নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতির বিরুদ্ধে থানায় চাঁদাবাজীর মামলা দায়ের করা হয়েছে। উপজেলা সদরের বাসস্ট্যান্ডের আরএফএল ভিগো সোরুমের স্বত্ত্বাধিকারী লক্ষ্মীপুর গ্রামের মোজাফ্ফর হোসেনের ছেলে সোহেল রানা অভিযোগ করেন যে, পূর্বশত্রুতার জের ধরে উপজেলার এনায়েতপুর ইউনিয়নের চকহরিবল্লভ আবাসন গুচ্ছগ্রামের জিল্লুর রহমানের ছেলে রাজু আহমেদ (৩২) ও উত্তরগ্রাম ইউনিয়নের শিবগঞ্জ উত্তরপাড়া গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে নয়নসহ (৩৩) আরও ৬-৭ জন যুবক শনিবার সন্ধ্যা ৭ টায় তার শোরুমে গিয়ে তার কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে। সোহেল টাকা দিতে অস্বীকার করলে যুবকেরা তাকে বেদম মারধর করে ক্যাশবাক্স থেকে জোড় করে নগদ দেড়লক্ষ টাকা, তার ব্যবহৃত স্যামসাং জে৭ মডেলের স্মার্টফোন ও এ্যাপাচি আরটিআর মোটরসাইকেলসহ সোহেলকে দোকান থেকে তুলে নিয়ে মাতাজী রোডে আওয়ামী লীগের অফিসের সামনে নিয়ে গিয়ে বাঁশের লাঠি ও লোহার রড দিয়ে বেদম মারপিট করে। সোহেলের চিৎকারে তার বন্ধু ফাজিলপুর নতুন হাটের আবদুল হামিদের ছেলে মিঠু তাকে উদ্ধার করতে গেলে যুবকেরা তাকেও মারপিট করে। পরে লোকজন সেখানে আসলে যুবকেরা পালিয়ে যায়। আহত সোহেলকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয় ও মিঠুকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।
মহাদেবপুর থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ (ওসি) নজরুল ইসলাম জুয়েল জানান, এ ব্যাপারে সোহেল বাদী হয়ে রোববার বিকেলে রাজু ও নয়নের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোহেলের আত্মীয় এক গরীব মেয়ে ও অপর এক ছেলে বাড়ী থেকে পালিয়ে গিয়ে প্রায় ৩ মাস পত্নীতলায় একত্রে বসবাস করে। তাদের মধ্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হলে তারা মহাদেবপুরে সোহেলের কাছে এসে তার সহযোগিতা চায়। সোহেল উভয়ের অভিভাবকদের ডেকে বিষয়টি মিমাংসা করে তাদের সংসারের ব্যবহৃত তৈজসপত্র মেয়েটির জিম্মায় দেয়। কিন্তু ছেলেটি সেগুলো তার কেনা বলে দাবী করে। এরই জের ধরে রাজু ও নয়ন সেসব তৈজসপত্রের দাম দাবী করে সোহেলকে নিয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে যায়। ছাত্রলীগের অপর একটি গ্রুপ সোহেলকে উদ্ধার করতে সেখানে গেলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। থানা পুলিশ ও দলীয় নেতাকর্মীরা সেখানে উপস্থিত হলে সোহেলকে রেখে যুবকেরা পালিয়ে যায়।
রাজুর পক্ষের আহত নয়ন ও মহাদেবপুর স্কুলপাড়ার মৃত রজব আলীর ছেলে নওশাদ আলী (৪৬) রাত ২ টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।
রাজু উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও নয়ন ছাত্রলীগ নেতা।
জানতে চাইলে রাজু তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা মিথ্যা দাবী করে জানান, চাঁন্দাশ গ্রামের বিদেশ ফেরৎ ওই ছেলের সাথে মেয়েটির প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে মেয়েটির ফুফাতো ভাই সোহেল তাদেরকে তার দোকানে ডেকে ছেলেটির কাছ থেকে অন্যায়ভাবে একটি মোবাইলফোন ও ৩৭ হাজার টাকা নেয়। ছেলেরা এগুলো ফেরৎ নেয়ার জন্য সোহেলের দোকানে যায়। ছেলেরা এ ব্যাপারে বণিক সমিতির সভাপতি মনিরুল হক মনির সহযোগিতা চায়। মনির তাদেরকে তার বাসায় যেতে বললে ছেলেরা সোহেলকে নিয়ে তার বাসার সামনে যায়। এ সময় দলের নেতাকর্মীরা সেখানে উপস্থিত হলে তাদের সামনেই সোহেলের লোকেরা চাপাতি বের করে তাদের ছেলেদের উপর হামলা চালায়। এতে ৫ জন আহত হয়।
মহাদেবপুর বাসস্ট্যান্ড বণিক সমিতির সভাপতি মনিরুল হক মনি জানান, সোহেল একজন বণিক হওয়ায় বিষয়টি মিমাংসার জন্য তিনি উভয়কে তার বাসভবনের সামনে একটি চাতালে বৈঠকের জন্য ডেকেছিলেন। কিন্তু সেখানে যাবার পথে দলীয় কার্যালয়ের সামনে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাব্বির রহমান রেজভি জানান, মামলার বিষয়ে তাকে কিছু জানানো হয়নি। সব মামলাই সত্য হয়না। তবে তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে এ ব্যাপারে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।