বাজার দরের সঙ্গে সরকার নির্ধারিত দামের তারতম্য থাকায় নীলফামারীতে শতভাগ বোরো চাল সংগ্রহ অভিযান অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বাজারে ধানের দাম বেশি এ অজুহাতে মিল মালিকরা চাল সরবরাহে অনীহা দেখাচ্ছেন। মিল মালিকরা বলছেন, এ কারণে তারা পড়বে লোকসানের মুখে।
তবে নীলফামারীর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নাজমুল হক ভূঁইয়া বলেন, শতভাগ চাল সংগ্রহ নিশ্চিত করতে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে। এজন্য মিল মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। সার্বক্ষণিক মনিটারিং করা হচ্ছে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য। যারা চাল দিতে একেবারে ব্যর্থ হবে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গত ৪ মাসে চুক্তিবদ্ধ ১৯টি অটো রাইচ মিল আর ৫৫০টি হাসকিং মিল সরকার নির্ধারিত ৩৬ টাকা কেজি দরে খাদ্য গুদামে সরবরাহ করেছে মাত্র ১০ হাজার ৭৮২ মেট্রিক টন চাল। নির্ধারিত সময় ৩১ আগস্টের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার শতকরা ৫৫ শতাংশ সংগ্রহ হয়েছে। তবে বর্ধিত সময় আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মিল মালিকরা শতভাগ চাল গুদামে সরবরাহ করবে বলে আশা সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তার।
চলতি বোরো মৌসুমে ১৯ হাজার ৬১২ মেট্রিক টন মোটা চাল সংগ্রহ করতে জেলা খাদ্য বিভাগ ৫৬৯টি মিলের সাথে চুক্তি করে। গত ৩০ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া অভিযানে এ পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৫৫ শতাংশ। বর্তমানে বাজারে ৯৫০ থেকে ৯৭০ টাকা মন দরে বিক্রি হচ্ছে বোরো ধান। এ ধান থেকে চাল উৎপাদনে প্রতি কেজির দাম দাড়ায় ৪০ থেকে ৪২ টাকা। সরকার নির্ধারিত দামের থেকে প্রতি কেজিতে ৪ টাকা থেকে ৬ টাকা ব্যয় বেশি হওয়ায় মিল মালিকরা পড়েছেন লোকসানের মুখে। এতে এ বোরো মৌসুমে মিল মালিকদের ক্ষতির পরিমাণ দাড়াবে অন্তত ১০ কোটি টাকা।
মিল মালিকরা জানান, লোকসানের মধ্যে পড়লেও সরকার চাপ দিলে ব্যবসার স্বার্থে ও লাইসেন্স টিকাতে হলে চাল দিতেই হবে।
প্রতি কেজি চালে এভাবেই লোকসানের কথা বলে মিলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সরকারের কাছে প্রণোদনার দাবি করেন মিল মালিকরা।
সরকারি সূত্রে জানা যায়, মিলারদের সাথে চুক্তি হয়েছিল এপ্রিল মাসের ৩০ তারিখে তারা চাল দিবেন। সে সময় নীলফামারীর বাজারে ধানের দাম যা ছিলো তাতে সরকারি গুদামে চাল সরবরাহ করলে কোনো ক্ষতি হতো না। কিন্তু মিলারদের লাভ কম হবে বলে অনীহা প্রকাশ করে, এ কারণে চাল সংগ্রহ অভিযানকে ব্যর্থ করেছে। চাল সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা পূরনে স্থানীয়ভাবে নতুন করে সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
রোববার ৬ সেপ্টেম্বর জেলা প্রসাশকের সভাপতিত্বে চুক্তিবদ্ধ সব ডিলারদের নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় জেলা খাদ্য কর্মকর্তাসহ সব উপজেলার খাদ্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সংগ্রহ অভিযানে অগ্রগতি জানার জন্য আগামী ১১ সেপ্টেম্বর ফলোআপ সভায় আবারো বসবেন জেলা প্রাসকের নেতৃত্বে কর্মকর্তারা।