ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলা সদরের পাশেই মেঘনা নদীর বুকে জেগে উঠা এক অবহেলিত চর সোনারামপুরের ছয় হাজারের বেশি জনগণকে বিদ্যুতের সুবিধা না দিয়েই আশুগঞ্জ উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা ঘোষণা করা হয়েছে। কবে নাগাদ বিদ্যুৎ সংযোগ পাবে- তা সুনির্দিষ্টভাবে জানে না স্থানীয় বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে এক ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল, আশুগঞ্জ ও নবীনগর উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা ঘোষণা করেন। এটি প্রধানমন্ত্রীর সাথে বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের প্রতারণা বলে মনে করছেন অনেকেই।
আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের এ ধরনের কর্মকাণ্ডে হতাশাগ্রস্ত ও ভোগান্তিতে রয়েছে চরে বসবাসকারি লোকজন। এদিকে এ ঘটনাকে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য একটি চক্র তথ্য গোপন করেছে বলে অভিযোগ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের।
সরেজমিনে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের মেঘনা নদীর বুকে জেগে উঠা চর সোনারামপুরের বর্তমান জনসংখ্যা ৬ হাজারের বেশী (৬৪২২)। এদের বেশীর ভাগ-ই অল্প আয়ের জেলে পরিবার। চরের পাশেই মেঘনার তীর ঘেষে রয়েছে দেশের ব্রৃহ্ত্তম আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আশুগঞ্জ-সিরাজগঞ্জ ২৩০ কেভি জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের বিশাল টাওয়ার। হাতের কাছে এসব আয়োজন থাকলেও নানা কারণে তারা দীর্ঘদিন যাবত বিদ্যুতের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তবে বর্তমান সরকারের ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ এ কর্মসুচির আওতায় ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশনায় সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে চলতি মুজিব শতবর্ষে চরে বিদ্যুৎ সংযোগের উদ্যোগ নেয়া হয়। কয়েক মাস যাবত কাজ করে চরের চারপাশে লাগানো হয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। তবে সাবমেরিন ক্যাবল ও অন্যান্য অনেক কাজ বাকি থাকায় গ্রাহক পর্যায়ে এখনো সংযোগও দেয়া হয়নি।
জানা গেছে, বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প কুমিল্লা জোনের আওতায় চর সোনারামপুরে বিদ্যুৎ দেয়ার প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। তবে সাবমেরিন ক্যাবল কবে আসেেব আর কবে নাগাদ চরবাসী বিদ্যুৎ পাবে তা সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে পারেননি আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ কর্তৃপক্ষ।
এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার (২৭ আগষ্ট) প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে আশুগঞ্জ, নবীনগর ও সরাইল উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের উদ্বোধন করেন। এ উপলক্ষে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় জেলা প্রশাসক হায়াৎ উদ দৌলা খান, পুলিশ সুপার মোঃ আনিসুর রহমানম অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ শামসুজ্জামানসহ বিদ্যুৎ বিভাগ ও সরকারি দপ্তরের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। কিছু স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে বিষয় প্রচারিত হয়।
এতে চর সোনারামপুরে বসবাসকারি জনগণের মাঝে হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা মনে করছেন দীর্ঘ অপেক্ষার পর প্রধানমন্ত্রীর একান্ত ইচ্ছায় তারা বিদ্যুতের সুবিধা পেতে যাচ্ছিল। এখন যেহেতু বিদ্যুৎ সংযোগ না দিয়েই শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা ঘোষণা করা হয়েছে তাই প্রধানমন্ত্রীও বিষয়টি নিয়ে আর ভাববেন না। এদিকে এ ঘটনায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ক্ষুব্ধ। তারা মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরকে তথ্য গোপন করে এই কাজ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে তারা প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
চর সোনারামপুরে বসবাসকারি শিপন দাস, পংকজ চক্রবর্তীসহ আরো অনেকেই বলেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর চরে বিদ্যুৎ পাওয়ার আশায় ছিলেন। কিন্তু তাদের বাদ দিয়ে আশুগঞ্জকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা ঘোষণা করায় তারা হতাশ। এখন কবে বিদ্যুৎ পাবে, আদৌ পাবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কিত তারা।
আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য ও চরের বাসিন্দা মো. ইব্রাহিম মোল্লা বলেন, চরসোনারামপুরে বিদ্যুৎ না দিয়ে আশুগঞ্জকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা করা চরবাসীর সাথে বিদ্যুৎ বিভাগের এটি এক ধরনের প্রতারণা। দ্রুত তিনি চরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার দাবি জানান।
আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, তথ্য গোপন করে বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এমন করেছে। তাদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সুলতান মাহমুদ বলেন, চর সোনারামপুরে বিদ্যুৎ দেয়ার সকল কাজ বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সাবমেরিন ক্যাবল এলেই চরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হবে। তবে সাবমেরিন ক্যাবল কবে নাগাদ আসতে পারে তা সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে পারেননি তিনি।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক হায়াত-উদণ্ডদৌলা খান বলেন, চর সোনারামপুর বিদ্যুবিহীন রয়েছে কিনা এই বিষয়টি খোঁজ-খবর নিয়ে আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি।