লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে কৃষককে গাছের সাথে বেধেঁ বর্বর নির্যাতনের ঘটনায় ১০ দিন পর ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে নির্যাতিত কৃষক আমীর হোসেন বাদী হয়ে স্থানীয় চররমনী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়াল ও ইউপি সদস্য স্বপনকে অভিযুক্তকরে মামলায় ৮ জনকে আসামি করা হয়।
পুলিশ জানান,সদর থানায় মামলার পর ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে জুলহাস,সাইফুদ্দিন ও লেদুমুন্সিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এর আগে ২৩ আগস্ট সোমবার রাতে কৃষক আমীর হোসেন বাজার হতে বাড়ী ফেরার পথে প্রতিবেশী সোহাগ, জুলহাস, আরিফ হোসেন ও দেলু নামে কয়েকজন ব্যাক্তি তাকে আটক করে চুরির অপবাধ দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে বর্বর নির্যাতন চালায়। পরে শোর চিৎকারে পরিবারের লোকজন এগিয়ে এলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়াল ও ইউপি সদস্য স্বপনকে খবর দেয় তারা। ইউপি সদস্য স্বপনের বাড়িতে নিয়ে একটি সালিশ বৈঠকের আয়োজন করে চেয়ারম্যান। ওই বৈঠকে তাকে বেধম মারধর করা হয়। ওসময় কৃষক আমীর হোসেন জ্ঞান হারিয়ে ফেললে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে।
কৃষকের স্ত্রী ও সন্তানরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়াল তাদের কাছে ২০শতক জমি দিতে চাপ সৃষ্টি করে। ওই জমি না দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে চেয়ারম্যানের নির্দেশে চুরির অপবাদের নাটক সাজিয়ে গাছের সাথে বেঁধে বর্বর নির্যাতন চালানো হয়। যাহা কোনভাবে মেনে নিতে পারছেন তারা।এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী জানিয়ে কৃষক আমীর হোসেনের হাসপাতালে চিকিৎসার চালিয়ে যান তারা। এরপর কিছুটা সুস্থ হলে এ ঘটনার মূল হোতা ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়াল ও ইউপি সদস্য স্বপনকে অভিযুক্তসহ ৮ জনকে মামলা আসামি করা হয়। পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করলে ও ঘটনার মূল হোতা ইউপি চেয়ারম্যানের গ্র্রেপ্তার দাবী জানিয়েছেন তারা।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান,কৃষক আমির হোসেনকে চুরির করার অভিযোগ দিয়ে গাছের সাথে বেঁেধ এভাবে নির্যাতন চালানো কোনভাবে মেনে নেয়ার মত নয়। এমনটি সভ্য সমাজে হতে পারেনা। এ বিষয়ে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান তারা।
সদর হাসপাতালের মেডিকেল কর্মকর্তা ডা.আরমানুর রহমান অপু জানান,কৃষক আমির হোসেনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহৃ রয়েছে। চিকিৎসা চলছে। ভালো হতে সময় লাগবে। শালিস বৈঠক বসিয়ে তার উপর যা হয়েছে তা রিতিমত অন্যায় করা হয়েছে।
সদর উপজেলার চররমনী মোহন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়াল জানান,এলাকায় আরো কয়েকটি চুরির ঘটনায় আমীর হোসেনের নাম অনেকে তার নিকট অভিযোগ করেন। তবে মালামাল নিয়ে এ পর্যন্ত কারো বাড়িতে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েনি আমীর হোসেন। তবে চোর সন্দেহে কিছুদিন আগে লোকজন আটক করে মারধর করে। বিষয়টি শুনার পর তিনি স্বপন মেম্বারের বাড়িতে যান খোঁজ নিতে। সেখানে যারা তাকে নিতে এসেছেন তাদের নিকট থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাদের সাথে জমির বিষয়ের সাথে জড়ি নয় বলে দাবী করেন তিনি।
সদর থানার ওসি তদন্ত মো.মোছলে উদ্দিন জানান,সদর উপজেলা চররমনীমোহন এলাকায় চুরির অপবাদে গাছের সাথে বেঁেধ বর্বর নির্যাতনের ঘটনায় স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারসহ ৮ জনকে অভিযুক্ত করে থানায় মামলা হয়েছে। ওই মামলায় এ পর্যন্ত তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকী আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।