মাছের ঘেরে টেনে নেয়া ঝুলন্ত ক্যাবল পায়ে জড়িয়ে রজমান আলী নামের সতের বছরের এক তরুনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। পেশায় দিনমজুর ঐ তরুন সহযোগীকে নিয়ে শুক্রবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে বাড়ির অনতিদুরে শ্রীফলকাটি গ্রামের মোড়ল ফিস নামীয় সাদা মাছের ঘেরে মাছ সংগ্রহ করতে যেয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়।
সে শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের ধুমঘাট গ্রামের শুকর আলীর চার ছেলের মধ্যে কনিষ্ট। এদিকে দুর্ঘটনার পরপরই শ্যামনগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে মৃতদেহ উদ্ধার করে। তবে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছনোর আগেই মোড়ল ফিস এর মালিক ফেরদাউস মেম্বরের ছেলে সামিউল, ম্যানেজার সাইফুলসহ কর্মচারীরা পালিয়ে যায়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য বিরেন মন্ডল ও আবদুস সোবহান জানায় শুক্রবার সকালে মোড়ল ফিসের কর্মচারীরা মাছ ধরছিল। এ সময় বন্ধুকে নিয়ে রমজান প্রজেক্টের নির্ধারিত পুকুরে যাওয়ার সময় এক কিলোমিটার দূর থেকে টেনে নিয়ে আসা বিদ্যুৎ এর ক্যাবল তার পায়ে জড়িয়ে যায়। সাথে থাকা সহযোগী সাহায্যের জন্য মাছ ধরার কজে ব্যস্ত সাইফুল ও সামিউলসহ অন্যান্যের ডাকাডাকি করলেও তারা কেউ এগিয়ে আসেনি। বরং ‘মরে যাক, তারপর আসবো’- বলে উত্তর দেয়।
স্থানীয়রা আরও জানায় কেউ সাহায্যে এগিয়ে না আসায় অল্প সময়ের মধ্যে রমজানের মুত্য হয়। পরবর্তীতে প্রজেক্ট মালিক ফেরদাউস মেম্বরের ছেলে সামিউল ও ম্যানেজার সাইফুলসহ অন্যরা ঘটনাস্থলে এসে তার মৃতদেহ দেখে পালিয়ে যায়। পরক্ষনে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে মৃতদেহ উদ্ধার করে।
স্থানীয় গ্রামবাসী বাবুল হোসেনসহ অন্যরা জানায় বিদ্যুৎ বিভাগের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মচারী ও স্থানীয় পরিচালককে আর্থিক সুবিধা দিয়ে মোড়ল ফিস কতৃপক্ষ মিটার থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দুরের পুকুরসমুহে বিদ্যুৎ সংযোগ টেনে নেয়। নির্ধারিত মাসোহারা পাওয়ার কারণে পরিচালক ও বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারীরা গত কয়েক বছরে ধরে ঐ প্রজেক্টে একাধিক দুর্ঘটনার পরও বিষয়টি এড়িয়ে গেছে।
তারা অভিযোগ করেন যে কিছুদিন পুর্বে ঐ প্রজেক্টের অবৈধভাবে টেনে নেয়া ক্যাবলে জড়িয়ে স্থানীয় আবুল হোসেনের একটি গরু মারা যায়। এ ছাড়া এক বছর পুর্বে ঘাস কাটতে যেয়ে স্থানীয় সুবোল মন্ডলের স্ত্রী সুনীতি মন্ডল আহত হলে তার একটি আঙল কেটে ফেলতে হয়। তারপরও কৃতপক্ষ কিংবা বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষে থকে কোন পদক্ষেপই নেয়া হয়নি। কতৃপক্ষের হঠকারিতা এবং বিদ্যুৎ বিভাগের দুর্নীতির কারণে তরুন রমজানের মৃত্যু হয়েছে বলেও তাদের দাবি।
এদিকে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছে প্রভাবশালী একটি মহল মোড়ল ফিস এর মালিকের নিকট থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে নিহতের পরিবারকে ম্যানেজ করা চেষ্টা করছে।
ঝুঁকির বিষয়ে বার বার প্রজেক্ট সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সত্ত্বেও প্রতিকার মেলেনি বলেও তাদের অভিযোগ।
এদিকে দুর্ঘটনার পর পালিয়ে যাওয়া প্রজেক্ট মালিক সামিউল ইসলাম ও ম্যানেজার সাইফুল ইসলামের মুটোফোনে চেষ্টা করেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের শ্যামনগর অঞ্চলের ডেপুটি নোরেল ম্যানেজার মধুসুদন রায় জানা, আপাতত প্রজেক্টের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। অফিস থেকে দীর্ঘ পথ বিদ্যুৎ সংযোগ টেনে নেয়ার ঘটনায় তদন্ত করে জরিমানাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
শ্যামনগর থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ মোঃ নাজমুল হুদা বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছেছে।