জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে কোন স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের কমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে অবাদে চলছে প্রাইভেট বাণিজ্য। শিক্ষকের বাড়ি যেন বিদ্যালয়ে পরিনত হয়েছে। এতে অভিভাবকদের মধ্যে বিরাজ করছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
জাতীয় ক্রান্তিকালে সবসময় শিক্ষক সমাজ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে এসেছে। বর্তমান সময়ে ( কোভিট-১৯) করোনা আতঙ্কে সারা বিশ্বের মানুষ আতংকিত। ভয়াবহ সেই ভাইরাসের ছোবল থেকে দেশের শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার জন্য সরকার দীর্ঘ মেয়াদি ছুটির ঘোষনা করেছেন। শিক্ষার্থীদের শিক্ষার কথা বিবেচনা করে তাদের সক্রিয় রাখতে যথা সময়ে শিক্ষকদের বেতন ভাতা প্রদান, অনলাইন ক্লাসসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে যাচ্ছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত কতিপয় শিক্ষক নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধীর জন্য চালিয়ে যাচ্ছে এ আয়োজন। অভিভাবক যেন নিরুপায় ইচ্ছে থাকলেও স্বাস্থ্য বিধির আওতায় রাখতে পারছেনা তাদের সন্তানদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতি দিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অসংখ্য শিক্ষার্থী দলবেধে ছুটছেন পছন্দের শিক্ষকের বাড়িতে। উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের কতিপয় বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক নিজ বাড়িতে বিভিন্ন গ্রামের বিভিন্ন পরিবার থেকে আসা ২৫/৩০ জন শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে পর্যায়ক্রমে দিনব্যপি অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে প্রাইভেট বানিজ্য। প্রশাসনিক তৎপরতা না থাকায় ক্রমশ বেরেই চলেছে এর পরিধি। এতে করে একদিকে রয়েছে ব্যপকহারে স্বাস্থ্য ঝুঁকির আশঙ্কা যা সরকারের সকল প্রচেষ্টা বিফলে দিতে পারে। অপর দিকে শুবিধা বঞ্চিত অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষা বৈষম্যের কবলে পরছে।
আখলাস শিবপুর শ্যামপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সভাপতি মুনছুর রহমান বাবু যুগান্তরকে বলেন, অভিভাবকরা বলছেন স্কুল বন্ধ থাকার কারণে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে। প্রাইভেটের মাধ্যমে তাদের গাইড লাইনে রাখতে প্রাইভেট পড়াতে দিচ্ছে অভিভাবক’রা। তিনি আরো বলেন, অনলাইনে যে ক্লাস হচ্ছে তাতে গ্রামের প্রায় ৬৫ % শিক্ষার্থী তা থেকে বঞ্চিত। কারণ সব পরিবারে এনডুয়েড মোবাইল নেই। তবে সরকারের নির্দেশনার বাইরে কোন কিছু করা উচিত নয়।
হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মুহাম্মদ মাহবুববর রহমান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেছেন, স্কুল আর কোচিং এর মধ্যে ছাত্র অনুপাতের পার্থক্য নেই; স্বাস্থ্যবিধি না মেনে কোচিং চলছে পুরোদমে, নাকের ডগায়। পোস্টটিতে লাইক কমেন্টস করেছে প্রায় শতাধিক মানুষ। মোহাম্মদ মোস্তফা দেলোয়ার লিখেছেন, শুধু কোচিং নয়, সবকিছু খোলা, হাট বাজার, খেলার মাঠ, গার্মেন্টস, মাদ্রাসা, হোটেল, বিনোদন কেন্দ্র, স্কুলটাই বন্ধ। শহিদুল ইসলাম বলেন, কোচিং চলছে অথচ বিদ্যালয় বন্ধ, কি সেলুকাস। ফেরদাউস বলেছে, ঊসকানি গুলো না দিলে হয় না। আরো অনেক কথা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অভিভাবক বলেন, হামার নাম তোমরা পেপারত দেওনা, মাষ্টার শুনলে হামার বেটাক পরাইভেট পড়াবে না। বেটা কেলাস নাইনে পড়ে বাড়িত একেবারে লেখাপড়া করোছেনা। তাই কেবল এক মাষ্টারের কাছে অংক, ইংরাজি, বিজ্ঞান এই তিনটা পরাইভেট ঠিক করে আনু পাঁচশ টেকা মাস।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ছফিউল্লাহ্ বলেন, প্রতিটি বিদ্যালয়ে নোটিশ দেওয়া হয়েছে সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে যদি কোন এমপিওভুক্ত শিক্ষক কোচিং সেন্টার চালায় এমন অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া সবকিছু খোলা তাই সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা যায়কি না সরকারের ভেবে দেখা উচিৎ।
ক্ষেতলাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস এম আবু সুফিয়ান বলেন, উপজেলার কোথাও প্রাইভেট বা কোচিং সেন্টার চালাচ্ছে এমন অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।