প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের একটি সম্মানজনক বেতন স্কেল উপহার দেয়ার বিষয়ে আন্তরিক থাকলেও প্রশাসনের অভ্যন্তরে জড়িয়ে থাকা এক শ্রেণীর অনবিজ্ঞ কর্মকর্তাদের কারণে তা আজ হতাশায় রূপ নিয়েছে এমনটা মনে করেন ভুক্তভুগি মহল। সশ্লিষ্ট এক সুত্রে দেখা গেছে, প্রজাতন্ত্রের ১১ থেকে ২০তম গ্রেডের¬ প্রায় ২৪ লাখ কর্মচারী শোষণ ও বঞ্চনার শিকার। গ্রেড একভূক্ত সচিব লেভেলের কর্মকর্তাদের কুক (রাঁধুনি) বেতন পান ১৬ হাজার টাকা। আর চতুর্থ শ্রেণীর একজন অফিস সহায়ক বেতন পান আট হাজার টাকা স্কেলে। এটা কী করে সম্ভব? ১৬তম গ্রেডভুক্ত উচ্চ মাধ্যমিক থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করা সরকারি কর্মচারী পরিবারের একজন সদস্যের এক বেলা খাবার বাবদ বরাদ্দ ১৪ দশমিক ৮৫ টাকা। এই টাকা দিয়ে কী এক বেলা খাবার সম্ভব? এসব প্রশ্ন এখন লক্ষাধিক কর্মচারীর।
বাস্তবতার আলোকে দেখা যাচ্ছে, করোনার প্রভাবে হাহাকার নেমে এসেছে নি¤œ গ্রেডের কর্মচারীদের। যাতায়াত ও নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিসহ সকল ব্যয় বাড়লে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। ওপরের গ্রেড গুলোতে পদ না থাকলেও নিয়মিত পদোন্নতি হলেও যোগ্যতা থাকার পরও নিচের গ্রেডের কর্মচারীরা পদোন্নতি পান না। সারাজীবন একই পদে চাকরি অথবা নামমাত্র পদোন্নতি নিয়ে অবসরে যেতে হচ্ছে তাদের। ফলে চাকরি জীবনে বঞ্চিত হওয়ায় বেতন স্কেল না বাড়ায় তারা পেনশনও পাচ্ছেন অনেক কম।
বর্তমানে সিনিয়র সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তার মূল বেতন ৮২ হাজার টাকা। এছাড়াও তিনি বাসা ভাড়া হিসেবে পাচ্ছেন ৪১ হাজার টাকা। গাড়ী রক্ষণাবেক্ষনের জন্য পাচ্ছেন ৫০ হাজার টাকা। রান্না করার জন্য বাবুর্চির বেতন এবং দারোয়ানের জন্য পাচ্ছেন ১৬ হাজার করে। টেলিফোন বিল এবং সভার সম্মানিসহ মাসে কমপক্ষে ২ লাখ টাকা পাচ্ছেন। বছরে তিন থেকে পাঁচটি বিদেশ সফরে পান অতিরিক্ত কয়েক লাখ টাকা।
অথচ ২০ তম গ্রেডের একজন কর্মচারী সর্বসাকুল্যে বেতন পাচ্ছেন মাত্র ১৫ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়েই তাকে বাড়ীভাড়া, খাবারসহ সব ব্যয় মেটাতে হচ্ছে। এ ছাড়াও বিদ্যুৎবিল, গ্যাসবিলসহ সব মিলিয়ে চলে যাচ্ছে ৭ হাজার টাকা। এর পর পুরো মাসের খরচ চালানোর জন্য তার হাতে থাকে মাত্র ৮ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে তাকে পুরো মাসের সংসারের খরচ, পরিবারের কাপড়সহ যাবতীয় খরচ বহন করতে হয়। এর বাইরে তার আয়ের আর কোনো উৎস নেই। বেতনের আকাশ পাতাল বৈষম্য থাকলেও দৈনন্দিন খরচে নেই খুব বেশি পার্থক্য। ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের মাসের ১৫ দিন না অতিবাহিত হতেই শুরু হয় টানাটানি। সংসারের খরচ নির্বাহ করতে ব্যর্থ হয়ে অনেকেই স্ত্রী সন্তানকে গ্রামে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
