আমতলীতে বাশের সাকোকে আয়রণ ব্রীজ দেখিয়ে সংস্কারের গায়েরী প্রকল্প প্রাক্কলন তৈরী করে দখিয়ে টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। গত ২৮ জুলাই বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফোরকান আহম্মেদ খান এ টেন্ডার আহবান করেন। খাল নেই, সেতুও নেই, রয়েছে বাঁশের সাঁকো। আমতলীর ওই বাঁশের সাঁকোকে আয়রণ ব্রীজ দেখিয়ে সংস্কারের প্রাক্কলন তৈরি টেন্ডার আহবান করায় সরেজমিনে তদন্ত করে টেন্ডার বাতিল এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়ে ঠিকাদার এবং স্থানীয় জনগন। এদিকে বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফোরকান আহম্মেদ খান এ টেন্ডার বাতিলের জন্য গত ২৭ আগস্ট স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরে প্রধান প্রকৌশলী বরাবরে চিঠি দিয়েছেন।
জানাগেছে, বরগুনা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ২০২০-২১ অর্থ বছরে আইবিআরপি প্রকল্পের আওতায় ওটিএম পদ্ধতিতে গত ২৮ জুলাই ৮ টি প্যাকেজে ৩৩টি আয়রণ ব্রীজ জন্য টেন্ডার আহবান করে। যার প্রাক্কলন ব্যয় দরপত্রে উল্লেখ নেই। আগামী ৬ সেপ্টেম্বর ওই টেন্ডারে অংশ গ্রহনের শেষ দিন যা ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। টেন্ডার নোটিশ প্রকাশিত হওয়ার পর বেড়িয়ে আসে অনিয়মের আসল চিত্র। ৩৩ টি সেতুর মধ্যে ২৫ টি আমতলী উপজেলার হলদিয়া, গুলিশাখালী ও আমতলী সদর ইউনিয়নে এবং ৮ টি সেতু তালতলী উপজেলায়। টেন্ডার নোটিশে উল্লেখ আছে আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের বাঁশবুনিয়া খালের দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় সামনে আয়রণ ব্রীজ। অপর দিকে একই স্কুলের সামনে একই ব্রীজ নাশবুনিয়া খালে দেখানো হয়েছে। দৃশ্যত নাশবুনিয়া নামে কোন খাল নেই। দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া গ্রামের মুনসুর মিয়া ও আবদুল গনি গাজী বলেন, নাশবুনিয়া নামে হলদিয়া ইউনিয়নে কোন খাল নেই। একই ইউনিয়নের তুজির বাজার ও রামজির বাজারে নামক স্থানেদুইটি ব্রীজ মেরামতের কথা উল্লেখ রয়েছে ওই নোটিশে। কিন্তু তুজির বাজার ও রামজির বাজারের সামনের হলদিয়া খালে কোন ব্রীজ নেই, আছে বেিশর সাকো। স্থানীয় এক শিক্ষক মতিয়ার রহমান জানান আমার ৬০ বছর বয়সে এখানে কোন ব্রীজ দেখিনি। এলাহিয়া দাখিল মাদ্রাসার সামনে এবং দক্ষিণ রাওগা কেরাতুল কোরান মাদ্রাসার সামনে ব্রীজ মেরামত দেখানো হয়েছে কিন্তু ওই দুই মাদ্রাসার সামনের খালেও বাঁশের সাঁকো।
একই চিত্র গুলিশাখালী ও আমতলী সদর ইউনিয়নে। গুলিশাখালী ইউনিয়নের একই সড়কে ৬টি ব্রীজু মেরামত দেখানো হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে ,কয়েকজন প্রভাবশালী ঠিকাদারের যোগসাজসে বরগুনার স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগ সরেজমিনে পরিদর্শন না করে ৩৩টি ব্রীজের প্রাক্কলন তৈরী করেছেন। এ ছাড়া ওই ৩৩ টি ব্রীজ সংস্কারের প্রাক্কলন তৈরিতে রয়েছে নানাবিধ অনিয়ম। প্রাক্কলনে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের চেয়ে দ্বিগুন অর্থ বরাদ্দ দেয়া, টেন্ডারে প্রাক্কলন ব্যয় উল্লেখ না থাকা, জনস্বার্থে বীজ নির্মাণ না করা, ব্রীজের অ্যাপ্রোচ সড়কে প্রয়োজনের তুলনায় চারগুন অর্থ বরাদ্দ দেয়া ও পুরাতন ব্রীজের ব্যবহারযোগ্য মালামাল স্যালভেজ হিসেবে অন্তর্ভক্ত না করা। ওই প্রাক্কলনে প্রত্যেকটি ব্রীজের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও গভীরতা বেশী দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ঠিকাদার গাজী ফারুক আহম্মেদ।ঠিকাদারদের অভিযোগ প্রভাবশালী ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য প্রচলিত পদ্ধতিতে দরপত্র আহবান না করে ওটিএম পদ্ধতিতে টেন্ডার আহবান করা হয়েছে এবং ওটিএম পদ্ধতিতে এমন শর্ত জুড়ে দিয়েছেন যাতে অন্য ঠিকাদারগন টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে না পারেন। টেন্ডার নোটিশে প্রাক্কলন ব্যয় উল্লেখ না থাকায় কমিশনে সাধারণ ঠিকাদারগণ টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। এ ছাড়া প্রচলিত পদ্ধতিতে একটি কাজের জন্য একটি প্যাকেজ তৈরির নিয়ম থাকলেও নির্বাহী প্রকৌশলী ওই প্রকল্পের ৩৩টি কাজকে ৮ টি প্যাকেজ করে টেন্ডার আহবান করেছেন যা নিয়ম বর্হিভুত।
সরেজমিনে ঘুরে দেখাগেছে, তুজির বাজার, রামজির বাজার, এলাহিয়া দাখিল মাদ্রাসা ও কেরাতুল কোরান মাদ্রাসার সামনে কোন সেতু নেই। ওই চারটি স্থানে রয়েছে দীর্ঘ বাঁশের সাঁকো। ওই বাঁশের সাকো দিয়ে মানুষ পারাপার হচ্ছে। হলদিয়া ইউনিয়নে নাশবাড়িয়া খালে যে সেতু দেখানো হয়েছে ওই নামে কোন খাল খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে আমতলী ঠিকাদার সমিতির সভাপতি জিএম ওসামানী হাসান বলেন, বরগুনা স্থানীয় সরকার নির্বাহী প্রকৌশলী ফোরকান আহম্মেদ খান মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে প্রভাবশালী ঠিকাদারদের যোগসাজসে ৩৩টি আয়রণ ব্রীজ সংস্কারের প্রাক্কলন তৈরি করেছেন। তিনি আরো বলেন, তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আমতলী উপজেলায় ৫৫ টি আয়রণ ব্রীজ তৈরীর টেন্ডার আহবান করা হয়েছিল। ওই ব্রীজগুলোর অধিকাংশ নির্মাণ না করেই টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এখন আবার ওই ব্রীজগুলো সংস্কার দেখিয়ে প্রাক্কলন তৈরি করে টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। তিনি টেন্ডার বাতিল পূর্বক পুনরায় সরেজমিনে সার্ভে করে প্রাক্কলন তৈরির আহবান জানান।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বরগুনা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফোরকান আহম্মেদ খানের জানান এ প্রাক্কলনের দায়ভার আমার নয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে টেন্ডার আহবান করা হয়েছে এবং আমি ঠিকাদারদের অভিযোগে সত্যতা পেয়ে গত ২৭ আগস্ট এ টেন্ডার বাতিলের জন্য প্রধান প্রকৌশলীকে চিঠি দিয়েছি।