এবারের বন্যায় রাজশাহীর রাস্তা, বিভিন্ন স্থাপনাসহ মাছ চাষ ও অন্যান্য ফসলের চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ধান চাষীরা। রাজশাহীর কৃষি দফতরের তথ্য মতে, এবারের বন্যায় এ এলাকার কৃষিতে মোট ৪০ কোটি ৬৩ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। যার মধ্যে শুধু ধানের ক্ষতি হয়েছে ৩০ কোটি ৮৯ লক্ষ। এ ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের সংখ্যা ৩২ হাজার। আর চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ধান, পান, শাক-সবজিসহ অন্যান্য ফসলে মোট ৩২ হাজার ৩৪৪ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এ বিপুল সংখ্যক কৃষকের কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারিভাবে মাত্র ৪ হাজার ধান চাষীদেরকে বিনামূল্যে মাসকালাই বীজ ও তিন হাজার ২০০ কৃষককে সার-বীজ প্রদান করা হচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ এসব ধান চাষীরা উত্তরণের উপায় খুঁজছেন বলে জানিয়েছেন।
এমনই এক কৃষক রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ধান চাষী মফিজ উদ্দিন। প্রতিবছরের মত এই ৫ বিঘা জমিতে আউশ ধান লাগিয়েছিলেন। কিন্তু অতিবৃষ্টি বন্যায় তার পুরো মাঠের ধান ডুবে গেছে। তার ৫ বিঘার মোট ৫০ হাজার টাকার পুঁজি এখন পানিতে নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন একই উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভা এলাকার কৃষক সাজেদুর রহমানও। পরবর্তীতে জমিতে একটু পানি কমায় তিনি নতুন করে রোপা-আমন ধান লাগাচ্ছেন। একই উপজেলার রফিকুল ইসলাম ধান লাগিয়েছিলেন প্রায় সাড়ে চারবিঘা জমিতে। তার জমির ধানও পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে। এ কারণে তিনি লোকসানের খাতায় ৪০ হাজার টাকা গুনছেন।
পুঠিয়া উপজেলার মেরাজুল ইসলামের দেড় বিঘা জমির আউশ ধান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তিনি বলেন, ধানের এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমার পাশে থাকা ক্ষতিগ্রস্থ অন্যান্য কৃষকদের সাথে কথা বলে সম্মিলিতভাবে সীমানা ঘিরে ৫০ হাজার টাকার মাছ ছাড়া হয়েছে।
মোহনপুর উপজেলার ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক শামসুদ্দিন তার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নতুন করে জমিতে রোপা-আমন ধান লাগাচ্ছেন। তার মত ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা বিভিন্ন উপায়ে তাদের ক্ষতি পুশিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় এখন জমিতে পরিশ্রম করতে ব্যস্ত থাকছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অফিস সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে এই বর্ষা মৌসুমে রোপা-আমন ধানের আগে ৫০ হাজার ৯৭০ হেক্টর আউশ ধান রোপণ করা হয়েছিলো। কিন্তু অতিবৃষ্টির কারণে জেলার কয়েটি উপজেলায় বন্যা হয়। এই বন্যায় কয়েক উপজেলার দুই হাজার ৭০০ হেক্টর জমির ধান পানিতে ডুবে নষ্ট হয়েছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৩০ কোটি ৮৯ লক্ষ টাকা। আর কৃষকের এ ক্ষতি রক্ষার্থে এখন কাজ করছে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। চলতি মৌসুমে রাজশাহীর উপজেলাতে মোট ৫০ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। প্রতি বছরের মত এবারো জেলার তানোর ও গোদাগাড়ী উপজেলায় এলাকায় সবচেয়ে বেশি মৌসুমী ধান রোপন করা হয়েছে। আর মাত্রাতিরিক্ত জলাবদ্ধতার কারণে জেলার বাগমারা, মোহনপুর, দুর্গাপুর, পুঠিয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
এ বিষয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামছুল হক জানান, বর্ষায় এবার বন্যার কারণে কৃষিতে মোট ৪০ কোটি ৬৩ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এর মাঝে ৩২ হাজার ধানের কৃষকের ক্ষতি ৩০ কোটি ৮৯ লক্ষ। আর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে মোহনপুর ও বাগমারা উপজেলায়। এখানে কৃষকের ধান তলিয়ে গেছে। আমরা এসব কৃষকের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে সরকারিভাবে ৪ হাজার কৃষককে বিনামূল্যে মাসকালাই বীজ ও তিন হাজার ২০০ কৃষককে সার ও বীজ দিচ্ছি বলেও জানান কৃষি কর্মকর্তা।