সূত্র জানায়, বিদ্যমান বৈষম্যের অবসান ঘটাতে ২০১৩ সালে সকলস্তরের কর্মচারীদের জন্য একটি সুষম পে-স্কেল ঘোষণার উদ্দেশ্যে কমিশন গঠন করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনরকে প্রধান করে গঠিত কমিশন মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই বাছাই করে একটি সুষম পে-স্কেল প্রস্তাব করে। সেখানে সর্বনি¤œ বেতন স্কেল ১১২০০ টাকা এবং গ্রেড সংখ্যা ২০ থেকে কমিয়ে ১৬ করার প্রস্তাব করা হয়। পরবর্তীতে সচিব কমিটি গ্রেড পূর্ণগঠন করে ২০ গ্রেড করে ২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলের গেজেট প্রকাশ করে।
পে-স্কেল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০ থেকে ১১তম গ্রেডের কর্মচারীদের মূল বেতন ৮ হাজার ২৫০ টাকায় শুরু হয়ে ১২ হাজার ৫০০ টাকায় শেষ হয়। এই ১০টি গ্রেডের বেতন স্কেলের মোট পার্থক্য ৪২৫০ টাকা। পাশাপাশি ১০ থেকে প্রথম গ্রেডের কর্মকর্তাদের মূল বেতন ১৬ হাজার টাকা থেকে শুরু হয়ে ৭৮ হাজার টাকায় শেষ হয়। এই ১০টি গ্রেডের পার্থক্য ৬৫ হাজার ৫০০ টাকা। এ ছাড়া কর্মকর্তাদের জন্য রয়েছে গাড়ি, আবাসনসুবিধা, সুদমুক্ত গাড়ির ঋণসহ নানাবিধ সুবিধা। অথচ প্রত্যেকে একই বাজারব্যবস্থার কাঠামোর আওতায় জীবন ধারণ করেন, এতে শ্রেণীবৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করেছে।
এই বৈষম্যের অবসান চেয়ে নানাভাবে আন্দোলন করছেন দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সরকারি কর্মচারীরা। তারা পদবি ও গ্রেড পরিবর্তনের জন্য প্রধানমন্ত্রী, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন বহুবার। মন্ত্রিপরিষদ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন দীর্ঘদিন।
গত ফেব্রুয়ারি সংসদের সমাপনী দিনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তুাব রাখার প্রাক্কালে বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদ স্পিকারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ১১ থেকে ২০তম গ্রেডের সরকারি চাকরিজীবীরা বৈষম্যের শিকার, তাদের বেতনবৈষম্য দূর করা দরকার। ৩ শ’ টাকা যাতায়াত ভাতা, ২ শ’ টাকা টিফিন ভাতা, ৫ শ’ টাকা শিক্ষাভাতা, ১৫ শ’ টাকা চিকিৎসাভাতা একেবারেই বেমানান। এসব ভাতা বাজারদরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন। একই বিষয় নিয়ে বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সংসদে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে ১১-২০তম গ্রেডের চাকরিজিবীদের বেতনবৈষম্য দূরীকরণে একটি কমিটি বা নতুন পে-কমিশন গঠনের অনুরোধ করে ১৪ লাখ কর্মচারীর হতাশা দূরীকরণের দাবি জানান।
বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশনের নেতারা এনিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ আন্দোলন করে আসছেন। ইতোমধ্যে তারা ছয় দফা দাবীও পেশ করেছেন সরকারের কাছে। ছয় দফা দাবিগুলো হচ্ছে নবম পে কমিশন গঠন এবং বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কমপক্ষে ২০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি করতে হবে; সচিবালয়ের মতো সচিবালয় বাইরে কর্মরত সব পর্যায়ের কর্মচারীদের পদবী ও বেতন বৈষম্য দূর করতে হবে; বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির হার ১০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে; ১-৬ গ্রেডের কর্মকর্তাদের মতো ১০ শতাংশ বার্ষিক মূল্যহ্রাস পদ্ধতিতে বিনা সুদে গাড়িঋণ সুবিধার মতো ১০ থেকে ২০ গ্রেডের কর্মচারীদের ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা বিনা সুদে গৃহনির্মাণ সুবিধা দিতে হবে; রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত কর্মচারীদের চাকরি গণনা, অযাচিত ২০ শতাংশ পেনশন কর্তনের হয়রানি বন্ধ করতে হবে এবং কল্যাণ তহবিলের অর্থ লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করতে হবে ও কল্যাণ তহবিলের অর্থ লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করে কর্মচারী সন্তানদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
নতুন বেতন স্কেল বাস্তবায়নকারী ও ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, নতুন বেতন স্কেল প্রবর্তনের কারণে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার চেয়ে ক্ষতির মুখোমুখি আজ লাখ লাখ সরকারি কর্মচারী। নতুন বেতন স্কেলে ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৫ থেকে ৩০ জুন, ২০১৬ পর্যন্ত বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি প্রথা বাতিল করা হয়। যে কারণে প্রজাতন্ত্রের প্রায় অর্ধেক সমপদের জ্যেষ্ঠ কর্মচারী তাদের কনিষ্ঠ কর্মচারীদের চেয়ে কম বেতন পাচ্ছেন।
তা ছাড়া প্রচলিত বিধান অনুযায়ী একই পঞ্জিকা বর্ষে সমমানের পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত অভ্যন্তরীণ কর্মচারীরা সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীদের তুলনায় জ্যেষ্ঠতাপ্রাপ্ত হন। নতুন বেতন স্কেলে ১৫ ডিসেম্বর থেকে সিলেকশন গ্রেড প্রথা বাতিল করার কারণে ১৩ ডিসেম্বর, ২০১১ তারিখে ৯ম গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীর চেয়ে ১৫ ডিসেম্বর তারিখে ৯ম গ্রেডের পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ কর্মচারী নিউ গ্রেডে কম বেতন পাচ্ছেন।
অভিজ্ঞ মহলের মতে, কম বেতন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়মে ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত কনিষ্ঠ কর্মচারীর বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির তারিখে জ্যেষ্ঠ কর্মচারীর বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির তারিখ নির্ধারণ করে কনিষ্ঠ ও জ্যেষ্ঠ কর্মচারীর বেতন সমতাকরণ করে এবং নিউ গ্রেডে বেতন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে, কনিষ্ঠ কর্মচারীর বেতন গ্রেডের সঙ্গে জ্যেষ্ঠ কর্মচারীর বেতন গ্রেডের সমতাকরণ করে এ সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।
ত্ইাতো বর্তমান বাজারে নি¤œপদস্থ কর্মচারীগণ মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছে। তাদের অবস্থা এখন অনেকটা জিম্মি দশার মতো। ২০ গ্রেডের ৮,২৫০/- টাকা স্কেলের একজন কর্মচারী সব মিলিয়ে ১৪,৪৫০/- টাকা পায় যা দিয়ে বর্তমান বাজারদরে ০৬ (ছয়) সদস্যের পরিবারের পুরো মাসের যোগান দেওয়া অসম্ভব। ২০০ টাকার টিফিন ভাতায় এক মাস টিফিন খাওয়া সম্ভব?
আবার একই ডিপার্টমেন্টের একই গ্রেডের একই পে-স্কেলের একটি পদের পদন্নোতি হচ্ছে অন্য পদের পদন্নোতি নেই। সারাজীবন একই পদে চাকুরী অথবা নামমাত্র পদোন্নতি নিয়ে অবসরে যাচ্ছে তারা। চাকুরী জীবনে যেমন চরমভাবে নিষ্পেষিত হচ্ছে উপরন্তু বেতন স্কেল না বাড়ায় তাঁর পেনশনও অনেক কম। অর্থ্যাৎ বুড়ো বয়সের অবসর জীবনেও তাকে খেয়ে না খেয়ে মরতে হবে ধুঁকে ধুঁকে। কিন্তু কেন এত বৈষম্য থাকবে? দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দুর্নীীতবাজরা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অথচ দেশের জন্য যারা খাটছে তাদের সামান্য কটা টাকা বাড়তি দেয়াতে সরকার দেওলিয়া হয়ে যাবে?
উপরের গ্রেডের চাকরিজীবীরা হয়তো বলতে পারেন, নিচের দিকের গ্রেডগুলোতে জনবল বেশি। তাই তাদের বেশি বেতন দিতে গেলে দেশের অর্থনীতিতে চাপ পড়বে। দেশের প্রতি তাদের এতই যদি মায়া থাকে, তাহলে নিজেদের গ্রেডগুলোর মধ্যকার পার্থক্য এত বেশি কেন? এমনিতেই উপরের দিকের গ্রেডে চাকরি করছেন, এরপর বেতন বৃদ্ধি যদি নিচের দিকের গ্রেডগুলোর চেয়ে দু’-তিন গুণ বেশি হতো, তবু কম হতো না। কিন্তু তাদের বেতন বাড়ে নিচের দিকের গ্রেডগুলোর চেয়ে ২০-২৫ গুণ বেশি। তাদের এত বেতন দিতে গেলে দেশের অর্থনীতির ওপর কি চাপ পড়ে না? এসব হচ্ছে বাহানা। নিজেরা বেতন কম নিয়ে দেশপ্রেমের কথা বললে তা সত্যিকার দেশপ্রেম হতো।
প্রয়োজন ইতিবাচক চিন্তার। উচ্চস্তরের চাকরিজীবীদের মধ্যে অতি স্বল্প সংখ্যক আমলা নামের আকামের কামলাদের হিংসুটে থাবা থেকে দেশের অসহায় জনগণ ও নি¤œস্তরের কর্মচারীদের মুক্তি দিতে না পারলে দেশের সুষম উন্নয়ন সম্ভব নয়।
বাংলাদেশসহ ৫টি দেশের পে-স্কেলের তুলনামূলক আলোচনা : সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে অনেকেরই জানতে আগ্রহ রয়েছে। আমাদের দেশের পে স্কেলে বেতন গ্রেড সংখ্যা ২০টি। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে তাদের বেতন স্কেল গ্রেড ও সর্বনি¤œ ও সর্বোচ্চ বেতনের পরিমাণ কত? আজ আমি তুলে ধরবো অন্য পার্শ্ববর্তী দেশের সাথে আমাদের দেশের পে স্কেলের কি পার্থক্য রয়েছে সেগুলো।
গ্রেড সংখ্যা: বাংলাদেশের পে স্কেলে গ্রেড সংখ্যা-২০ টি। পাকিস্তানের পে স্কেলে গ্রেড সংখ্যা-২২ টি।ভারতের পে স্কেলে গ্রেড সংখ্যা-১৮ টি। যুক্তরাষ্ট্রের পে স্কেলে গ্রেড সংখ্যা-১৫ টি। ফিলিপাইনের পে স্কেলে গ্রেড সংখ্যা-৩৩ টি। কেনিয়ার পে স্কেলে গ্রেড সংখ্যা-১৮ টি।
এখান থেকে ধারণা নিতে পারি আমাদের দেশের পে স্কেল কতটা আন্তর্জাতিক মানের।
সর্বনি¤œ ও সর্বোচ্চ মূল বেতন: নিজ নিজ দেশের মুদ্রায় :
বাংলাদেশের পে স্কেল ২০১৫ তে সর্বনি¤œ মূল বেতন ধরা হয়েছে- ৮,২৫০ টাকা ও সর্বোচ্চ মূল বেতন ধরা হয়েছে- ৭৮,০০০ টাকা। পাকিস্তানের পে স্কেল ২০১৮ তে সর্বনি¤œ মূল বেতন ধরা হয়েছে- ৯,১৩০ রুপি ও সর্বোচ্চ মূল বেতন ধরা হয়েছে- ৮৫,৭০০ রুপি। ভারতের পে স্কেল ২০১৮ তে সর্বনি¤œ মূল বেতন ধরা হয়েছে- ১৮,০০০ রুপি ও সর্বোচ্চ মূল বেতন ধরা হয়েছে- ২,৫০,০০০ রুপি। যুক্তরাষ্ট্রের পে স্কেল ২০১৯ তে সর্বনি¤œ মূল বেতন ধরা হয়েছে- ১৮,৭৮৫ ডলার ও সর্বোচ্চ মূল বেতন ধরা হয়েছে- ১,০৫,১২৩ ডলার। ফিলিপাইনের পে স্কেল ২০১৮ তে সর্বনি¤œ মূল বেতন ধরা হয়েছে - ১০,৫১০ পেসো ও সর্বোচ্চ মূল বেতন ধরা হয়েছে- ২,৮৯,৪০১ পেসো। কেনিয়ার পে স্কেল ২০১৯ তে সর্বনি¤œ মূল বেতন ধরা হয়েছে- ১১,৫৫৩ শিলিং ও সর্বোচ্চ মূল বেতন ধরা হয়েছে- ২,৯২,৭৬৫ শিলিং।
বাংলাদেশের ২০টি গ্রেডের মধ্যে ১-১০তম গ্রেডে প্রতি ধাপে পার্থক্য রাখা হয়েছে গড়ে ২০% সেখানে ১১-২০ তম গ্রেডে পার্থক্য রাখা হয়েছে গড়ে ৪% । যা কোন দেশে রাখা হয়নি। আপনি রিসার্চ করলে দেখতে পাবেন যে এটি একটি বড় ফারাক। বাংলাদেশ সরকার যদি ১১-২০ তম গ্রেডে ২০% বার্ষিক ইনক্রিমেন্টও ধরিয়ে দেয় তবুও এই বৈষম্য দূর হবে না।
শতাংশে দেখলে বুঝা যায় বৈষম্যটা:
কর্মকর্তাদের জন্য ১৬০০০ থেকে ৭৮ হাজার পর্যন্ত শুধুমাত্র মূল বেতনে ১০তম -১ম গ্রেডে প্রতি ধাপে প্রায় ২০.৪ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি পেয়েছে। মূল বেতনে ২০.০৪% বেতন প্রতি প্রমোশন এ বৃদ্ধি পায়। গ্রেডে বেতন বৃদ্ধি ২০% এর অধিক হওয়ায় বার্ষিক ৫% ইনক্রিমেন্ট বা যে কোন প্রকার ফিক্সেশনের তাদের আর্থিক সুবিধা বেশি হয়ে থাকে ফলে তারা প্রমোশনে অনুপ্রাণিত হন।
কর্মচারীদের জন্য ৮২৫০ থেকে ১২৫০০ হাজার পর্যন্ত শুধুমাত্র মূল বেতনে ১১তম -২০তম গ্রেডে প্রতি ধাপে প্রায় গড়ে ৪.২৮ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি পেয়েছে। মূল বেতনে ৪.২৮% বেতন প্রতি প্রমোশন এ বৃদ্ধি পায়। গ্রেডে বেতন বৃদ্ধি ৪.২৮% এর অধিক হওয়ায় বার্ষিক ৫% ইনক্রিমেন্ট বা যে কোন প্রকার ফিক্সেশনের তাদের আর্থিক সুবিধা খুবই নগন্য ফলে তারা প্রমোশনে অনুপ্রাণিত হন না বরং বদলিজনিত বিড়ম্বনায় পড়ে।
লেখক : এম. শাহজাহান, সাংবাদিক