পাবনার চাটমোহরের খাল-বিল,জলাশয়ের পানি কমলেও কমছে না গবাদী পশুর খাদ্য সংকট। বর্ষায় বিলগুলোতে বন্যার পানি প্রবেশ করার ফলে গোচারণ ভূমি ও ঘাস খেত ডুবে যাওয়ায় গবাদী পশুর খাদ্য সংকট শুরু হয়। এরআগে আগাম বন্যায় তলিয়ে যায় ইরি-বোরো ধানের জমি। ফলে ধানের খড় সংগ্রহেও ভাঁটা ভাড়া। একদিকে খড়ের মূল্য বৃদ্ধি,অন্য দিকে চাষকৃত উন্নত জাতের ঘাস ক্ষেতগুলো পানিতে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় গরু,মহিষ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাটমোহরের গরুর খামারী ও মালিকেরা। ফলে তারা গরু ও মহিষের বিকল্প খাদ্য হিসেবে পানিতে ভাসমান কচুরীপানা ও রাস্তার পার্শ্ববর্তী লতা-গুল্ম ও গাছের পাতার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে,চাটমোহরে ৩শ ২৮ টি গাভীর খামার,২শ ৩২ টি গরু মোটা তাজাকরণ খামার,৩৮টি ছাগলের খামার ও ৩২টি ভেড়ার খামার রয়েছে। এসব খামারসহ অন্যান্য কৃষকের মিলে মোট ৯৯ হাজার গরু,দুই হাজার ৭শ মহিষ, ১ লাখ ২৪ হাজার ছাগল ও ৪ হাজার ৭শ ভেড়া রয়েছে।
আষাঢ়-শ্রাবন মাসে চাটমোহরের বিলগুলোতে বর্ষার পানি প্রবেশ করে। বছরের অন্য সময়ে দিনের বেলা গরু ও মহিষকে মাঠে নিয়ে পতিত গোচারণ ভূমিতে খাওয়ানো সম্ভব হলেও বর্ষা ও শরতের প্রায় চার মাস মাঠে পানি থাকায় গরু ও মহিষকে মাঠে নিয়ে খাওয়ানো সম্ভব হয় না। এ সময় পুরোপুরি খড়,খইল,ভুশিসহ অন্যান্য দানাদার খাবারের উপর নির্ভর করতে হয় পশু মালিকদের। বৈশাখ জৈষ্ঠ্য মাসে কৃষক বোরো ধান কাটলে বোরো ধানের কিছু খড় পাওয়া গেলেও তা চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট নয়। ভাটি এলাকায় খড়ের দাম অপেক্ষাকৃত বেশি হওয়ায় সেসব এলাকার খড় ব্যবসায়ীরা চলনবিল অধ্যুষিত এলাকায় এসে চড়া দামে বোরো ধানের খড় কিনে নিয়ে যান। কুষ্টিয়া,যশোর,ঝিনাইদহসহ দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের উঁচু অঞ্চল থেকে খড় ব্যবসায়ীরা কিছু খড় কিনে অতিরিক্ত ট্রাক ভাড়া দিয়ে চাটমোহর এলাকায় এনে বেশি দামে বিক্রি করছেন। বর্তমান এ এলাকায় ছোট ছোট একশ আটি খড় প্রায় ৮শ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পশু মালিকেরা চড়া দামে পশুখাদ্য কিনে খাওয়াতে হিমশিম খাচ্ছেন। অনেকে পশু পালন ছেড়ে ও দিচ্ছেন।
গরুর খামারীরা জানান,গো খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গবাদী পশু পালন করে লাভবান হতে পারছেন না তারা। বাধ্য হয়ে গরুর খাদ্য ব্যয় কমাতে প্রতিদিন নদী বা লি থেকে কচুরীপানা কেটে খাওয়াচ্ছেন। কচুরীপানা খাওয়ালে অন্যান্য ঘাস কম লাগে।
ভেটেরেনারী সার্জন ডাঃ রোকনুজ্জামান জানান,কচুরীপানা গবাদী পশুর আদর্শ খাবার নয়। গবাদী পশুর খাদ্য সংকটের কারণে অনেকে কচুরীপানা, লতাপাতা খাওয়ান। কিন্তুু কচুরী পানাতে পানির পরিমান বেশি থাকে। গবাদী পশুকে মাত্রাতিরিক্ত কচুরী পানা খাওয়ালে পাতলা পায়খানা বা বদ হজম হতে পারে।