সিরাজদিখানে এক ইউপি চেয়ারম্যানের হুমকীতে দেড় বছর ধরে বাড়ি ছাড়া হয়েছেন আবুল হোসেন (৬০) নামের এক ব্যাক্তি। আরেক প্রভাবশালী দখল করে নিয়েছেন তার বাড়ির কিছু অংশ। গত দুই বছর যাবৎ অত্যাচারের স্বীকার হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তার স্ত্রী ও সন্তানেরা। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার চিত্রকোট ইউনিয়নের খালপাড় গ্রামে।
সরোজমিনে গিয়ে জানা যায়, দেড় বছর ধরে আবুল হোসেন গ্রাম ছাড়া। তার স্ত্রী সন্তানেরা মানবেতর জীবন-যাপন করছে। জিন্নত আলী আর ইউপি চেয়ারম্যান সামসুল হুদা বাবুলের ভয়ে এলাকার সাধারণ কেউ মুখ খোলতে চায় না। একাধিকবার আবুল হোসেনের স্ত্রী সন্তানদের মারধর করা হয়েছে। তারা কারো সাহায্য সহযোগিতা পায় নাই। বাড়ি নিয়ে মামলা করায় গ্রাম ছাড়া ও মারধরের স্বীকার হয়েছে তারা। তাই ভয়ে মারধরের পরও তারা থানায় অভিযোগ করতে পারেনি।
ভুক্তভোগী আবুল হোসেন জানান, আমার পাশের বাড়ি জিন্নত আলী চেয়ারম্যানের ছত্র ছায়ায় আমার জায়গায় জোড় দখল করে বিল্ডিং তোলো। আমি ইউপি সদস্য নুর আলী বেপারীকে দিয়া নিষেধ করি। সে কিছু মানে না, ইউপি সদস্যকে বলে আপনি আসবেন না ওকে পাঠান। হুমকী দেয় আমি গেলে নাকি আমাকে মেরে ফেলবে। আমি ভয়ে যাই নাই। তখন ইউপি সদস্য আমাকে বলে আইনের আশ্রয় নিতে। আমি আদালতে মামলা করি এরপর থেকে আমাকে বাড়িতে আসতে দেয় না জিন্নত আলী। আর চেয়ারম্যান বাবুল আমাকে গ্রামছাড়া করছে। আমার সাইড দিয়া ওয়াল করছে জিন্নত। পুলিশ বাধা দিছে। আবার বিল্ডিংয়ের কাজ করছে। যেদিন বিল্ডিংয়ের ছাঁদ ঢালাই হয় সেদিন চিত্রকোট ইউপি চেয়ারম্যান সামসুল হুদা বাবুল দুপুরে আসে তার বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করে। আমি বাড়ি ছাড়া দেড় বছর ধরে। গত ৯ মাস আগে আমি বাড়ি গিয়েছিলাম সাহস করে। তখন চেয়ারম্যান আমাকে দেখে ফেলে বলে তুই আবার দেশে আসছস, তোর হাত পা ভাইঙা এখন নদীতে ফালাইয়া দিমু, আমি ভয়ে আবার পালিয়ে আসি। আমি যেন আমার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়া বাড়ি থাকতে পারি এই ব্যবস্থা আপনারা কইরা দেন।
আবুল হোসেনের স্ত্রী শেফালী বেগম (৫০) জানান, জিন্নত আমাদের জায়গা দখল কইরা রাখছে। আর চেয়ারম্যান বাবুল আমার স্বামীরে বাড়ি থিকা খেদায় দিছে। এরপর জিন্নত ও তার ছেলেরা আমারে ও আমার ছেলেরে মারধর করছে। পরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম, দেড় বছর আগের ঘটনা। তখন আমার এক বড় ভাই চেয়ারম্যানরে ডাকাইছিলো। তখন চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসা করছিলো আবুল হোসেনের অপরাধ কি? চেয়ারম্যান জবাব দিতে পারে নাই। এরপর বাড়িতে আমার স্বামী আসলে তারে মাইরা খেদায় দিছে। সে নাকি নাকি বাড়িতে থাকলে এলাকায় চুরি ডাকাতি হয় এমন মিথ্যা অপবাদ দিয়ে। আমরা বলছি গ্রামের লোকজন নিয়া বসেন সে যদি এমন কোন কাজ করে শাস্তি দেন।
জিন্নত আলী জানান, বাড়িতে ৩৩ শতাংশ জায়গায় আমি আমার ১০ শতাংশে আছি। আর ও অর ১০ শতাংশে আছে। ৩৫ বছর আগে নুর ইসলাম চেয়ারম্যান মাইপা দিয়ে আমার দুই সাইডে ওয়াল করা আছে। আগে একটা মামলা করছিল খারিছ হইছে আবার একটা মামলা করছে।
এ বিষয়ে চিত্রকোট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সামসুল হুদা বাবুল বলেন, আইনের ভাষায় বলতে গেলে দেশে শান্তির জন্য চেয়ারম্যানরা অনেক কিছুই করে। ও দেশে না থাকায় সবাই শান্তিতে আছে। এই যে ৭-৮ মাস যাবৎ ও দেশে না থাকায় চুরি ডাকাতি নাই। মাদরাসার ক্যাসিয়ারের টাকা চুরি করছে, আরো একজনের টাকা চুরি করছে। কয়েক বছর আগে একটিা ডিস প্লানের পুরাটাই চুরি কইরা নিছে। এ বিষয়ে হাতে নাতে ধরা পরেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন অনেক বছর আগে একটা ডাকাতি করছিল তখন হাতে নাতে ধরা পরছিল। এই আবুল এককালে ছিল সন্ত্রাসী। তিনি আরো বলেন জিন্নত আলীর নামে মামলা করছে আবুল, মামলা কইরা নিজেই কোটে যায় না। আবুলের জায়গা থাকলে দলিল দেখাতে বলবেন। আর জিন্নত আলীর জায়গায় সোজা ওয়াল করা, জিন্নত আলীর বাড়িতেই জিন্নত আলী আছে।