নির্বাচন এবং নির্বাচন কমিশন একই সূত্রে গাঁথা। সুন্দর, সুষ্ঠু, অবাধ, কারচুপি মুক্ত ও হুন্ডা গুন্ডা মুক্ত নির্বাচন যেমন দেশের ভোটার, আপামর জনসাধারণ, বর্হিবিশ্বে যেমন ইসি, সিইসি ও দেশের গণতান্ত্রিক মূল্য বোধের বিকাশ ঘটে, ইসি, সিইসির মর্যাদা বৃদ্ধি করে, তেমনি ভোট কারচুপি, ভোট কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাক্স ছিনতাই, বাধাহীনভাবে একতরফা ভোট অনুষ্ঠান, নির্বাচন কমিশন এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ভাবমূর্তি তলানিতে চলে যায়। তাছাড়া ইসি এবং সিইসির প্রতি দেশের মানুষ, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, রাজনৈতিক দল ও ভোটারের কোনো আস্থা থাকেনি।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ, ইউপি, পৌরসভা, উপজেলা ও অনেক সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তন্মধ্যে জেলা পরিষদ নির্বাচন যেহেতু পাকিস্তানি আমলের বেসিক ডেমক্রেসী বা মৌলিক গণতন্ত্রের পরোক্ষ ভোটের আদলে হয়েছে বলে এ নিবন্ধে সে প্রসঙ্গে যেতে চাচ্ছি না। এ পর্যন্ত দেশে ৭৩, ৭৯, ৮৬, ৮৮, ৯১, ৯৬- ১৫ ফেব্রুয়ারি, ৯৬-১২ জুন, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারের পর্ষদে অনেকগুলো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। স্থানীয় সরকারের অনেক পর্ষদের নির্বাচন স্বাধীনতার পর থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসলেও ১৯৮৫ সালে প্রথম উপজেলা নির্বাচনের সূচনা হলেও বিএনপি ৯১ সালে ক্ষমতায় এসে উপজেলা নির্বাচন বাতিল করে। পরবর্তী সময় ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসে উপজেলা পদ্ধতি ও উপজেলা নির্বাচন পুণরায় চালু করে থাকে। পরবর্তীতে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন পদ্ধতি চালু হয়ে থাকে। এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ, সিটি, উপজেলা, ইউপি ও পৌরসভার নির্বাচনগুলো কি ধরণের হয়েছে তা সবারই জানা। এ ব্যাপারে বিশদ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও বর্ণনায় যাওয়ার প্রয়োজন মনে হয় না। তবে এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বিভিন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ইউপি, পৌরসভা, উপজেলা ও সিটি নির্বাচনে যে অনিয়ম, কারচুপি ও ভোটের নামে যে মহা হরিলুট ও রক্তগঙ্গা বয়ে গেছে বিভিন্ন পরিসংখ্যানে তা বিশাল ও ব্যাপক বলে জানা যায়। এ সমস্ত নির্বাচনের তথ্য ও সূত্র মতে ভোটের নামে হরিলুট, অরাজকতা, কারচুপি ও তামাশা ছাড়া অন্য কিছুই পরিলক্ষিত হয়নি। যা গণতন্ত্র, নির্বাচন ও ভোটারদের জন্য দুঃখ, বেদনা, অশ্রুধারা ও মর্মান্তিকতারই নামান্তর। যা কোনো অবস্থাতেই মেনে নেয়নি দেশের মানুষ। পরবর্তী সময়ে স্থানীয় সরকারের দলীয় মনোনয়নে ইউপি, পৌরসভা, উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যে ভোট কারচুপি, হরিলুট, ভোট কেন্দ্র দখলের পরও নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে জয় বিজয় ও পরাজিত প্রার্থীদের নামে ঘোষণা করে থাকে। যার ফলশ্রুতিতে ভোটার ও দেশের জনগণের কাছে আরও বিষাদ ও হতাশার সৃষ্টি করে থাকে। যা দেখে সমাজের অনেকেই নির্বাচন সম্পর্কে নিরোৎসাহ বোধ করে এবং যে কোনো নির্বাচনে উৎসাহী মন নিয়ে সামনে এগিয়ে আসতে চায় না।
৭৩, ৮৬, ৮৮, ৯৬ এর ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে কি ধরণের অরাজকতা হয়েছে তাও সবারই জানা। অন্যান্য নির্বাচনের মতো ৯৬ এর ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের অপবাদ থেকে বিএনপিও বাদ পড়েনি। ৮৬ সালে এরশাদের সামরিক সরকারের
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আসলেও বিএনপি আসেনি। ৮৮ সালের এরশাদের পাতানো নির্বাচনে অনেকে আসলেও দেশের বড় দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি অংশ গ্রহণ করেনি। তবে জেএসডির আ.স.ম রবের নেতৃত্বে নামকাবাদ হরগঙ্গা পার্টি বলে জনগণের কাছে পরিচিত ২৩ দলীয় সম্মিলিত বিরোধী দল (কপ) নির্বাচনে আসে এবং আ.স.ম রব এরশাদের পার্লামেন্টে বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে অলংকিত হয়।
রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে অনুষ্ঠিতব্য ৭৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ গ্রহণ করে। তাতে আওয়ামী লীগের আছাদুজ্জাামন খান বিরোধী দলের নেতা হিসেবে মন্ত্রীর মর্যাদায় সকল প্রকার সরকারি সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করে থাকে। সমসাময়িক দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট নিয়ে যা ঘটেছে, তা কারও না জানার কথা নয়। এই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। জাতীয় পার্টির এ ব্যাপারে অনেক নাটক করলেও অবশেষে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ২৯টি আসন পায়। এ নির্বাচনে ১৪৫ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবে জয়লাভ করে। এ সংসদেও জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হিসেবে অলংকিত হয়। এ নির্বাচনে ভোটের আগের দিন ২৯ তারিখ রাতে হয়ে গেছে বলে বিএনপি, গণফোরামের ড. কামাল হোসেন, জেএসডির আ.স.ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ আরও অনেক রাজনৈতিক দল, সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বিভিন্ন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পর্ষদ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, দেশী, বিদেশী প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া অভিমত রাখে।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারের অন্যান্য নির্বাচনে সিইসি কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারের অন্যান্য নির্বাচনে বর্তমান ইসি ও সিইসি কে.এম নূরুল হুদা যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা শুধু মানুষের মন থেকে নয়, ইতিহাসের পাতা থেকেও মুছে যাওয়ার নয় বলে অনেক অভিজ্ঞজনরা মনে করে থাকে। জানা যায়, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন চলাকালীন সময়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) গুরুত্বপূর্ণ পদে সমাসীন থাকার পরও বিদেশে মেয়ের বাড়ীতে বেড়ানোর কথা বলে চলে যান। যা নিয়ে কম সমালোচনা হয়নি। তাতে মনে হয়েছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে তিনি আমলেই নেননি। তা না হলে উপজেলা নির্বাচনের সময় কাজী রকিব উদ্দিন আহম্মদ সিইসি হয়ে মেয়ের বাড়ীতে বেড়ানোর কথা বলে বিদেশে যাওয়ার কথা নয়। সিইসির অবর্তমানে উপজেলা নির্বাচন কি রকম হতে পারে তা হয়তো বলার অবকাশ নেই।
ইতিহাস বড়ই নির্মম, নিষ্ঠুর। কাহাকেও ক্ষমতা করেনি। একনায়ক আইয়ুব খানের আমলে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে মৌলিক গণতন্ত্রের মাধ্যমে প্রতিনিধিত্বমূলক একতরফা ভোটের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে বোকা বানিয়ে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে সমাসীন থাকে। সেই সময় জাতীয় সংসদ সদস্য (এমএনএ) প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য (এমপিএ), জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, মেম্বার একই কায়দায় নির্বাচিত করা হয়ে থাকে। সেই সময় নির্বাচন কমিশন ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কী ভূমিকা ছিল যা কারও জানতে অসুবিধা হয়নি। বিলম্বে হলেও তা ইতিহাসের পাতায় স্থান পেয়েছে। এ ব্যাপারে স্বনামধন্য লেখকদের বহু বই বেড়িয়েছে। “একনায়ক আইয়ুবের মৌলিক গণতন্ত্র” বইটি পড়লে গণতন্ত্র হরণের চিত্র ভেসে ওঠে। যা শরীর শিহড়িয়ে ওঠার মত। স্বাধীন বাংলাদেশের নির্বাচন প্রেক্ষাপট নিয়ে এদেশের নির্বাচন, নির্বাচন কমিশন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ভূমিকা নিয়ে বই পুস্তক বেড় হলে হয়তো অনেক অজানা তথ্য জানা যাবে। যা হয়তো দেশের মানুষ ও আমার মতো অনেকেই তা জানে না।
১৯৯৭ সালে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) আবু হেনার আমলে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ফোরাম (নিপপো) চেয়ারম্যান হিসেবে কিশোরগঞ্জ সদর, বাজিতপুর, ভৈরব ও নেত্রকোনা জেলার কয়েকটি পৌরসভার নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ হয়েছিল। তখন কিশোরগঞ্জ জেলার নির্বাচন কর্মকর্তা ছিলেন মোঃ এমরান এবং নেত্রকোনা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ছিলেন মোঃ মাহফুজ। সেই সময় যে সমস্ত পৌরসভায় বেসামাল ভোট কারচুপি ও অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়েছিল, এসবের আদ্যোপান্ত বিশ্লেষণসহ নির্বাচনের পর সিইসির নিকট একটি প্রতিবেদন পেশ করেছিলাম। প্রতিবেদনটি দেখে তিনি বলেছিলেন নির্বাচনে ভোট নিয়ে এমন হওয়া কারও কাম্য নহে। যে কোন পর্ষদের নির্বাচন সুষ্ঠু, কারচুপিমুক্ত, অবাধ, স্বচ্ছ হওয়া ইসি, সিইসিসহ সবারই কাম্য। নির্বাচনের অনিয়ম, কারচুপি রোধ করতে না পারলে ভোটার ও দেশের জনগণের নিকট ইসি ও সিইসির গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। নির্বাচনের এ সংস্কৃতি সবার জন্যই খুব দুঃখজনক। আরও বলেছিলেন, নির্বাচন পরিচালনাকালে মাঠ লেভেলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কিছু অতি উৎসাহি দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি অনেক সময় এসব অনিয়ম কারচুপিতে যোগান দেয়া অগ্নিতে পেট্রোল ঢালারই নামান্তর। তাতে নির্বাচন কমিশন ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ভাবমূর্তি যথেষ্ট সমালোচনা ও হেয় হয়ে থাকে। এ সমস্ত দুর্মোখদের যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা না হওয়াতে নির্বাচনে শান্তি শৃংখলার পরিস্থিতি যেমন ব্যাঘাত ঘটে তেমনি একটা শ্রেণী এ সুযোগ গ্রহণ করে থাকে। যাতে অনেক সময় ইসি ও সিইসি বেকায়দায় পড়ে থাকে। তবে এসবের সুষ্ঠু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে অবাধ, স্বচ্ছ ও কারচুপিমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠান যথেষ্ট সহায়ক। তিনি আরও বলেছিলেন নির্বাচনে এ ধরণের অবস্থা একদিন থাকবে না। মানুষ দিন দিন সচেতন হচ্ছে। সচেতনতার কারণে এ অবস্থা একদিন বন্ধ হয়ে যাবে। অতি উৎসাহি চামচা চাটুকারদের বেরসিকতা অনির্দিষ্টকাল টিকে থাকতে পারে না। যার ফল কারও জন্যই শুভ নহে। দেশে সুষ্ঠু, অবাধ, স্বচ্ছ, কারচুপি মুক্ত, হুন্ডা, গুন্ডা ব্যতিরেখে স্বচ্ছ ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হোক, ইহা আমারও প্রত্যাশা। সাংবিধানিকভাবে জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস। জনগণের অর্পিত ক্ষমতা ও অধিকারকে কারও অন্যায়ভাবে বাধাগ্রস্ত করার সুযোগ একেবারেই পরাহত।
জানা যায়, আগামী ডিসেম্বর পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দেশে তিন শতাধিক পৌরসভা রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর দেশের ২৩৪টি পৌরসভায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে শপথ নেয় বেশীরভাগ পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলররা। স্থানীয় সরকার আইন অনুসারে পৌর ২০০৯ এর ধারা ২০ অনুযায়ী পৌরসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে ভোট গ্রহণ করতে হবে। এ হিসেব অনুযায়ী যেসব পৌরসভার মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে সেগুলোতে নভেম্বর ও ডিসেম্বরে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এবার মেয়র পদে দলীয় প্রতীক, কাউন্সিলর ও নারী কাউন্সিলর পদে নির্দলীয় প্রতীকে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
