আমতলীতে খাদ্য গুদামের বস্তা থেকে পাইপ দিয়ে চাল চুরির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ অভিযোগ খোদ খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাইপ দিয়ে বস্তা থেকে চাল চুরির ভিডিও ভাইরাল হলে শুক্রবার রাতে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ সারোয়ার মাহমুদ খাদ্য গুদাম পরিদর্শন করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
জানাগেছে, আমতলী খাদ্য গুদামে দুই হাজার তিন’শ এক মেট্র্কি টন ৬’শ ৮৪ কেজি চাল মজুদ রয়েছে। ওই চালের বস্তা থেকে খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস তার ঘনিষ্ট সহযোগীদের সহায়তায় পাইপ দিয়ে চাল চুরি করে আসছিল। এভাবে প্রতি বস্তা থেকে তিন-চার কেজি চাল সরিয়ে ফেলা হতো এমন অভিযোগ গুদাম শ্রমিকদের। পাইপ দিয়ে চাল চুরির একটি ভিডিও ফুটেজ বৃহস্পতিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে মানুষের মাঝে ব্যাপক হইচই ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনাটি খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ সারোয়ার মাহমুদের নজরে আসে। শুক্রবার রাতে তিনি খাদ্য গুদাম পরিদর্শনে আমতলী আসেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন বরগুনা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ নুর হোসেন স্বজল, আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ ফারুক হোসেন, ইউএনও মোঃ আসাদুজ্জামান ও আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান। গুদাম পরিদর্শন শেষে মহাপরিচালক পটুয়াখালী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ লিয়াকত হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। শনিবার থেকে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছেন। তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন পটুয়াখালী সদর খাদ্য নিয়ন্ত্রক বিএম সফিকুল ইসলাম ও বরগুনা সদর খাদ্য নিয়ন্ত্রক দ্রুব মন্ডল। তদন্ত কমিটি আমতলীর চারটি খাদ্য গুদাম সিলগালা করে দিয়েছেন।
খাদ্য গুদামের কয়েকজন শ্রমিক জানান ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা তার ঘনিষ্ট লোকজন দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বস্তা থেকে পাইপ দিয়ে চাল সরিয়ে আসছিল। কেউ তার এমন কাজের প্রতিবাদ করলেই তিনি তাকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে নিভৃত করার চেষ্টা করেন। তাতে সম্ভব না হলে তাকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেছেন তিনি।
খাদ্য গুদামের উপ-খাদ্য পরিদর্শক মোঃ মোশারফ হোসেন বলেন, ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্তকর্তা রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস প্রায়ই তার ঘনিষ্ট লোকজনের মাধ্যমে পাইপ দিয়ে বস্তা থেকে চাল চুরি করতেন। আমি এর প্রতিবাদ করলে আমাকে ভয়ভীতি দেখান তিনি। গত মাসের আমি এর জোড়ালো প্রতিবাদ করলে আমাকে ম্যানেজ করার জন্য পকেটে টাকা ভরে দেন।
আমতলী ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্তকর্তা (ওসিএলএসডি) রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজ তার গুদামের না দাবী করে বলেন, আমাকে ষড়যন্ত্রমুলক ভাবে ফাঁসানোর জন্য একটি গ্রুপ এ কাজটি করেছে। মহাপরিচালক ওই ফুটেজ মিলিয়ে দেখেছেন। তিনি আরো বলেন,
ওই ফুটেজ যদি আমার গুদামের হয়ে থাকে তাহলে আমাকে যে শাস্তি দেয়া হয় সেই শাস্তি মাথা পেতে নেব।
তদন্ত কমিটির প্রধান পটুয়াখালী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ লিয়াকত হোসেন বলেন, তদন্ত কাজ শুরু করেছি। তদন্তের স্বার্থে আমতলীর চারটি খাদ্য গুদাম সিলগালা করা হয়েছে। দু’এক দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।