মাত্র ২০দিনে তিনটি সঙ্ঘবদ্ধ নৌ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে মেঘনা নদীর মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া অংশে। আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত ডাকাত দলের কাছে রীতিমতো জিম্মি যাত্রী ও ট্রলার চালকরা। এদিকে ডাকাতদের অপতৎপরতা রোধ করতে না পেরে বাধ্য হয়ে সন্ধ্যার পর গজারিয়া-কালীপুরা নৌরুটে সন্ধ্যার পর সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন।
গজারিয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুল হান্নান জানান, চাঁদপুরের মতলব উপজেলার অধিকাংশ মানুষ রাজধানী ঢাকার সাথে যোগাযোগে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা হয়ে যাতায়াত করে। তবে সম্প্রতিকালে ডাকাত দলের তৎপরতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সন্ধ্যার পর মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া- চাঁদপুরের (মতলব উত্তর উপজেলা) কালীপুরা নৌ রুটে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছেন তারা। একান্ত প্রয়োজনে যদি নদী পার হতে হয় তবে অবশ্যই পুলিশের সহায়তা নিয়ে নদী পার হতে হবে।
সরেজমিনে কালীপুরা ঘাটে গিয়ে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সাথে কথা বললে তাদের মধ্যে, ট্রলার চালক আব্দুল বারেক, মফিজুল প্রধান ও শামসুল হক জানান, গত ১৪ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই ২০ দিনে মেঘনা নদীর গজারিয়া অংশে অন্তত তিনটি সঙ্ঘবদ্ধ নৌ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের জিম্মি করে কয়েক লক্ষ টাকার মালামাল লুটে নেয় ডাকাতদল।
এপথে নিয়মিত চলাচলকারী কয়েকজনের সাথে কথা হলে তাদের মধ্যে ওয়াজকোরুনি ও স্বপন মিয়া জানান, শুধু রাতের বেলা তো নয় দিনের বেলাতেও ঘটেছে সঙ্গবদ্ধ নৌ ডাকাতির ঘটনা। দিনের আলো শেষে রাতের আঁধার নামার পর পর মেঘনা নদীর গজারিয়া অংশে তৎপরতা বাড়ে ডাকাতদের। ডাকাত আতঙ্কে সন্ধ্যার পরে এ পথে চলাচল করেন না তারা।
কালীপুরা ঘাটের দোকানদার আমির উল্লাহ জানান, জরুরী প্রয়োজন বা অসুস্থ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন এই পথে এসে কারণ সন্ধ্যার পরেই ডাকাত আতঙ্কে ট্রলার চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, প্রায়ই মেঘনা নদীর এ অংশে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। নৌ-পুলিশের তেমন তৎপরতা না থাকায় রীতিমতো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ডাকার দলগুলো। গজারিয়া নৌ পুলিশ ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায় অসংখ্য ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে মেঘনা নদীর এই অংশে। লুট করা হয়েছে প্রায় অর্ধকোটি টাকার মালামাল। গত ২০ দিনে তিনটি সঙ্ঘবদ্ধ নৌ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে মেঘনা নদীর গজারিয়া অংশে । সর্বশেষ গত ৩ সেপ্টেম্বর, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় মেঘনা নদীর মল্লিকের চর এলাকায় একসাথে তিনটি ট্রলারে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এসময় অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের জিম্মি করে নগদ টাকাসহ প্রায় দুই লক্ষ টাকার মালামাল লুট করে নেয় ডাকাতরা। এর আগে ১৭ আগস্ট, রাত সাড়ে আটটার সময় একটি যাত্রীবাহী ট্রলারে ডাকাতির ঘটনা ঘটে লুট করা হয় প্রায় ৪০ হাজার টাকার মালামাল। গত ১৪ আগস্ট ,দিনেদুপুরে বর যাত্রীবাহী একটি লঞ্চে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও মোবাইল সেটসহ লুট করা হয় প্রায় সাত লক্ষ টাকার মালামাল লুটে নেয় ডাকাতদল।
এর আগেও মেঘনা নদীর এ অংশে অসংখ্য ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় শীতকালে ডাকাতদের তৎপরতা বাড়ে।
২০১৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি , সময় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার সময় নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার বিএম ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা নৌ ভ্রমণে এসে গজারিয়ায় ডাকাতির শিকার হয়। সেদিন প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুটে নেয় ডাকাতরা।
২০১৯ সালের ২২ নভেম্বর, রাত প্রায় আটটার দিকে গজারিয়া থেকে একটি যাত্রীবাহী ট্রলার মতলব যাওয়ার পথে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। লুট করা হয় ২ লক্ষ টাকার মালামাল।
২০১৬ সালের ২০ আগস্ট, রাত প্রায় সাড়ে আটটার সময় গজারিয়ায় বর যাত্রীবাহী লঞ্চে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। নগদ টাকা স্বর্ণালঙ্কারসহ প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা মালামাল লুট করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে ৬ জনকে আটক করা হয়।
২০১৪ সালের ১০ মার্চ, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার বালুরচর গ্রামসংলগ্ন মেঘনা নদীতে যাত্রীবাহী লঞ্চে ডাকাতির ঘটনা ঘটে । এ সময় ডাকাতরা কয়েকজন যাত্রীর কাছ থেকে প্রায় ২৫ হাজার টাকা লুটে নেয়।
এছাড়াও আরো অসংখ্য নৌ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন থানায় অভিযোগ না করেন না বলে তার তথ্য নেই পুলিশের কাছে।
চাঁদপুরের বেলতলী নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো: আবু তাহের জানান, ডাকাতরা আধুনিক অস্ত্র ও উচ্চগতিসম্পন্ন স্পিড বোট ব্যবহার করে সেজন্য অধিকাংশ সময় তাদের আটক করা সম্ভব হয় না। ডাকাতদের অপতৎপরতা প্রতিরোধে নদীতে পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। যারা নৌ ডাকাতের সাথে জড়িত এমন কয়েকজনের পরিচয় পাওয়া গেছে অচিরেই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।