তথ্য সূত্রে জানা যায়, আসন্ন পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন করে ইউপি, পৌরসভা, উপজেলা, সিটি কর্পোরেশন এবং এসব প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধিদের পদের নাম প্রস্তাব দিয়েছে ইসি। এ প্রস্তাবে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল, তিন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, মাহবুব তালুকদার ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) শাহাদত হেসেন একমত হতে পারেননি। ২৬ আগস্ট নির্বাচন কমিশনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। (ক) ইউনিয়ন পরিষদের নাম পরিবর্তন করে পল্লী পরিষদ (খ) পৌরসভার মেয়রের পদবিটি পরিবর্তন করে পুরাধ্যক্ষ (গ) উপজেলার চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানকে উপজেলা পরিষদ প্রধান ও উপ প্রধান (ঘ) সিটি কর্পোরেশনের নাম মহানগর সভা ও সিটি মেয়রের পদবিটি মহানগর আধিকারিক রাখার কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে এ খসড়া প্রস্তাব এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি। নাম পরিবর্তনের বিপক্ষে মতামত দিয়েছে পৌরসভা মেয়রদের সংগঠন মিউনিসিপ্যাল এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- ম্যাব। ম্যাব ইসিকে জানিয়েছে চারটি প্রতিষ্ঠানের শব্দকে বাংলা পরিভাষার নামে অপরিচিত ও দুর্বেধ্য শব্দ চয়নে রূপান্তরিত করার প্রয়াস জটিলতা বাড়াবে যা অহেতুক ও অগ্রহণযোগ্য। আরও বলা হয়েছে এ শব্দগুলো পরিবর্তন হলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বকারী জনপ্রতিনিধিরা ব্যাপক সংকটে পড়বেন। একজন বলেছেন, এ ব্যাপারে স্কুল খোলে কয়েক মাস জনসাধারণকে ক্লাস করাতে হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন যা করার তা না করে সূচনা থেকে এ পর্যন্ত অনেক অপ্রয়োজনীয় বিষয় সামনে তুলে আনছে বলেও অনেকে মনে করে থাকেন। যা হয়তো কারও কাম্য নহে।
আসন্ন পৌরসভাসহ অন্যান্য নির্বাচন যাতে অবাধ, স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও কারচুপি ব্যতিরেখে, ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, হুন্ডা, গুন্ডা ব্যতিরেখে অনুষ্ঠিত হয় এ আশাবাদ ব্যক্ত করে অনেকেই অভিমত রেখে বলেছেন, ইসি ও সিইসি এদেশেরই সন্তান। দেশের জন্য কোনো অবস্থাতেই তাদের দরদ না থাকার কথা নয়। তাছাড়া ভোটার বিহীন নির্বাচন কিভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং যারা বিভিন্ন স্তরে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে আসছে তাদের গুণগত মান বা কোয়ালিটি সম্পর্কে না জানার কথা নয়। প্রতিদিন দেশের টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া ও রূপসা থেকে পাথুরিয়ার ৫৫ হাজার পরিসীমার মধ্যে দেশের বিভিন্ন পর্ষদের অনেক জনপ্রতিনিধির ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়ে থাকে। তাও তাদের না জানার কথা নয়। সত্যিকার অর্থে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে আসা জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে অনেক যোগ্য লোক আছে। তারা কিছু করতে চাইলেও অনেক সময় ভবিষ্যতের চিন্তা করে তা থেকে বিরত থাকে। আর ভোটার বিহীন নির্বাচিতরা কোনো কিছুর ভবিষ্যৎ চিন্তা না করার ফল যা হওয়ার তাহাই হয়ে থাকে।
দেশের উন্নতি, অগ্রগতি, সমৃদ্ধি, গণতন্ত্র, দেশ, জাতি ও জনগণের কথা চিন্তা করে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রস্তাবিত পৌর নির্বাচন যাতে সুন্দর, সুষ্ঠু, অবাধ, স্বচ্ছ ও কারচুপিমুক্তভাবে অনুষ্ঠিত হয় এবং দেশ ও বিদেশে যাতে গ্রহণযোগ্য হয় ইহাই জনপ্রত্যাশা। যদি অতীতের মতো আবারও এর ব্যর্থয় ঘটে, সমালোচনার পথ যদি তিক্ত হয় এবং এসব কিছু পর্যবেক্ষণ করে কানার হাট বাজার বলে কেহ মন্তব্য করে থাকে তবে তাতে কারও এ ব্যাপারে সাফাই গাওয়ার সুযোগ নাও থাকতে পারে। পরিশেষে বলব, দেশের আগামী প্রতিটি নির্বাচন হোক অবাধ, স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও কারচুপি মুক্ত। ভোটাধিকার গণতান্ত্রিক অধিকার। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে পাকিস্তানি হানাদারদের কাছ থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ত্যাগের বিনিময়ে ভোটাধিকার গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনা হয়েছে। যদি এর ব্যর্থয় ঘটে তবে দুঃখ, বেদনা ও জ্বালার আর কিছু অবশিষ্ট না থাকারই কথা।
এ.কে.এম শামছুল হক রেনু
লেখক কলামিষ্ট