করার জন্য যুদ্ধ শুরু করব। এই যুদ্ধ পরিচালনার ভার আপনাকে দেওয়া হলো।’ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাঙালির শ্রেষ্ঠ অর্জনের অংশীদার হওয়া যেন আমার নিয়তি। হাসিমুখে সবাইকে অভিবাদন জানালাম এবং যাওয়ার সময় আমাকে নিয়ে যেতে অনুরোধ করলাম। বাড়ি ফিরে স্ত্রী মনীষা দত্ত ও ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে বিদায় নিলাম। সেদিন বিকেল ৫টায় একটি জিপ, পাঁচটি ট্রাক ও একটি বাসে মুক্তিযোদ্ধারা এসে স্বাধীনতার ডাকে আমাকে নিয়ে গেলেন। আমি, মানিক চৌধুরী ও রব একই গাড়িতে ছিলাম। আমাদের গাড়িবহর শায়েস্তাগঞ্জের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। গন্তব্য ছিল রশীদপুর চা বাগান। কারণ আমরা খবর পেয়েছিলাম, পাকিস্তানিরা শ্রীমঙ্গলের ওপারে আছে। মুক্তিকামী বাঙালিদের ব্যারিকেড সরিয়ে আমরা এগিয়ে গেলাম। রশীদপুর চা বাগানে পৌঁছতে পৌঁছতে রাত ১১টা বেজে গেল। সেখানে পৌঁছেই রবকে (পরে মেজর জেনারেল) বললাম, ‘আজ রাতে এখানেই থাকব এবং আগামীকাল ভোরে আমাদের সঙ্গে যারা আসছে, তাদের সঙ্গে কী কী অস্ত্র আছে—সব দেখে পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করব।’ সেদিন সারা রাত উত্তেজনায় ঘুম হলো না। রশীদপুর চা বাগানের ম্যানেজার মোস্তফা সাহেব আমাদের সহযোগিতা করেছেন। তিনি আমাদের নিরাপত্তা, থাকা-খাওয়া ও যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছেন। আমার লক্ষ্য ছিল, সিলেটকে মুক্ত করব; কিন্তু আনসার, মুজাহিদ, পুলিশ ও বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যদের নিয়ে আমার মোট লোকবল ছিল ১৫০ জন। তাঁদের কাছে কিছু থ্রি নট থ্রি রাইফেল ও ১০ রাউন্ড করে গুলি আছে। তবে তাঁরা সবাই যখন বললেন, ‘স্যার, আমরা প্রস্তুত’, মনে সাহস ফিরে পেলাম। ঠিক করে ফেললাম, আমাদের গ্রামবাসীর সাহায্য নিতে হবে। কারণ তারাই হলো বড় শক্তি। গ্রামের লোকদের ডেকে বললাম, আপনারা আমার মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে থাকবেন এবং ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে চারদিক কাঁপিয়ে তুলবেন। যাতে পাকিস্তানিরা মনে করে, আমরা তাদের বিরুদ্ধে অনেক সৈন্য নিয়ে এসেছি। ২৮-২৯ মার্চ সৈন্যদের সংগঠিত করলাম। আমার প্রথম ঘাঁটি ছিল রশীদপুর। মোস্তফা, আজিজসহ আশপাশের চা বাগানের বাঙালি ম্যানেজাররা আমাকে খুব সহযোগিতা করেছেন। আওয়ামী লীগের নেতা মানিক চৌধুরী অস্ত্র ও গোলাবারুদের ব্যবস্থা করেছেন।’
হৃদয়ে বাংলাদেশ’ রেখে যুদ্ধ করেছেন নিরন্তর রণাঙ্গণে। বিজয় এনেছেন নিজের সাহসকে সাথী করে। দিনের পর দিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অগ্রসর হয়েছেন নিজের মায়ের মত দেশকে শত্রুমুক্ত রাখতে। তারই ধারাবাহিকতায় লড়েছেন-গড়েছেন নির্মোহজীবন। যে জীবনের একটি বড় অংশজুড়ে রয়েছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। সেই যুদ্ধস্মৃতি নিয়ে তিনি বলেছিলেন- ভারতের মেঘালয়ের ডাউকি থেকে আগরতলার খোয়াই পর্যন্ত মানে খোয়াই-শায়েস্তাগঞ্জ রেললাইন ছাড়া পূর্ব ও উত্তর দিকে সিলেটের ডাউকি সড়ক; হবিগঞ্জ থেকে দক্ষিণ কানাইঘাট পুলিশ স্টেশন পর্যন্ত প্রায় ১০০ বর্গমাইলজুড়ে আমার সেক্টর। এটি পাহাড়ি এলাকা। পাহাড় ছাড়াও এই এলাকার আরেকটি বৈশিষ্ট্য, এখানে প্রায় ১০০টি চা বাগান ছিল। একদিকে গেরিলাযুদ্ধের জন্য যেমন এটি অত্যন্ত উপযুক্ত এলাকা, তেমনি এটি দুর্গমও ছিল। আমার সেক্টরে গেরিলা যোদ্ধা ছিলেন প্রায় ৯ হাজার। তাদের মধ্যে নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা প্রায় চার হাজার। আমার হেডকোয়ার্টার প্রথমে ছিল করিমগঞ্জ, পরে কাসিমপুর। আমার রাজনৈতিক লিয়াজোঁর দায়িত্বে ছিলেন দেওয়ান ফরিদ গাজী, প্রশাসনিক দায়িত্বে ছিলেন আজিজুর রহমান ও ড. হাসান। এই সেক্টরকে ছয়টি সাবসেক্টরে পরিণত করে আমি স্বাধীনতাযুদ্ধ করেছি। জালালপুর সাবসেক্টরের দায়িত্বে গণবাহিনীর মাহবুবুর রব সাদী, বারাপুঞ্জী সাবসেক্টরে ক্যাপ্টেন রব, আমলসিদ সাবসেক্টরে সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জহির, কুকিতল সাবসেক্টরে ফ্ল্যাইট লেফটেন্ট্যান্ট কাদের, কৈশাল শহর সাবসেক্টরে লেফটেন্যান্ট ওয়াকিজ্জামান, কমলপুর সাবসেক্টরে মেজর এনাম মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচালনা করেছেন। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের লোহারবন্দে প্রশিক্ষণ দিতাম। এই ৯ মাসের যুদ্ধে আমার একশ’র বেশি মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। হানাদারদের সঙ্গে অসংখ্য মুখোমুখি ও গেরিলাযুদ্ধ করেছি।
এমন যোদ্ধা বিজয় অর্জনের পর কি কি ঘটেছিলো, কি হয়েছিলো তা প্রসঙ্গে বলেছিলেন- ১৯৭২ সালে আমাকে সেনাবাহিনীর রংপুর ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডারের দায়িত্ব দেয়া হলো। তখন স্বাধীন দেশের জন্য সেনাবাহিনীর রংপুর ব্রিগেড গড়ে তোলায় আত্মনিয়োগ করেছি। রাত-দিন পরিশ্রম করতে হয়েছে। আমাকে অবকাঠামো বানাতে হয়েছে, আরো কাজ করেছি। এই দায়িত্বে এক বছরের মতো ছিলাম। ১৯৭৩ সালে আমি একটি বাহিনী গড়ে তোলার দায়িত্ব পেলাম। এই বাহিনীর কাজ হবে আমাদের দেশের অরক্ষিত সীমান্ত রক্ষা করা। দিন-রাত পরিশ্রম করে বিজিবি (সাবেক নাম বাংলাদেশ রাইফেলস) গড়ে তুলেছি। ‘বাংলাদেশ রাইফেলস’ নামটি আমার দেওয়া। স্লোগানটিও আমি দিয়েছি। বাংলাদেশ রাইফেলসের প্রথম মহাপরিচালক ছিলাম। এই দায়িত্ব কিন্তু কোনো সহজ কাজ ছিল না। আমি সীমান্তে চোরাচালান বন্ধ করেছিলাম। এই দায়িত্বে বছরখানেক থাকার পর ১৯৭৪-৭৫ সালে সেনা সদর দপ্তরে ‘চিফ অব লজিস্টিকসের দায়িত্ব পালন করেছি। যখন যে দায়িত্ব পেয়েছি, আমি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করার চেষ্টা করেছি।
১৯৭৭ সালে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেলাম। এই প্রতিষ্ঠানটি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন, তাঁদের কল্যাণ ও উন্নয়নে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পাকিস্তানিদের পরিত্যক্ত অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, কারখানা, সিনেমা হল কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে ছিল। আমার কাজ ছিল বন্ধ কারখানাগুলো চালু করা এবং সেগুলোকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা। প্রথম মেয়াদে দুই বছর ছিলাম। মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারগুলোর অবস্থার উন্নয়নে কাজ করেছি।
জীবনজুড়ে সি আর দত্ত ছিলেন গণমানুষের মুক্তির পথ তৈরির কারিগর। যে কারণে নিজের জীবনের উপর দিয়ে অসংখ্য ঝড় চললেও তা তিনি নিজের মত করে সামলে নিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। সেই ইতিহাস হয়তো অনেকেই জানেন না। যারা জানেন না তাদের জন্য-নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিদের জন্য আশার কথা হলো- ১৯৭৯ সালে সি আর দত্তকে বিআরটিসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। বিআরটিসি একটি লস প্রতিষ্ঠান ছিল। তিনিই প্রথম একে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রুপ দেন। সকল আমিত্বকে ঝেরে ফেলে তিনি অফিশিয়াল গাড়ি থেকে নেমে বিআরটিসির সাধারণ যাত্রী পরিবহন করা বাসে চড়ে বসতেন, গাড়িতে গাড়িতে ঘুরে সেগুলো ভালোভাবে চলছে কি না, চালক, হেলপার ও সংশ্লিষ্টরা যাতে তেল চুরি করতে না পারে সে জন্য তাদের কাজকর্ম, গতিবিধি নজরে রাখতেন। কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি হলে হাতেনাতে ধরতেন এবং সংশোধন করতেন। একের পর এক সম্ভাবনার বাতি জ¦ালার পরও তা নিভিয়ে দিতে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ী বীর সি আর দত্ত বীর উত্তমকে কষ্ট মেনে নিতে হয়েছে স্বাধীন দেশেও। দেশকে কারা স্বাধীন করেছে? কেন করেছে? সেই সকল কথা ভুলে গিয়ে অবিরত তাদেরকে করা হয়েছে মানষিক নির্যাতন-নিষ্পেষন। প্রতিবাদে দেশের সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধ হতে না পারলেও সি আর দত্ত তাঁর মত করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন-প্রতিরোধ করেছেন অন্যায়-অপরাধ-দুর্নীতি।
প্রতিবাদের প্রতিচ্ছবি সি আর দত্ত বীর উত্তমকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজে জাতির সামনে সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করলেও স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি তাকে করেছিলো বারবার হেয়। হয়তো এ কারণেই ১৯৮৪ সালের জানুয়ারিতে তাঁকে বাধ্য হয়ে চাকরি থেকে অবসর নিতে হয়। তখন মুক্তিযুদ্ধের বিপরীত শক্তি ক্ষমতায়। তারা কল্যাণ ট্রাস্টের ফ্যাক্টরি, কোকা-কোলার মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা করছিল। অনেক ধনীও সেগুলো কিনতে জোর চেষ্টা-তদবির করছিল। তবে তিনি সেগুলো বিক্রি করতে দিচ্ছিলেন না। কারণ এগুলোই ছিল শহীদ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের একমাত্র আয়। ফলে তৎকালিন সরকারের নির্দেশে আইনবহির্ভূতভাবে এলপিআর ছাড়াই তাকে অবসর নিতে হয়েছে।
চরম মানষিক কষ্ট পেয়েছিলেন বলেই হয়তো স্বাধীন বাংলাদেশে-স্বাধীনতা বিরোধী-দুর্নীতিবাজদের আস্ফালন দেখে বলেছিলেন- আমি মুক্তিযুদ্ধ করে এই দেশকে স্বাধীন করেছি। কখনোই ভাবিনি, আমাকে এ দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অধিকার ও নিরাপত্তার জন্য লড়াই করতে হবে। কারণ আমি বাঙালিত্বের চেতনায় বিশ্বাস করি। তবে ১৯৮৮ সালের ২০ মে যখন ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করার বিল পার্লামেন্টে উঠল, দেশ পাকিস্তানি ধারায় প্রত্যাবর্তন করল, তখন কিন্তু সমসাময়িক অফিসার-অধীনস্থদের বলেছি, বাংলাদেশকে ধর্মীয় রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি। এখনো এটিই বলি- এই আমার বিশ্বাস। যখন বিলটি পার্লামেন্টে গেল, বিচারপতি দেবেশ ভট্টাচার্য, আমি, বিচারপতি রণধীর সেন, কে বি রায় চৌধুরী, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সুধাংশু শেখর হালদার, নির্মল সেন প্রমুখ সংখ্যালঘু নেতৃস্থানীয় ভাবলাম, সংবিধানকে আজ শুধু সাম্প্রদায়িকীকরণই করা হয়নি, ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করার মাধ্যমে দেশ সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের দিকেও চলে যাচ্ছে। আড়াই কোটি মানুষকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যে চেতনা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছি, সেটি থেকে দেশ সরে যাচ্ছে...
কতটা সরে গেছে দেশ স্বাধীনতার চেতনা থেকে, অধিকার থেকে? এই প্রশ্ন তিনি বেঁচে থাকতে করেছিলাম। উত্তরে তিনি বলেছিলেন- যতটা সরে গেলে লুটপাট-দুর্নীতিতে দেশ বিশে^র বুকে বারবার চ্যাম্পিয়ন হয়।’ অনন্য সেই উত্তরের পর অনেক দিন চলে গেলো। আমরা ২৫ আগস্ট হারালাম কালের কিংবদন্তি বিজয়ীবীর সি আর দত্ত বীর উত্তমকে। কেবল থেকে গেলো তাঁর সাহসকথা আর রণাঙ্গণের বিজয়। যে বিজয় আজ যখন তখন কেড়ে নিতে চায় অপরাধী-ধর্মব্যবসায়ী আর দুর্নীতিবাজরা। সবাই মিলে চলুন নিবেদিত হই দেশের জন্য নিরন্তর...
মোমিন মেহেদী : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি