বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার আলীগ্রাম থেকে বালুকচড়ার দুই কিলোমিটার কাঁচা রাস্তাটি পুকুরের পাড় ভেঙ্গে বিলীণ হয়ে মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। এতে করে তিন গ্রামের গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষদের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তবে সম্প্রতি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে রাস্তাটি দ্রুত সংস্কার করা হবে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বুড়িগঞ্জ ইউনিয়নের সংসারদিঘী-বুড়িগঞ্জ সড়কটিতে স্বাধীনতার পর থেকে কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। উপজেলার আলীগ্রাম ও বালুকচড়া গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে বছরের পর বছর পুুকুরের পাড় না বাঁধার কারণে এলজিইডির রাস্তা ভেঙ্গে পুকুরের সাথে মিশে গিয়েছে। এতে করে তিন গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষের যাতায়াতের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
আলীগ্রামের বাসিন্দা শাহীন ও আবুল কালাম বলেন, আলীগ্রামে একটি আলিম মাদ্রাসা ও একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এখানকার শিক্ষার্থীরা রাস্তা খারাপের কারণে বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় আসা-যাওয়া করতে পারে না।
ওই গ্রামের আরেক বাসিন্দা রফিকুল বলেন, পুকুরের পাড় না বাঁধার কারণে ১০ ফিট রাস্তাটি দুই ফিটে পরিণত হয়েছে। রাস্তাটি ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে আলীগ্রাম, বিহার ও সংসারদীঘি গ্রামের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য নিয়ে খুব বিপাকে পড়েছেন। এই গ্রামগুলোর কৃষকদের বেচাকেনার পাঁচ কিলোমিটার ঘুরে বুড়িগঞ্জ হাটে যেতে হচ্ছে।
স্থানীয় কৃষকরা আক্ষেপ করে বলেন, আমারা ধান, আলু ও চাল বুড়িগঞ্জ হাটে নিয়ে যেতে প্রতি বস্তায় ভাড়া লাগতো পাঁচ টাকা কিন্তু বর্তমানে এক বস্তায় ৩০-৫০ টাকা ভাড়া দিতে হয়, এর ফলে আমরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থের শিকার হচ্ছি।
এলাকার কৃষক সেলিম, একরাম হোসেন, তোতা মিয়া, জাহিদুল ইসলাম ও সাইফুল ইসলামসহ আরও বেশ কয়েকজন ব্যক্তি শংঙ্কা প্রকাশ করে জানান, রাস্তা ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে মাঝে মধ্যেই ঐ স্থানে দূর্ঘটনা ঘটে। এজন্য গ্রামবাসী রাস্তা রক্ষার জন্য বাঁশ খুঁটি সংগ্রহ করে নিয়ে সংস্কার করতে চাইলেও পুকুর মালিক দেননি।
গ্রামবাসীরা জানান, বেশ কিছু দিন আগে আলীগ্রামের সাখাওয়াতের ছেলে রব্বানী (২), আজিমুলের ছেলে সজিব (১০), তাজুল ইসলামের মেয়ে তামিম (৫), সালেহা (৬৫) এই পথে চলাচল করতে গিয়ে আহত হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, আলীগ্রাম-বালুকচড়া ঐ রাস্তায় একাধিক পুকুর থাকায় রাস্তাটি মাঝে মধ্যেই ভাঙ্গনের শিকার হয়। স্থানীয় পুকুর মালিকরা ভাঙ্গা রাস্তাটি সংস্কার করলেও বালুকচড়া গ্রামের এলজিইডি’র রাস্তাটি এলাকার কথিত প্রভাবশালী আবদুল মতিন ও তার চাচাতো ভাই ফজলু মিয়া কোন কিছুর তোয়াক্কা না করেই পুকুর পাড় বছরের পর বছর সংস্কার করেনি। এর ফলে ঐ স্থানে এমন ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে। এ দূর্ভোগের কারণে আলীগ্রাম, সংসারদীঘি ও বালুকচড়া গ্রামের শতশত নারী-পুরুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
এ ব্যাপারে বুড়িগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল গফুর মন্ডল বলেন, ইতঃপূর্বে এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে ততোধিকবার অবহিত করেছি কিন্তু কোন সুফল পাইনি, পাশাপাশি পুকুর মালিকের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবো তারা কেন এমন কাজ করেছে।
এ ব্যাপারে পুকুর মালিক আবদুল মতিন বলেন, পুকুরটি বর্তমানে সন পত্তনি দেওয়া হয়েছে, পানি শুকালে রাস্তা মেরামতের চেষ্টা করবো।
উপজেলা প্রকৌশলী সিহাদুল ইসলাম বলেন, এলজিইডির এই সড়কটির পার্শ্বে গভীর করে পুকুর খনন করার অভিযোগ পেয়েছি, তবে সরেজমিনে দেখে রাস্তা সংস্কারের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ রিজু বলেন, বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। এমপি মহোদয়ের সাথে কথা বলে ওই দুই কিলোমিটার রাস্তা মেরামতের দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হবে।